৮৮, ৮৪ বয়স নয় স্রেফ সংখ্যা
কী-বোর্ডে ঝড় তুলছেন। প্রেস সেন্টারের স্ক্রিনে দেখছেন দিনের সূচি। কী-বোর্ডের ঝড় থামিয়ে যোগ দিচ্ছেন প্রেস কনফারেন্সে। সেই কনফারেন্স শেষ করে কখনো স্টেডিয়ামের গাড়ি ধরছেন আবার কখনো ল্যাপটপে বসছেন। এত কর্মব্যস্ত ব্যক্তির বয়স কত ? মাত্র ৮৪ ! ভুল পড়েননি, সঠিকই পড়েছেন। জার্মান সাংবাদিক হার্টমুট ৮৪ বছর বয়সে তার ১৬ তম বিশ্বকাপ কাভার করছেন।
হার্টমুটের চেয়েও বয়স্ক সাংবাদিক রয়েছেন এই বিশ্বকাপে। তিনি আর্জেন্টিনার এনরিকে মাকায়া মারকেজ। ২০ নভেম্বর কাতার বিশ্বকাপ উদ্বোধনের দিন তার ৮৮ তম জন্মদিন পালিত হয়েছে। তিনিই জীবিত সাংবাদিকদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৭ বিশ্বকাপ কাভার করেছেন। এর স্বীকৃতি হিসেবে গতকাল আন্তর্জািতক ক্রীড়া সাংবাদিক সংস্থা কৃতি সাংবাদিকদের হাতে বিশেষ ক্রেস্ট তুলে দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
১৯৫৮ সালে সুইডেন বিশ্বকাপ দিয়ে এনরিকের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ব্রাজিলের প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন থেকে গত আসরের ফ্রান্সের শিরোপা উদযাপনের প্রতিটি ক্ষণেই তিনি ছিলেন উপস্থিত।
জার্মানির হার্টমুটের মধ্যে বয়সের ছাপ সেভাবে না পড়লেও এনরিকে বয়সের ভাড়ে কিছুটা আক্রান্ত। একটু ধীর গতিতে চললেও রেডিওর বক্সে সেই তারুণ্যের বজ্রকন্ঠ। বর্ণিল সাংবাদিক জীবনে কাজ করেছেন আর্জেন্টিনার বিভিন্ন মাধ্যমে। গত কয়েক দশক ধরে রেডিওতে কাজ করছেন। খেলা বর্ণনাও দিতে হয় তাকে। এষনকার ধারাভাষ্য অনেক তথ্য-পরিসংখ্যান নির্ভর এনরিকের কন্ঠেই সব ধরা পড়ে,‘ এটা আমার সহজাত বিষয়, বক্সে বসলেই সব কিছু আমার নিয়ন্ত্রণে আসে।’
বিজ্ঞাপন
এনরিকে দীর্ঘ সাংবাদিক জীবনে পেলে, ম্যারাডোনা, বেকেনবাওয়ার সহ অসংখ্য গ্রেটদের দেখেছেন। সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় নিয়ে যেমন তর্ক চলে তেমনি আলোচনা হয় কোন দলটি সর্বকালের সেরা। এই আলোচনায় এনরিকে এগিয়ে রাখছেন বিশ্বকাপের রানার্স আপ দলকে,‘ আমার কাছে ১৯৭৪ সালের নেদারল্যান্ডস বিশ্বকাপ দলটিই সেরা। ফুটবলে নতুন ধারা এনে অসাধারণ খেলেছিল। যদিও বিশ্বকাপ ট্রফি জিততে পারেনি। কিন্তু দলটি আমার কাছে সেরা’।
এনরিকে এখন ধারাভাষ্যে বেশি সময় দিলেও জার্মানির হার্টমুটের কলম এখনো সচল। ১৯৬২ বিশ্বকাপ থেকে লিখেই চলছেন হার্টমুট। ৮৪ বছর বয়স যেন তার কাছে স্রেফে সংখ্যা। খেলোয়াড়রা যেভাবে ফিট থাকেন সাংবাদিক হিসেবেও তিনি অনেকটা তাই-ই। জীবনের সায়াহ্নে এই স্বীকৃতি পাওয়ার পর তরুণদের জন্য তার পরামর্শ, ‘লাভ দ্য প্রফেশন, বি ক্রিটিক্যাল বাট ফেয়ার’।
বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি বার অংশ নেয়া দল ব্রাজিল। সর্বোচ্চ ট্রফিও তাদের। সর্বোচ্চ সংখ্যক বিশ^কাপ কাভার করা সাংবাদিকদের তালিকায় ব্রাজিল আর্জেন্টিনার চেয়ে পিছিয়ে। আর্জেন্টিনার এনরিকে বিশ্বকাপ কাভারের সংখ্যা যেখানে ১৭ সেখানে ব্রাজিলের পেদ্রো গ্রাভিদার সংখ্যা ১২।
পেদ্রোর বয়স ৭৭। তিনি ব্রাজিলের একটি রেডিওর হয়ে কাজ করেন। বয়সের ভাড়ে পেদ্রোর চামড়ায় ভাজ পড়লেও মনের শক্তিতে চলছেন দারুণ। ব্রাজিলের মিডিয়ার কাছে তিনি সাংবাদিকদের পেলে।
৮ এবং এর তদুর্ধ্ব বিশ্বকাপ যারা কাভার করেছেন এমন ৮২ জন সাংবাদিককে সম্মাননা দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সাংবাদিক সংস্থা এআাইপিএস। ২৫ দেশের সাংবাদিকের রয়েছে ৮টির বেশি বিশ্বকাপ কাভার করার অভিজ্ঞতা। এশিয়ার দেশের মধ্যে শুধু জাপান ও চীনের সাংবাদিক রয়েছেন এই তালিকায়।
এজেড