কাতার বিশ্বকাপের শিরোপা প্রত্যাশী কিংবা শিরোপা পাওয়ার দৌড়ে বেশ কয়েকটি দলের নাম বেশ আলোচনায় রয়েছে। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ফ্রান্স, স্পেন, বেলজিয়াম, পর্তুগাল, নেদারল্যান্ড, জার্মানি ও ইংল্যান্ডের নামগুলোই ঘুরে ফিরে আলোচনায় আসছে। প্রায় সব দলই দারুণ সব খেলোয়াড় নিয়ে দল গঠন করেছে। তারপরেও তাদের রয়েছে বেশ কিছু দুর্বল দিক। যেগুলোর মাশুল দিতে হতে পারে এ বিশ্বকাপে। প্রতিটি জায়গায় ঠিকঠাক সমন্বয় না থাকলে যে বিপদের সম্ভাবনা থেকেই যায়!

শিরোপা প্রত্যাশী দলগুলোর দুর্বলতা কী, তা দেখে নেওয়া যাক... 

ব্রাজিল:  
বিশ্বকাপে সব সময় ফেবারিটের তকমাটি ব্রাজিলের ওপরই থাকে, রেকর্ড ৫ বারের চ্যাম্পিয়ন বলে কথা। তবে শেষ ২০ বছর ধরে অবশ্য বিশ্বকাপ শিরোপা ছুঁতে পারেনি দলটি। বিশ্বের সেরা আক্রমণভাগ, নির্ভরযোগ্য মিডফিল্ড ব্রাজিলের অন্যতম রক্ষাকবচ হলেও দুর্বলতা কিছুটা হলেও রয়েছে রক্ষণভাগে। এটাই এ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের কিছুটা দুর্বল দিক। রক্ষণভাগে থিয়াগো সিলভা (৩৮) ও দানি আলভেজের (৩৯) বয়স অনেকটাই বেশি।

গত দুই বিশ্বকাপেও ফুলব্যাকের ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে ব্রাজিলকে। গতি সম্পন্ন স্ট্রাইকারদের সাথে  সিলভা ও আলভেস কতটুকু পেরে উঠবেন তাতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যদিও তারা অভিজ্ঞ, কিন্তু ফিটনেসের বিষয়টি যখন আসে তখন কথা থাকে। এছাড়া রক্ষণের দানিলো, ব্রেমার ও সান্দ্রো চলতি মৌসুমে ক্লাবের হয়ে তেমন ভাল করতে পারেনি। বয়স্ক ও অনভিজ্ঞ রক্ষণভাগ ভোগাতে পারে সেলেসাওদের। 

আর্জেন্টিনা:
বিশ্বকাপে সব সময় সেরা আক্রমণভাগ নিয়েই আজেন্টিনা আসে। কিন্তু গোলরক্ষক আর রক্ষণভাগ সব সময়ই ভোগান্তিতে ফেলে এ দলটিকে। ২০১৮ সালে গোলরক্ষক ও রক্ষণভাগের ভুলে দ্বিতীয় রাউন্ডে বিশ্বকাপ থেকে হেরে বিদায় নিয়েছিল আর্জেন্টিনা। এবার গোলরক্ষক আর রক্ষণভাগ নিয়ে সমস্যা না থাকলেও ইনজুরি এ দলটির প্রধান সমস্যা কিংবা দুর্বল দিক বলা যায়। ইনজুরি রক্ষণভাগে বিপদ ডেকে আনতে পারে। মার্কোস আকুনইয়া, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো, হুয়ান ফয়েথ এখনো পুরোপুরি ফিট নয়। রক্ষণে ইনজুরি থাবা দলটির প্রধান দুর্বল দিক।

এছাড়া মিডফিল্ডেও ইনজুরির থাবা পড়েছে। ইনজুরিতে পড়ে লো চেলসোর বিশ্বকাপ শেষ। এনজো ফার্নান্দেজকে দিয়ে লো সেলসোর কাজটি করে নিতে চাইবেন কোচ স্কালোনি। এনজো অনেক প্রতিভাবান হলেও এখনো অনভিজ্ঞ। তাই এনজো কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাই মিডফিল্ডেও একটা সমস্যা রয়েই গেল দলটির। আক্রমণভাগে পাওলো দিবালা ও ডি মারিয়া ফিরেছেন ইনজুরি থেকে। তারা আবার ইনজুরিতে পড়ার সম্ভাবনাটাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ তাদের জীবনে ইনজুরি যে নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়! 

নেদারল্যান্ড:
ফুটবল বিশ্বে টোটাল ফুটবলের প্রবর্তক এই দলটি চাপের মুখে ভেঙে পড়ার জন্য বেশ পরিচিত। প্রায়ই আসরে বেশ শক্তিশালী দল নিয়ে আসলেও বিশ্বকাপটি এখনো ছুঁয়ে দেখা হয়নি। তিনবার ফাইনাল ও দুইবার সেমিফাইনাল খেলা এই দলটি হতাশা নিয়েই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় হয় সব সময়। এবারের আসরের দলটি তারুণ্য নির্ভর।

তবে আক্রমণভাগে তরুণ ফরোয়ার্ডদের দক্ষতা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ফিনিশিংয়ের অভাব রয়েছে আক্রমণ ভাগে। মেম্ফিস ডিপাইয়ের ওপর নির্ভর করবে সবকিছু। যদিও তিনি তেমন ফর্মে নেই । মোটকথা আক্রমণভাগই সবচেয়ে দুর্বলতার জায়গা নেদারল্যান্ডের। 

ইংল্যান্ড:
এই দলের সবাই তারকা। খেলেন বড় বড় ক্লাবে। প্রতি আসরেই তারকায় ঠাসা থাকে দলটিতে। একবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দলটি। আক্রমণভাগ ও মিডফিল্ডে দারুণ সমন্বয় থাকলেও রক্ষণে রয়েছে দুর্বলতা। দলের অন্যতম রক্ষণভাগের খেলোয়াড় হ্যারি ম্যাগুয়ের অনেক দিন ধরেি ফর্মহীনতায় ভুগছেন। মার্ক গেইয়িরা, বেন হোয়াইটদের মত তরুন ডিফেন্ডাররাও আশানুরুপ পারফরম করতে পারছেন না। ফলে রক্ষণের দুর্বলতার কারণে এবারও বিশ্বকাপের স্বপ্ন মাঝপথে আটকে যেতে পারে ইংলিশদের। 

ফ্রান্স:
তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের মিশনে ইনজুরিই এই দলের প্রধান দুর্বলতা। এনগো লো কন্তেকে হারিয়ে মিডফিল্ডে কিছুটা শূণ্যতা সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া রক্ষণভাগেও ইনজুরির থাবায় আক্রান্ত। রক্ষণভাগের অন্যতম সেনানী ভারানও ইনজুরি থেকে উঠে এসেছেন। বিশ্বের সেরা আক্রমণভাগ নিয়ে বিশ্বকাপে আসলেও রক্ষণেই পরীক্ষা দিতে হবে ফ্রান্সকে। 

স্পেন:
রক্ষণভাগ ও আক্রমণভাগেই স্পেনের কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। দানি কারভাহাল, জর্দি আলবা, আজপিলিকুয়েতার মত রক্ষণভাগের খেলোয়াড় থাকলেও স্পেনের রক্ষণভাগ এখনো জমাট নয়। আনসু ফাতির মত তরুণ প্রতিভাবান ও মোরাতার মত খেলোয়াড় থাকলেও আক্রমণভাগ এখনো নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠতে পারেনি কোচ লুইস এনরিকের। 

জার্মানি:
৫ম বিশ্বকাপ জয়ের মিশন নিয়ে এবার জার্মানি কাতারে এসেছে। এই দলে তেমন দুর্বলতা দেখা না গেলেও ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে। তরুণ ও প্রবীণ খেলোয়াড়দের মধ্যে কিছুটা সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। এই দলের আক্রমণভাগ ও রক্ষণভাগ বেশ ভয়ংকর। মিডফিল্ডে কিছুটা অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে । 

বেলজিয়াম:
মিডফিল্ড ও আক্রমণভাগে বেলজিয়ামের মূল মক্তি। তবে রক্ষণভাগে দুর্বলতা রয়েছে। অল্ডারভাইরেল্ড ও ভের্তনের বয়স হয়েছে। আগের মত ধার নেই। গতিও কমেছে। তাই রক্ষণভাগ নিয়ে বিপদে পড়তে পারে বেলজিয়াম। যদিও গোলবারে ভরসার জায়গা থিবো কোর্তোয়া রয়েছে। 

পর্তুগাল:
দুর্বলতার জায়গা রক্ষণভাগ। বয়স্ক সেন্টার ব্যাক পেপের উপর নির্ভরতা ডোবাতে পারে পর্তুগালকে। যদিও রুবেন ডিয়াজ, ক্যানসেলো, নুনো মেন্দেজ ও দানিলো পেরেইরার মত রক্ষণভাগের খেলোয়াড় রয়েছে। তারপরও রক্ষণভাগই হতে পারে পর্তুগালের জন্য হতাশার বিষয়।