দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই খেলা ফুটবল ও ক্রিকেট। গত পাঁচ দশকে এই দুই খেলায় রকিবুল হাসান ও ইলিয়াস হোসেন ছাড়া গোপালগঞ্জে উল্লেখ করার মতো অন্য কোনো নাম নেই। দক্ষিণ বাংলায় অন্য জেলাগুলোর চেয়ে জাতীয় পর্যায়ে খেলাধুলায় কিছুটা পিছিয়ে গোপালগঞ্জ। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দুই জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদই স্বপ্ন দেখছেন নিজ জেলার ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে।

পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ক্রিকেট ও দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে জড়িত রকিবুল হাসান। জাতীয় পর্যায়ে নিজ জেলার এত কম প্রতিনিধিত্ব বেশ পোড়ায় এই সাবেক অধিনায়ককে, ‘ক্রিকেটে আমি ও ফুটবলে ইলিয়াস এর বাইরে আসলে বলার মতো কোনো নাম নেই গোপালগঞ্জে। এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা অন্যতম কারণ। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে গোপালগঞ্জে ক্রীড়াঙ্গনে নতুন হাওয়া লাগবে এর মাধ্যমে অবশ্যই ভালো ক্রীড়াবিদ উঠে আসবে।’ 

সত্তর-আশির দশকে বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল ফুটবল। সেই সময় একমাত্র ইলিয়াস হোসেনই এসেছিলেন গোপালগঞ্জ থেকে। দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান ও জাতীয় দলে অধিনায়কত্ব করেছেন। এই সেতুর মাধ্যমে পরবর্তী ইলিয়াস মিলবেই এমন বিশ্বাস ১৯৮৯ সাফ গেমসের অধিনায়কের, ‘আমাদের জেলায় যোগাযোগ একটা বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক চেষ্টায় এই পদ্মা সেতু হয়েছে। এর সুফল অর্থনীতি, চিকিৎসার সহ সকল খাতের মতো ক্রীড়াখাতেও আসবে। এই গোপালগঞ্জ থেকে আগামীর ইলিয়াস আসবে শীঘ্রই। সাবেক ফুটবলার ও ফেডারেশনের একজন সদস্য হিসেবে নতুন ইলিয়াস তুলে আনার দায়িত্ব আমারও।’

ইলিয়াস ফুটবল ফেডারেশন ও গোপালগঞ্জের ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। রকিবুল হাসানের বাড়ি গোপালগঞ্জ হলেও তার ক্রীড়াবিদ হয়ে উঠা মূলত রাজধানী ঢাকা থেকেই। এমন অসাধারণ স্থাপনার পর নিজ জেলায় সম্পৃক্ত হওয়ার ইচ্ছে রকিবুল হাসানেরও, ‘গোপালগঞ্জ থেকে ফুটবল, ক্রিকেট এবং অন্যান্য খেলায় জাতীয় খেলোয়াড় তুলে আনতেই হবে। এজন্য আমার কাছে গোপালগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থা বা গোপালগঞ্জের যে কেউ পরামর্শ বা সহযোগিতা চাইলে করতে সদা প্রস্তুত রয়েছি’। 

পদ্মা সেতু শুধু গোপালগঞ্জ নয় বিশটির বেশি জেলার ক্রীড়ায় প্রভাব ফেলবে বলে মতামত এই দুই কৃতি ক্রীড়াবিদের, ‘পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দক্ষিণ বাংলার ২১ টি জেলা নানাভাবে উপকৃত হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে আন্তঃজেলা ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলো আরো মানসম্পন্ন হবে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে ফলে এই অঞ্চলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনও বাড়বে।’

গোপালগঞ্জের এই দুই কৃতি ক্রীড়াবিদের আর তর সইছে না উদ্বোধনের জন্য। ইলিয়াস হোসেন ইতোমধ্যে গোপালগঞ্জে পৌঁছে গেছেন। আগামীকালের গোপালগঞ্জ প্রান্তের জনসভায় উপস্থিত থাকবেন। উদ্বোধনের পরের দিন সেতুর উপর দিয়ে ঢাকায় ফেরার ক্ষণ গুনছেন। রকিবুল হাসান ঢাকাতেই রয়েছেন। আগামীকাল ভোরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা রয়েছে তার। 

কালকের অনুষ্টানে উপস্থিত থাকতে তর সইছে না বাগেরহাটের সাবেক ফুটবলার ও বাফুফে সদস্য জাকির হোসেন চৌধুরীরও,‌ ‘এই পদ্মা সেতু আমাদের দক্ষিণ বঙ্গের মানুষের জন্য যে কত বড় আশীর্বাদ তা বলে বোঝানো যাবে না। এই সেতুর মাধ্যমে বাগেরহাটের জনগণের চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষা সহ সকল ক্ষেত্রে সুবিধা হবে। এই সেতুর কারণে অনেক খেলার ভেন্যু সংকটও দূর হবে। খুবই অধীর আগ্রহে রয়েছি কখন ভোর হবে, কখন রওনা হব।’ 

পুরো দেশ এখন পদ্মা সেতু নিয়ে গর্ব করছে। ক্রীড়াঙ্গনও কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। দেশের দুই শীর্ষ ক্রীড়া সংস্থা ফুটবল ফেডারেশন ও ক্রিকেট বোর্ড নিজ নিজ কার্যালয়ে আগামীকাল উদ্বোধন উপলক্ষ্যে কর্মসূচি রেখেছে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান স্থলেও থাকবেন ক্রীড়াঙ্গনের অনেকে।

এজেড/এইচএমএ