ইউরোপ সেরা হতে কি না করেছে নাসের আল খেলাইফির পিএসজি। বস্তার পর বস্তা পেট্রোডলার খরচ করে বিশ্বসেরা তিন তারকা মেসি-এমবাপে-নেইমারকে দলে ভিড়িয়েছে। তাতে লাভটা কি হলো! একের পর এক লিগ শিরোপা জেতা গেলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে। ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে টানা ১১তমবার ব্যর্থ হলো প্যারিস জায়ান্টসরা। বিশ্বসেরা তারকাদের নিয়ে পিএসজির এই প্রজেক্টের ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে এতদিন গুঞ্জন থাকলেও এবার জোরেশোরেই প্রশ্ন উঠছে।

আর উঠবেই না কেন! ইনজুরির কারণে নেইমার দ্বিতীয় লেগ মিস করলেও কাতার বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত সেরার দুই পুরস্কার উঠেছে পিএসজির দুই খেলোয়াড়ের হাতে। ফাইনালে হ্যাটট্রিকসহ মোট ৮ গোল করে ও ২টি গোল বানিয়ে ‘গোল্ডেন বুট’ জিতেছেন এমবাপ্পে। মেসি ‘গোল্ডেন বল’ জিতেছেন নিজে ৭ গোল করে ও সতীর্থদের দিয়ে ২ গোল করিয়ে। অথচ বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে দুই লেগে মোট ১৮০ মিনিট পেয়েও তাদের কেউ গোলই পেলেন না! ভাবা যায়! এরপর শুধু এটাই বলা যায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে হয়তো ভাগ্য লাগে। না হলে এতো এতো টাকা ঢেলেও কোনো কুলকিনারা পাচ্ছে না ফরাসি ক্লাবটি।

ফ্রেঞ্চ ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ক্লাবের নাম প্যারিস সেন্ট জার্মেই। লিগ ওয়ানে প্যারিসের দলটির যে কতটা প্রভাব তার প্রমাণ পাওয়া যায় একটি পরিসংখ্যান থেকেই। গত ১০ বছরের লিগ ওয়ান টুর্নামেন্টের ৮টির শিরোপাই জিতেছে পিএসজি। শুধু তাই নয় ফ্রেঞ্চ কাপেও রেকর্ড সংখ্যক শিরোপার মালিক তারা। কিন্তু এই সময়ে সব মিলিয়ে পিএসজির চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা-একটিও না।

ইউরোপ সেরার শিরোপা জিততে অবশ্য চেষ্টার কমতি রাখেনি পিএসজি। গত কয়েক বছরে ক্লাবের চেহারাই পাল্টে ফেলেছে তারা। একের পর এক বিশ্বসেরা তারকা ভিড়িয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সবাইকে পেছনে ফেলেছে তারা। কোন তারকাটা নেই তাদের। সময়ের অন্যতম সেরা তিন ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসি, কিলিয়ান এমবাপে ও নেইমার তিনজনই খেলেন এই দলের হয়ে। আছেন স্প্যানিশ তারকা ডিফেন্ডার সার্জিও রামোস। মিডফিল্ড জমিয়ে রাখছেন প্রেসনেল কিম্পেম্বে আর আশরাফ হাকিমির মতো বিশ্বসেরা তারকারা। আর গোলমুখে দোন্নারুম্মার দেয়াল। এতোকিছুর পরেও কমতি যেন কোথাও থেকেই যাচ্ছে। একের পর এক চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।

নেইমার যোগ দেওয়ার পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সবচেয়ে কাছাকাছি যাওয়ার একটা সুযোগ তৈরি করেছিল পিএসজি। ২০১৯-২০ মৌসুমে এই লিগের ইতিহাসে নিজেদের সর্বোচ্চ সাফল্যের মুখ দেখে প্যারিসের ক্লাব। তবে ফাইনালে বায়ার্নের কাছে ১-০ গোলে হেরে হৃদয় ভাঙে লা প্যারিসিয়ানদের। 

পরের মৌসুমে আবারও শিরোপার কাছাকাছি গিয়ে বঞ্চিত পিএসজি। নিজেরাও শিরোপা জিতল না, আবার এমবাপে-নেইমারদেরও শিরোপার মঞ্চে উঠতে দিল না ম্যানচেস্টার সিটি। এরপর গত মৌসুমে দুই গোলের লিড নিয়েও রিয়াল মাদ্রিদের কাছে বাজেভাবে ধরাশায়ী হয়েছেন মেসি-এমবাপেরা। দুঃস্বপ্নের রাত কাটিয়েছেন দলের সবাই। 

এবার প্রত্যাশাটা একটু বেশিই ছিল। বিশ্বকাপ জিতে আসা মেসি এবার গতবারের চেয়ে ছিলেন বেশ ভালো ফর্মে। চোটের থাবায় ছিটকে যাবার আগ পর্যন্ত ভালো ছন্দে ছিলেন নেইমারও। আর এমবাপে তো গত কয়েক বছর ধরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাই প্রত্যাশার পারদটা বেশ উপরের দিকেই ছিল। কিন্তু এবারেও নক আউটে এসে কুপোকাত পিএসজি। আর দুঃস্বপ্নের নাম বায়ার্ন মিউনিখ। অবশ্য প্রথম লেগে ১-০ গোলে পিছিয়ে পড়লেও ফিরতি লেগে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছে পিএসজি। যদিও মেসি-এমবাপ্পেরা কাল রাতে কিছুই করতে পারেননি।

এফআই