নিজের ক্লাব মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন ইতোমধ্যে দেখিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার জাপানি ফুটবলার ইউসুকে কাতো। ক্লাবের গণ্ডি পেরিয়ে কাতো বাংলাদেশকে ভালোবাসার আরও নিদর্শন দেখিয়ে যাচ্ছেন। 

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও স্মরণার্থে করা একটি ফুটবল দল। এবারের মৌসুমে কাতো মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অধিনায়কত্ব করছেন। আজ (রোববার) সকালে তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র ফুটবল দল শহীদ মিনারে ফুল দিয়েছে।

 ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত এই জাপানি ফুটবলার, ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দলে খেলায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম সম্পর্কে অনেক আগেই জেনেছি। ভাষার প্রতিও আত্মত্যাগের বিষয়টি আমার হৃদয়ে স্পর্শ করেছে। খুব ভালো লাগলো এমন একটি কাজে আমার নেতৃত্বে অন্য ফুটবলাররা অংশগ্রহণ করল।’

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন সালাম, বরকত , রফিক, জব্বার সহ আরও অনেকে। ভাষার জন্য প্রাণ দেয়ার ঘটনা বিশ্বে বিরল। ২০০০ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।  

জাপান বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধু। ভাষা শহীদদের স্মরণে বাংলাদেশের বাইরে জাপানেই প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয়। জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে ২১ ফেব্রুয়ারি উদযাপনে পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন কাতো, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হলেও জাপানে আমরা জাপানিজরা ২১ ফেব্রুয়ারি সেভাবে উদযাপন করি না। জাপানে বাংলা ভাষার জন্য শহীদ মিনারের বিষয়টি অবশ্য অনেক জাপানিজ জানে। বাংলাদেশে থাকায় বিষয়টি আমি আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি অনুধাবন করছি।’ 

বাংলাদেশকে ভালোবেসে ইতোমধ্যে কিছুটা বাংলা ভাষাও রপ্ত করেছেন কাতো, ‘বাংলাদেশের মানুষ ও দেশের মতো বাংলা ভাষাটাও ভালো। আমি বাংলা কিছু কিছু বলতে ও বুঝতে পারি। সামনে আরো ভালো বলতে পারব।’ 

বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার প্রতি অন্য বিদেশিদের চেয়ে কাতোর অনুভূতি ভিন্ন সেটা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বললেন মুক্তিযোদ্ধার ম্যানেজার আরিফুল ইসলাম, ‘আমাদের মুক্তিযোদ্ধা ক্লাবে অনেক বিদেশি ফুটবলার এসেছে ও গিয়েছে। এর মধ্যে কাতো একেবারেই ব্যতিক্রম। বাংলাদেশের প্রতি তার টান ও ভালোবাসা সবার চেয়ে আলাদা। কাতো না থাকলে আমাদের এই মৌসুমে লিগে খেলাই হতো না।’
 
কাতো ফুটবলের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে ভাবছেন। ১২ ফেব্রুয়ারি টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ স্টেডিয়ামে উত্তর বারিধারার সঙ্গে অ্যাওয়ে ম্যাচ ছিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদের। টঙ্গীতেই আরচ্যার রোমান সানা ক্যাম্প করেন। ম্যাচ শেষে রোমান সানার সঙ্গে দেখা করেছেন কাতো। 

রোমানকে বাড়তি উৎসাহ দিয়েছেন এই জাপানি ফুটবলার, ‘আমি চাই বাংলাদেশ ক্রীড়াক্ষেত্রে উন্নতি করুক। রোমান বাংলাদেশের অন্যতম একজন ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব। জাপানে অলিম্পিক খেলার কথা রয়েছে তার। জাপানে কোনো প্রয়োজন হলে বা এখানে আরচ্যারিতে কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে জানাতে বলেছি। আমি আমার সাধ্যমতো তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব।’ 

কাতোর এই আন্তরিকতায় রোমান সানা খুবই মুগ্ধ, ‘ম্যাচটি মুক্তিযোদ্ধা ১-১ গোলে ড্র করেছিল। সে (কাতো) নিজেও গোল করেছিলেন। ম্যাচ শেষে সে আমার সাথে বিশেষভাবে সময় দিয়েছে। নানা বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন। একজন বিদেশি ফুটবলার অন্য ডিসিপ্লিনের একজন ক্রীড়াবিদকে নিয়ে এতটা ভাববেন সেটা আমি কখনোই ভাবতে পারিনি। সে আমাদের সবাইকে মুগ্ধ করেই চলছে।’

উল্লেখ্য, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র আর্থিক সমস্যায় চলমান মৌসুমে ফেডারেশন কাপ ও লিগে খেলা অনিশ্চিত ছিল। ক্লাবের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাতো পোস্ট করেন। তার সেই পোস্ট দেখেই ফেডারেশন কাপে স্পন্সর আসে পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক কোম্পানি ‘হিসাব’ লিগে মুক্তিযোদ্ধা দলের টাইটেল স্পন্সর হয়েছে। 

এজেড/এমএইচ/এটি