ছবি: সংগৃহীত

সাফ চ্যাম্পিয়ন সাবিনাদের অলিম্পিক বাছাই খেলতে মিয়ানমার না যাওয়া নিয়ে সারা দেশজুড়েই চলছে আলোচনা-সমালোচনা ৷ বুধবার দিন বিকেলে এক ভিডিও বার্তায় বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ বলেছিলেন, 'প্রয়োজনীয় যে অর্থ সেই অর্থ সংকুলান করতে না পারায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ডিসিশন ( সিদ্ধান্ত) হচ্ছে, আমাদের জাতীয় মহিলা ফুটবল দল অলিম্পিক কোয়ালিফায়ার্সের খেলায় অংশগ্রহণ করছে না।' তার এমন বক্তব্যের পর নির্বাহী কমিটির অনেক কর্মকর্তাই 'বাফুফের সিদ্ধান্ত' শব্দের সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাহী কমিটির এক সদস্য বলেন, 'বাফুফের সিদ্ধান্ত বলতে সাধারণত বোঝায় নির্বাহী কমিটির সভা করে যে সিদ্ধান্ত হয়। ২/৩ জনের নেয়া সিদ্ধান্তকে বাফুফের সিদ্ধান্ত বলা সমীচীন নয়। 'স্ট্যান্ডিং কমিটি তাদের কর্মকান্ডের সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রাখে। সিনিয়র জাতীয় নারী দল একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে না তা নিয়ে ওমেন্স ফুটবল কমিটির সভাও হয়নি।'

আরও পড়ুন >> অবশেষে সাবিনাদের জন্য বাফুফের ফান্ডে ৫০ লাখ

আর্থিক কারণে সাবিনারা মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইয়ে খেলতে যেতে পারেনি। নির্বাহী কমিটির সভা ডাকলে এর একটি সমাধান হতে পারতো বলে মনে করেন আরেক সদস্য, 'বাংলাদেশের ফুটবলের আলো নারীরাই জ্বালিয়ে রাখছে৷ অলিম্পিক বাছাইয়ের খেলা মেয়েদের জন্য প্রয়োজন ছিল। দল পাঠাতে সমস্যা হচ্ছে এ নিয়ে সভা ডাকলে একটি সুন্দর সমাধান আসতে পারতো। স্পন্সর আনার মাধ্যমে অথবা আমরা নিজেরাও অর্থ দিয়ে দল পাঠানোর ব্যবস্থা করা যেত।' 

অর্থের কারণে সাবিনারা মিয়ানমার যেতে পারছে না এই সংবাদটি মিডিয়া গুরুত্ব সহকারে পরিবেশন করেছে। ফুটবলের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের নজরে আসলে সেই প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে এগিয়ে আসতে চেয়েছিল ৷ ফেডারেশনের সভাপতি ও নারী উইংয়ের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগও করেছিলেন সেই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। এর আগেই এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনকে এন্ট্রি প্রত্যাহারের জন্য চিঠি দিয়েছে।'

বাফুফের এক সহ-সভাপতি মনে করেন, 'বিশেষ বা গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে জরুরি সভা ডেকে আলোচনা করা শ্রেয়। সারা বাংলাদেশের আকর্ষণ নারী ফুটবল নিয়ে। নারী দল অলিম্পিক বাছাইয়ের মতো খেলতে পারছে না এটা অবশ্যই জরুরি সভায় আলোচনা হওয়ার মতো বিষয়।'

আরও পড়ুন >> সাবিনাদের নীরব বিদ্রোহ! 

বাফুফের অনেক কর্মকর্তাই ফুটবলাঙ্গনে ও সাংবাদিকদের কাছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে নানা মন্তব্য করলেও নির্বাহী সভায় অথবা ফেডারেশনের নীতি নির্ধারকদের সামনে নিশ্চুপই থাকেন প্রায় ক্ষেত্রে। আবার অনেক সময় বিভিন্ন সভা, সেমিনারে সফরসঙ্গী বা দলের বিভিন্ন পদ দিয়েও কর্মকর্তাদের ক্ষোভও প্রশমিত করা হয়। 

গত মাসে বাফুফে নির্বাহী সদস্য ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আরিফ হোসেন মুন পদত্যাগপত্র জমা দেন। পত্র জমা দেয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ফেডারেশন জানায়, মুনের পদত্যাগপত্র বাফুফে কতৃক গৃহীত। নির্বাহী কমিটির সভা ছাড়া এই পদত্যাগপত্র গ্রহণ নিয়ে আপত্তি আছে কমিটির অনেকের। তাদের মতে, নির্বাচিত কোনো সদস্যের পদত্যাগ গ্রহণ একক সিদ্ধান্তের এখতিয়ার নেই, এটা নির্বাহী কমিটির এখতিয়ার। তবে বাফুফের অন্যতম সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ পদত্যাগপত্র গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে বলেন, 'পদত্যাগ করাটাও এক ধরনের অধিকার । এতে অন্যদের সম্মতি অনাবশ্যক । নিজের স্বইচ্ছায় পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। ফলে এটা গ্রহণ হতেই পারে।'

জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক শেখ মোঃ আসলাম ২০১৫ সালে সদস্য থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন। সেই পদত্যাগপত্র নির্বাহী সভায় উঠেছিল। নির্বাহী সভায় সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ হয়নি। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের আমলে আট বছরের ব্যবধানে দুই পদত্যাগপত্র গ্রহণের প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা ঘটল। 

কাজী সালাউদ্দিন নিজেই বাফুফে সহ-সভাপতি থেকে পদত্যাগপত্র দিয়েছিলেন ( সঙ্গে আশরাফউদ্দিন চুন্নুও) । সুলতান-হেলালের কমিটিতে সালাউদ্দিনের পদত্যাগপত্র নির্বাহী সভায় গৃহীত হয়নি৷ সালাউদ্দিন সেই কমিটির বাকি মেয়াদে আর ফেডারেশনে যাননি ও ফেডারেশন পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করায় পদটি নিষ্ক্রিয় ছিল৷ 

এজেড/এইচজেএস