দেশের ফুটবলের প্রধান ভেন্যু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম সংস্কারাধীন। এই মুহূর্তে একমাত্র আন্তর্জাতিক ফুটবল ভেন্যু সিলেট জেলা স্টেডিয়াম। এক বছর পর আন্তর্জাতিক ফুটবল ফিরেছে সিলেটে। সাম্প্রতিক সময়ে বৃষ্টি এবং হকি লিগ হওয়ায় সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের মাঠ বেশ নাজুক অবস্থায় ছিল। গত ২৫ মার্চ সিশেলসের বিপক্ষে কিক অফের কয়েক মিনিট আগ পর্যন্ত কাজ করে মাঠকে ম্যাচের উপযোগী করতে অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়েছেন মাঠকর্মীরা। 

বরাবরের মতো মাঠ প্রস্তুতকারী দলের নেতৃত্বে দিয়েছেন বাফুফের গ্রাউন্ডসম্যান মোহাম্মদ চান মিয়া। ফুটবল ও ক্রীড়াঙ্গনে যিনি চান্দু নামে পরিচিত। গত এক যুগে ফুটবল মাঠের দেখভালের দায়িত্ব এই চান্দুর ওপরই। ফুটবল ফেডারেশনের প্রশাসনিক খাতে অনেক এক্সিকিউটিভ থাকলেও মাঠে চান্দুই বাফুফের একমাত্র স্থায়ী স্টাফ। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও আউটসোর্সিংয়ে অস্থায়ী কয়েকজন চান্দুকে সহায়তা করে। সাম্প্রতিক সময়ে অবশ্য ফেডারেশনের প্রশাসনিক কর্তাদের চান্দুকে তদারকি করতে দেখা যায়।

গত এক দশকে বাফুফেতে প্রশাসনিক খাতে ধারাবাহিকভাবে লোক নিয়োগ হয়েছে। ভবনের প্রাত্যহিক হাজিরা খাতায় এখন ৬১ জনের ( সাধারণ সম্পাদক থেকে সর্বনিম্ন স্তর পর্যন্ত) স্বাক্ষর তালিকায় দাঁড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের মহানগরী ও পাইওনিয়ার কার্যালয়ে ১৫ জনের মতো স্টাফ রয়েছেন। এই দুইয়ের সঙ্গে দেশি-বিদেশি কোচিং, ট্যাকনিক্যাল স্টাফ যোগ করলে সব মিলিয়ে বাফুফের বেতনভুক্ত স্টাফ সংখ্যা দাঁড়ায় শ’র আশেপাশে; তন্মধ্যে মাঠের জন্য একমাত্র চান্দুই। 

গত এক যুগে ফুটবল মাঠের দেখভালের দায়িত্ব এই চান্দুর ওপরই। ফুটবল ফেডারেশনের প্রশাসনিক খাতে অনেক এক্সিকিউটিভ থাকলেও মাঠে চান্দুই বাফুফের একমাত্র স্থায়ী স্টাফ। 

 

এক দশক যাবত একজন স্থায়ী গ্রাউন্ডসম্যান রয়েছে, এর আগে দেশের শীর্ষ ফেডারেশন অস্থায়ী গ্রাউন্ডসম্যান দিয়েই কাজ চালিয়েছে। ফুটবল মাঠের খেলা। সেই মাঠের দিকে তেমন নজর নেই দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার। জনবল নিয়োগের ধরণ ও এর ব্যবহারেই এতে স্পষ্ট। অনেক খাতে ব্যয় করলেও মাঠের বিষয়ে বরাবরই কৃচ্ছতার নীতি ফেডারেশনের।

এ নিয়ে প্রায়ই ক্ষোভ প্রকাশ করতেন বাফুফের সাবেক নির্বাহী সদস্য ও গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান বাবুল। কাজী সালাউদ্দিনের গত তিন মেয়াদেই তিনি গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। চতুর্থ মেয়াদে প্রায় আড়াই বছর পার হতে যাওয়া অবস্থায় বাবুলকেই দায়িত্ব দিয়েছে। পুরনো দায়িত্ব পেয়ে একমাত্র গ্রাউন্ডসম্যান প্রসঙ্গে সিনিয়র এই ক্রীড়া সংগঠক বলেন,‘ আমি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করিনি। ফুটবলের প্রাণ মাঠ। মাঠকে সঠিক ও সুন্দর রাখতে প্রয়োজন জনবল, বাজেট এবং সময়। এ কথা আমি বরাবরই বলে এসেছি।’

ঘরোয়া ফুটবলে একাধিক ভেন্যুতে ম্যাচ আবার আন্তর্জাতিক ম্যাচও পড়ে এক সঙ্গে অনেক সময়। সেই মুহূর্তে দম ফেলার ফুসরত থাকে না চান্দুর। গত এক দশক এভাবেই তাকে চালিয়ে নিচ্ছে বাফুফে। দিনরাত পরিশ্রম করে মাঠ প্রস্তুত করে ফেডারেশনের ভাবমূর্তি রক্ষা করলেও চান্দুকে খুশি করার তেমন উদ্যোগ থাকে না ফেডারেশন কর্তাদের।

ফুটবল এখন অনেকটা প্রযুক্তি নির্ভর। ট্যাকনিক-ট্যাকটিসের যেমন কৌশর রয়েছে তেমনি মাঠ নির্মাণ, পরিচর্যায় আছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সংমিশ্রণ। বাংলাদেশ এই দিক থেকে অনেক পিছিয়ে। গ্রাউন্ডসম্যান চান্দুর বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকলেও একাডেমিক জ্ঞান নেই। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের মাঠ এখন নতুনভাবে তৈরি হচ্ছে। এখানেও বাফুফে চান্দুর ওপরই খানিকটা নির্ভরশীল।

ঘরোয়া ফুটবলে শীর্ষ পর্যায়ে ২০১৮ সালে পদার্পণ বসুন্ধরা কিংসের। গত বছর থেকে নিজস্ব মাঠেই লিগের ম্যাচ খেলছে বসুন্ধরা কিংস। কিংস অ্যারেনার গ্রাউন্ডসের দায়িত্বে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সাবেক প্রশাসক মোঃ ইয়াহিয়া। কিংসের মাঠ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ইয়াহিয়া বলেন, ‘ক্লাব কর্তৃপক্ষ মাঠকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। আমাদের গ্রাউন্ডসম্যানই রয়েছে ৪ জন।’ একটি ক্লাবের  গ্রাউন্ডসম্যান চার জন আর সেখানে দেশের ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাত্র এক চান্দুকেই দিয়েই সব কিছু দেখভাল করে।  বাফুফে যে সকল স্টেডিয়াম ব্যবহার করে সবই জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধীনে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সম্পত্তি হলেও মাঠ ব্যবহার করে ফুটবল ফেডারেশন ফলে এর পরিচর্যার দায়িত্ব বাফুফের ওপরই পড়ে। 

ঘরোয়া ফুটবলে একাধিক ভেন্যুতে ম্যাচ আবার আন্তর্জাতিক ম্যাচও পড়ে এক সঙ্গে অনেক সময়। সেই মুহূর্তে দম ফেলার ফুসরত থাকে না চান্দুর। গত এক দশক এভাবেই তাকে চালিয়ে নিচ্ছে বাফুফে। দিনরাত পরিশ্রম করে মাঠ প্রস্তুত করে ফেডারেশনের ভাবমূর্তি রক্ষা করলেও চান্দুকে খুশি করার তেমন উদ্যোগ থাকে না ফেডারেশন কর্তাদের।

 

দেশের অন্য দুই বড় দলীয় খেলা হকি ও ক্রিকেটের সঙ্গে ফুটবলের বেশ সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য রয়েছে। বাফুফের মতো হকি ফেডারেশনেরও মাত্র একজন গ্রাউন্ডসম্যান। দীর্ঘদিন ধরে বাবুলই মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামের টার্ফ দেখাশোনা করছেন। জাতীয় দলের অনুশীলন ও লিগ ছাড়া বছরের বেশিরভাগ সময় অলসভাবেই পড়ে থাকে এই টার্ফ। ব্যস্ত সূচির সময় বাবুলের সঙ্গে অস্থায়ীভাবে কয়েকজন সহকারী নিয়োগ দেয় ফেডারেশন। অন্যদিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড মাঠ ব্যবস্থাপনার চিত্র একেবারে ভিন্ন। দেশি-বিদেশি মিলিয়ে তাদের গ্রাউন্ডে কর্মীর সংখ্যা ২৫৬।

বিসিবি: 

কিউরেটর: ৫ ( বিদেশি ২, দেশি ৩)

সহকারী কিউরেটর: ৬

গ্রাউন্ডসম্যান: ২৪৫ ( স্থায়ী ৮৬, মাস্টার রোল-১৫৯)

মোট:    ২৫৬ 

বাফুফে

গ্রাউন্ডসম্যান : ১ ( মোহাম্মদ চান মিয়া)

হকি ফেডারেশন : ১ গ্রাউন্ডসম্যান ( বাবুল)

এজেড/এফআই