‘তোমাকে দেখেছি কবে, সেই কবে, কোন রোববার/আর এক কোটি বছর হয় তোমাকে দেখি না’– না, এমনটা কোনো আর্জেন্টাইন বলেননি কখনো। তবে আর্জেন্টিনার একটা বিশ্বকাপের অপেক্ষা যেভাবে বাড়ছিল, তাতে মাঝের সময়টা মহাদেব সাহার মতো আকাশি-সাদা ভক্তদেরও এক কোটি বছর ঠাহর হওয়াটা খুব সম্ভব ছিল। 

সে অপেক্ষার প্রহরটা শেষ হয়েছে অবশেষে। আর্জেন্টিনা আবারও পেয়ে গেছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নের তকমা। এমন দিনে সবশেষ বিশ্বজয়ের সারথী ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনাকে মনে পড়াটাও খুব সম্ভব। ম্যারাডোনা আর লিওনেল মেসির মাঝে বহু রথী-মহারথী এসেছেন, কিন্তু দেশটাকে বিশ্বজয়ের স্বাদ এনে দিতে পারেননি আর কেউই!

তবে লুসাইলের আইকনিক স্টেডিয়ামে যেভাবে লিওনেল মেসি উদযাপন করলেন তা যেন ফিরিয়ে আনল দুই বছর আগে ধরার মায়া ত্যাগ করা কিংবদন্তি ডিয়েগোকে। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে মেক্সিকো সিটির অ্যাজটেকা স্টেডিয়ামে ম্যারাডোনা বিশ্বজয় করেছিলেন। এরপরই চড়ে বসেছিলেন সতীর্থদের কাঁধে। প্রায় আশি হাজারের মতো দর্শক সেদিন দেখেছিলেন ম্যারাডোনার সোনার হাতে উঠেছে সোনালী ট্রফিটা। 

মেসিও আজ উদযাপনটা করলেন তেমন ভাবেই। ডিয়েগো ম্যারাডোনা এখন আর বেঁচে নেই, থাকলে হয়তো সবচেয়ে বেশি খুশিটা তিনিই হতেন। এক সময় কাড়ি কাড়ি ‘নতুন ম্যারাডোনা’দের ভীড়ে তিনিই যে বলেছিলেন, ‘নতুন ম্যারাডোনা মেসিই হবে’। সাত বারের ব্যালন ডি’অর বিজয়ী মেসি, নতুন ম্যারাডোনা হননি, মেসিই হয়েছেন; সেই মেসি যখন অবশেষে জিতেছেন বিশ্বকাপ শিরোপা, তখন তার চেয়ে বেশি খুশি কে হতেন বলুন?

ম্যারাডোনা নেই বটে, কিন্তু উদযাপনে ম্যারাডোনাকে ফিরিয়ে আনতে ক্ষতি কী? মেসির সতীর্থরা সেটাই করলেন। এককালের সতীর্থ, বন্ধু সার্জিও আগুয়েরো একাই মেসিকে কাঁধে তুলে নিলেন। আর্জেন্টাইন মহানায়কের হাতে তখন জ্বলজ্বল করছে বিশ্বকাপ নামের সোনার হরিণটা। সেই এক মুহূর্তই যেন লুসাইলের বুকে ফিরিয়ে আনল ম্যারাডোনাকে।