ইসরায়েলের বিরোধীতা করে বড় শাস্তি পেল ইন্দোনেশিয়া
অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ শুরুর আর অল্প কিছুদিন বাকি। প্রাথমিকভাবে আগামী ২০ মে থেকে এবারের আসর শুরুর কথা থাকলেও তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এর আগে ব্রাজিল ও পেরুকে টপকে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপের আয়োজক হয় ইন্দোনেশিয়া। এরপর সাড়ে তিন বছর ধরে বিশ্বকাপ আয়োজনের সমস্ত প্রস্তুতি নেয় দেশটি। ইতোমধ্যে ওই খাতে এশিয়ার দেশটি বিপুল অঙ্কের টাকাও ঢেলে ফেলেছে। তবে ইন্দোনেশিয়ার বিশ্বকাপ আয়োজকস্বত্ব বাতিল করেছে ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা।
ইসরায়েলের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার বিরোধের জেরে বিশ্বকাপ শুরুর আগমুহূর্তে পরিস্থিতি টালমাটাল রূপ নিয়েছে। ঠিক সেই পরিস্থিতিতে তাদের আয়োজনের অধিকার কেড়ে নেয় ফিফা। তবে এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি টুর্নামেন্টের আয়োজক চূড়ান্ত করতে পারেনি।
বিজ্ঞাপন
অনেক আগে থেকেই ইসরায়েলের ঘোরবিরোধী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়া। এশিয়ার দেশটি খেলাধুলার ক্ষেত্রেও যুগের পর যুগ সেই ধারা অব্যাহত রেখেছে। বিভিন্ন সময় ইসরায়েলের কারণে অনেক টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় তারা। ইউরোপের বাছাইপর্ব উতরে ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছিল ইসরায়েল। তবে ইন্দোনেশিয়ার জনসাধারণ ও রাজনীতিবিদদের একটি অংশ দেশটিতে ইসরায়েলের আগমনের তীব্র বিরোধিতা করে। সেই আচরণের দায়ে বড় শাস্তিই পেল দেশটি। ইন্দোনেশিয়া ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (পিএসএসআই) বিশ্বকাপ আয়োজন বাতিলের পাশাপাশি আর্থিক নিষেধাজ্ঞার কবলেও পড়েছে।
— FIFA Media (@fifamedia) March 29, 2023
ফুটবলে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোকে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পরিচালনা ব্যয়ের জন্য ফরোয়ার্ড ফান্ডের অর্থ দিয়ে থাকে ফিফা। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া-ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান পরিস্থিতির পর গত বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) ফিফার পক্ষ থেকে জানানো হয়, পরবর্তী নোটিশের আগপর্যন্ত ফিফা ফরোয়ার্ড ফান্ডের অর্থ পাবে না ইন্দোনেশিয়া।
বিজ্ঞাপন
এর আগে ২০১৯ সালের অক্টোবরে ইন্দোনেশিয়াকে আসন্ন বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। তারা পেছনে ফেলে ব্রাজিল ও পেরুর মতো বিশ্বফুটবলের জনপ্রিয় দেশগুলোকে। অবশ্য সেই সময়ে টুর্নামেন্টটি মাঠে গড়ানোর কথা ছিল ২০২১ সালে। করোনা মহামারির কারণে তা দুই বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। সাড়ে তিন বছর ধরে অবকাঠামোসহ ২৪ দলের টুর্নামেন্ট আয়োজনে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে ইন্দোনেশিয়ার সরকার। নতুন করে তাদের আয়োজন বাতিল হওয়ায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে দেশটি।
নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, ৫টি স্টেডিয়াম ও ২০টি অনুশীলন ভেন্যু প্রস্তুত করতে খরচ হয়েছিল প্রায় ১২০ লাখ মার্কিন ডলার।
ইউনিভার্সিটি অব ইন্দোনেশিয়ার ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চের সূত্র উল্লেখ করে টাইমস জানায়, অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ কেন্দ্র করে ৪৪ হাজারের বেশি চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছিল। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পর্যটন ও ভেন্ডর মিলিয়ে আরও বিপুল অর্থ আয়ের হিসাব করা হয়েছিল। বিনিয়োগ হয়েছিল এসব খাতেও। ফলে সেসব খাতেও বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে দেশটি।
মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিনের ওপর আগ্রাসনের কারণে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ইন্দোনেশিয়ায় ইসরায়েল বিরোধিতা প্রবল। যার ধারাবাহিকতায় অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে ইসরায়েলের আগমন ঠেকাতে জাকার্তায় কয়েক দফায় বিক্ষোভ হয়। বিরোধিতায় নামেন ডেমোক্রেটিক পার্টি অব স্ট্রাগলের (পিডিআই-পি) সেক্রেটারি জেনারেল হাসতো ক্রিস্তিয়ান্তোও।
তবে ফিফার টনক নড়ে বালি গভর্নরের এক চিঠির পর। বিশ্বকাপের অন্যতম ভেন্যু ছিল বালি দ্বীপ। সেখানকার গভর্নর ওয়াইয়ান কোসতার ইন্দোনেশিয়ার ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখে জানান, তার অঞ্চলে ইসরায়েলকে আতিথেয়তা দেওয়া হবে না। আর এই ঘটনার পরপরই ফিফা ইন্দোনেশিয়াকে আয়োজক হিসেবে বাতিল করে।
এএইচএস