সবশেষ মৌসুমটা লিওনেল মেসি পারলে ভুলেই যেতে চাইবেন। গোল পাননি, অ্যাসিস্টের খাতা দাগ কেটেছেন বটে, তবে নিজের মানদণ্ডে সেটা খুবই বেমানান। এমনই সময়ে মেসির আর্জেন্টিনা আন্তঃমহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে মুখোমুখি হচ্ছে ইতালির। যে ভেন্যুতে মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল, সেই ওয়েম্বলি আবার মেসিরও খুব ‘প্রিয়’।

আর্জেন্টিনা আর ইতালির এই লড়াইয়ে ছোট ছোট অনেক লড়াই আছে। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপের আগে ইউরোপীয় প্রতিপক্ষের সামনে নিজেদের বাজিয়ে দেখার লড়াই, ইতালির বিশ্বকাপ ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে ‘প্রত্যাবর্তনের’ লড়াই; জর্জিও কিয়েল্লিনির বিদায়টা রাঙানোর লড়াই। মেসির লড়াইটা চিরচেনা ছন্দে ফেরার। শেষ এক মৌসুমে নতুন দল পিএসজি হোক বা আর্জেন্টিনা, আর্জেন্টাইন মহাতারকা ছিলেন না স্বরূপে। আজ ওয়েম্বলিতে শিরোপা জেতার পাশাপাশি সেই লড়াইয়েও নামবেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। সেজন্যে বুঝি ওয়েম্বলির চেয়ে ভালো মাঠ আর হতেই পারত না!

গেল আগস্টে লা লিগার বেধে দেওয়া নিয়মের বেড়াজালে আটকে মেসি নতুন চুক্তিতে সই করতে পারেননি বার্সেলোনার সঙ্গে। চোখের জলে বার্সাকে বিদায় বলে তিনি যোগ দেন পিএসজিতে। নতুন ক্লাবে এসে তিনি নিজ নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। ৩৪ ম্যাচে করেছেন ১১ গোল, সঙ্গে করিয়েছেন ১৪ গোল। সব মিলিয়ে ২৫ গোলে অবদান যে কোনো ফুটবলারের জন্য দারুণ কিছু, তবে মেসির মানদণ্ডে যে তা বড্ড সাদামাটা!

এদিকে শেষ এক বছরে আর্জেন্টিনা দলেও মেসির পারফর্ম্যান্সে পড়েছে ভাটা। ৯ ম্যাচে করেছেন ৫ গোল, যার তিনটিই আবার একই ম্যাচে। যার মানে দাঁড়াচ্ছে মেসি গোল পাননি অন্তত ছয় ম্যাচে। এই সময় মেসি করাতে পারেননি একটি গোলও। 

শেষ এক বছরে যে তার সময়টা কঠিন কেটেছে, সেটা অকপটেই তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন দিনদুয়েক আগে টিওয়াইসি স্পোর্টসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে। তিনি বলেন, ‘গত গ্রীষ্মটা ভিন্নতর ছিল। তখন আমার সুখটা পরিপূর্ণ ছিল, আমার মনে হচ্ছিল আমি সবকিছু পেয়ে গেছি, এরপর আগের মতোই সবকিছু চলবে, যেমনটা আগের বছর বার্সেলোনায় হয়েছে। এরপর সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেল, আর এটা আমার জন্য কঠিন ছিল। পরিবর্তনটা কঠিন ছিল।সত্যি বলতে বছরটা কঠিন ছিল, কারণ সেখানে মানিয়ে নেওয়াটা সহজ ছিল না।’

এরপর একবার করোনাভাইরাসেও আক্রান্ত হয়েছিলেন মেসি যে কারণে তিনি খেলতে পারেননি আর্জেন্টিনার দুই ম্যাচে। সেটা তার পারফর্ম্যান্সেও প্রভাব ফেলেছিল। সব মিলিয়ে কোপা জয়ের পরের বছরটা মোটেও মনমতো হয়নি মেসির।

আর্জেন্টাইন অধিনায়ক জানালেন, সেই দুঃসময় কাটিয়ে শিগগিরই ফিরতে চান নিজের চেনা রূপে। আজ ইতালির বিপক্ষে ফিনালিসিমা দিয়েই শুরু হচ্ছে সেই লড়াই। এই লড়াইয়ে মেসিকে বাড়তি অনুপ্রেরণা দিতে পারে ম্যাচে ভেন্যু ওয়েম্বলি।

এখন পর্যন্ত মেসি ওয়েম্বলিতে খেলেছেন দুটো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ। দুটোই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে, দুবারই তিনি মুখোমুখি হয়েছিলেন ইংলিশ দুই প্রতিপক্ষের। প্রথমবার নেমেছিলেন ২০১১ সালে। সেবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে মেসি করেছিলেন এক গোল, গড়ে দিয়েছিলেন আরও এক গোলের সুযোগ। বার্সেলোনা জিতেছিল ৩-১ গোলে, মেসি নিজেও বনেছিলেন ম্যাচসেরা।

সবশেষ স্মৃতিটা তার প্রায় তিন বছর আগের। ২০১৮-১৯ মৌসুমে টটেনহ্যাম হটস্পার্স নিজেদের স্টেডিয়াম হোয়াইট হার্ট লেনের সংস্কার কাজ চলছিল বলে ওয়েম্বলিকে ব্যবহার করছিল ঘরের মাঠ হিসেবে। সেবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে মেসির বার্সার সামনে পড়েছিল দলটি। মেসি করেছিলেন দুটো গোল, বারপোস্টে শট লাগিয়েছেন দু’বার আর গোল গড়েও দিয়েছিলেন অন্তত একটি। তাতেই টটেনহ্যামকে ৪-২ গোলে হারায় তার দল, সেই ম্যাচেও সেরা খেলোয়াড় বনেছিলেন তিনিই। 
 
সেই স্মৃতিবিজরিত ওয়েম্বলিতেই আজ মেসি নামছেন আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে চড়িয়ে। আগের সব স্মৃতির পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারলে আরও একটা শিরোপা যাবে আর্জেন্টিনার ট্রফি কেসে। কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি যে সেটাই চাইবেন, তা বলাই বাহুল্য।
 
এনইউ/এটি