ক্লাব ফুটবল হোক কিংবা আন্তর্জাতিক ফুটবল, যে কোনো সময়ের চেয়ে খেলাটা এখন একটু বেশিই প্রতিযোগিতাপূর্ণ। বছর চারেক আগে যেখানে আন্তর্জাতিক ফুটবলের উইন্ডোতে দুয়েকটা প্রীতি ম্যাচ খেলার সুযোগ ছিল, সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে উয়েফা নেশন্স লিগ আসাতে। ইউরোপীয় শীর্ষ ক্লাবগুলোর কোচ, বিশেষ করে পেপ গার্দিওলা ও ইয়ুর্গেন ক্লপরা এ নিয়ে বরাবরই অভিযোগ করে আসছেন। এবার উয়েফা সভাপতি আলেক্সান্দার সেফেরিন তাদের একহাত নিলেন। জানালেন, তারা কারখানার শ্রমিক নন যে বারবার অভিযোগ করেই যাবেন।

উয়েফা কেবল নেশন্স লিগ এনেই ক্ষান্ত হয়নি, আগামী ২০২৪ সাল থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চেহারাও যাচ্ছে বদলে। দলের সংখ্যা ৩২ থেকে ৩৬ হবে, গ্রুপ পর্বের খেলার সংখ্যা ৬ থেকে উন্নীত হবে ৮-এ । ক্লপ গার্দিওলারা কথা বলেছিলেন এ নিয়েও।

সম্প্রতি গ্যাজেত্তা দেল্লো স্পোর্তকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তাদের কথারই পরোক্ষ জবাব দিলেন আলেক্সান্দার সেফেরিন। বললেন, ‘ফিফা আর উয়েফাকে আক্রমণ করাটা সবসময়ই সহজ। কিন্তু বিষয়টা খুব সহজ, আপনি যত কম ম্যাচ খেলবেন, আপনি তত কম টাকা পাবেন।’ 

অভিযোগের কথা আসতেই তিনি বললেন, ইউরোপের কারখানা শ্রমিকদেরই শুধুমাত্র নিজেদের বেতন নিয়ে অভিযোগের সুযোগ আছে। তিনি বলেন, ‘অভিযোগ করলে শুধু কারখানার শ্রমিকদের করা উচিত, যাদের বেতন মাত্র ১০০০ ইউরো।’

সেফেরিনের দাবি, বেশি বেশি ম্যাচ সবাই চান, কেউই কোনো প্রতিযোগিতায় ছাড় দিতে আগ্রহী নয়। তার কথা, ‘সবারই বেশির ম্যাচ খেলার ইচ্ছা আছে, কিন্তু কেউই কোনো কিছু ছাড় দিতে চায় না। ক্লাবগুলো ১০টা করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ গ্রুপ পর্বের ম্যাচ চায়, ৮টা পেয়েছে তারা। এটাই সঠিক সংখ্যা।’

তার মতে, ঘরোয়া লিগগুলোর ম্যাচ সংখ্যা কমানো উচিত, ঘরোয়া কাপ প্রতিযোগিতাতেও আনা উচিত পরিবর্তন। ইংলিশ ফুটবলে যেমন এফএ কাপ আর কারাবাও কাপ খেলা হয় প্রতি মৌসুমে, এখানে পরিবর্তন চান তিনি। সেফেরিন বলেন, ‘ঘরোয়া লিগ গুলোতে ১৮ দল থাকা উচিত। কিন্তু সভাপতিরা রাজি হন না। তাদের বুঝা উচিত যে দুটো ঘরোয়া কাপ প্রতিযোগিতা বেশি হয়ে যায়।’

গেল মে মাসে ক্লপ উয়েফার একহাত নিয়ে বলেছিলেন, ‘যে কারণে আমি উয়েফাকে নিয়ে কথা বলার সময় ভালো লাগে না সেটা হলো উয়েফা নেশন্স লিগ। আমার মনে হয় এটা ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে হাস্যকর ধারণাগুলোর একটি, কারণ আমরা একটা মৌসুম শেষ করছি, যাদের ৭০ এর মতো ম্যাচ খেলা হয়েছে।’ সেই খেলোয়াড়রাই চলতি মাসের শুরুতে খেলেছেন নেশন্স লিগের ম্যাচ।

গত বছর ডিসেম্বরে গার্দিওলা মুখ খুলেছিলেন ঠাসবুনটের সূচি নিয়ে। তিনি বলেন, ‘সূচি নিয়ে সমস্যাটা হচ্ছে, আমাদের ক্যালেন্ডারে ৩৬৫ দিন আছে, যেখানে জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলের দায়িত্ব আছে, বড় প্রতিযোগিতা আছে যেখানে অনেক ম্যাচ খেলা হয়।’

‘খেলোয়াড়রা দুই-তিন সপ্তাহের জন্য ছুটি পায় গ্রীষ্মে। এরপর আবারও একটা মৌসুম শুরু, এটা অনেক বেশি।’

গ্যাজেত্তাকে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে সেফেরিন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পরিবর্তিত ফরম্যাট নিয়েও কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আজ আপনি গ্রুপ পর্বের ড্রয়ের পরই বলে দিতে পারেন কে যাবে শেষ ষোলোয়। ভবিষ্যতে বড় ক্লাবগুলো আরও বেশি একে অপরের বিপক্ষে খেলবে, ছোট ক্লাবগুলো আরও বেশি এখানে আসার সুযোগ পাবে আর গ্রুপ পর্বের লড়াই শেষ পর্যন্ত চলবে। এটা অসাধারণ হবে।’

এনইউ