স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের মৃত্যুতে নাগরিক সমাজে শোকের ছায়া। রাষ্ট্রের যে কোনো ত্রুুটি-বিচ্যুতিতে তিনি ছিলেন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। গত এক দশকের বেশি সময় ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন না। এরপরও ক্রীড়া ক্ষেত্রের নানা অসঙ্গতি নিয়ে কথা বলতেন অকপটে। 

ক্রীড়াঙ্গনে স্থপতি মোবাশ্বেরের মূল ভিত ছিল ব্রাদার্স ইউনিয়ন। সেই ব্রাদার্রসের ব্যক্তিরা তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে। বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল মোবাশ্বেরকে স্মরণ করলেন এভাবে, ‘শুধু ক্রীড়াঙ্গন নন, তিনি দেশের অপরিসীম সম্পদ। জনস্বার্থে তিনি অনেক আইনি বিষয়ে লড়েছেন। ক্রীড়াঙ্গনে ক্রিকেট বোর্ড নিয়েও তিনি মামলার বাদী ছিলেন। সবাই যেখানে নানা কারণে নিশ্চুপ থাকে। তিনি সেখানে অকুতোভয় ছিলেন। আমরা জিজ্ঞেস করতাম, আপনার ভয় লাগে না? তার উত্তর ছিল সত্য বলতে ভয় পাই না।’

মুক্তিযুদ্ধ ও প্রগতিশীল সমমনা ক্রীড়া সংগঠকদের নিয়ে সংগঠন সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক স্থপতি মোবাশ্বের। সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবারের অন্যতম সদস্য দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি, ফজলুর রহমান বাবুল মোবাশ্বেরের অবদান সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের নিজস্ব অফিস ছিল না। তার অফিসই ছিল ক্রীড়া পরিবারের অফিস। নানা অনুষ্ঠানে তিনিই অর্থায়ন করতেন।’

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এখন অনেক ধনী। দুই যুগে এমন ছিল না। নব্বই দশকের শেষ সময় ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ছিলেন স্থপতি মোবাশ্বের। সেই সময় ক্রিকেটে তার একটি অবদান সম্পর্কে ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান পরিচালক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি বলেন, ‘এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে স্থাপনাগত কিছু সমস্যা ছিল। সেই সমস্যার সমাধান তিনি তার নিজস্ব আর্কিটেট কোম্পানি দিয়ে করিয়েছেন। এর সম্পূর্ণ অর্থায়ন তিনিই করেছেন। ক্রিকেট বোর্ডও করেনি।’

গোপীবাগস্থ ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের আয়ের অন্যতম উৎস ছিল মাঠে গরুর হাট ইজারা। খেলার মাঠে গরুর হাট হলে খেলোয়াড়দের অনুশীলনে ব্যঘাত ঘটত। ১৯৯৯ সালে ক্লাবের সভাপতি হয়ে তিনি গরুর হাট বন্ধ করেন। ব্রাদার্সের পরিচালক আমিন খান সেই সময় স্মরণ করলেন এভাবে, ‘গরুর হাট ব্রাদার্সের আয়ের উৎস ছিল। তিনি খোঁজ নিলেন কত টাকা পায় ব্রাদার্স। এর চেয়ে বেশি টাকা তিনি নিজ থেকে দিলেন। তিনি যতদিন ছিলেন ক্লাবের মাঠে গরুর হাট হয়নি।’ 

ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব প্রাঙ্গনে স্থপতি মোবাশ্বেরের দু’টি জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেই জানাজায় ক্রীড়াঙ্গনের বিভিন্ন ক্লাব ও ফেডারেশনের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। তার নিজের ক্লাব ব্রাদার্স ইউনিয়ন বিশেষভাবে শ্রদ্ধা জানিয়েছে তাদের সাবেক সভাপতিকে। এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, সম্মিলিত ক্রীড়া পরিবার সহ অনেক ক্রীড়া সংস্থা তার মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে। 

এজেড/এনইআর/এটি