বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগের বিরুদ্ধে মোটাদাগে চারটি ধারায় অভিযোগ প্রমাণের কথা বলছে আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেডারেশন (ফিফা)। সেগুলো হলো- ২০২০ সালের ফিফা এথিকস কোডের ধারা ১৫ (সাধারণ কর্তব্য), ১৩ (আনুগত্যের দায়িত্ব), ২৪ (জালিয়াতি ও মিথ্যাচার) এবং ২৮ (অযথার্থতা ও অনুদানের অপব্যবহার)। এসব ধারায় তাকে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা এবং প্রায় ১২ লাখ টাকা (১০ হাজার সুইস ফ্রা) জরিমানা করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) এ বিষয়ে ৫০ পাতার একটি প্রতিবেদন দিয়েছে আন্তর্জাতিক ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। চার ধারার অধীনে ফিফা মোট ৩০৬টি পয়েন্টে সোহাগের অপরাধের বর্ণনা দিয়েছে। 

ফিফার ইন্ডিপেন্ডেন্ট এথিক্স কমিটির বিচারিক চেম্বার অভিযোগের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। যেখানে বাফুফে সম্পাদক সোহাগের বিরুদ্ধে অনুদানের অর্থ নিয়ে মিথ্যা ও ভুয়া নথি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় দুই বছরের জন্য ফুটবল সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড থেকে নিষিদ্ধের চিঠি ইতোমধ্যে বাফুফে সম্পাদকের কাছে পাঠিয়েছে ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থাটি। বিবৃতিতে চিঠি পৌঁছার পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে জরিমানা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিচারিক কমিটিতে চেয়ারপারসন গ্রীসের ভ্যাসিলস স্কৌরিস’সহ অন্য সদস্যরা হলেন- চিলির পামেলা ক্যামাস এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মোহাম্মদ আল কামালি। এছাড়া আবু নাঈম সোহাগকে পাঠানো চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন ফিফা জুডিশিয়াল বডির পরিচালক কার্লোস শ্নেইডার।

প্রতিবেদনটি বলছে, ফিফার দেওয়া অনুদান অপব্যবহার করেছে বাফুফে এবং সেই বিষয়ে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সোহাগ ভুয়া কিংবা জাল নথি দিয়েছেন। ৪০ বছর বয়সী সোহাগ ২০১৩ সাল থেকে বাফুফের দ্বিতীয় শীর্ষ পদ এবং ২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর থেকে এশিয়ার ম্যাচ কমিশনারের দায়িত্ব পান।

২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর প্রথম বাফুফের অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে অনিয়মের বিষয়টি চিহ্নিত করে ফিফাকে জানায় কন্ট্রোল রিস্ক গ্রুপ লিমিটেড। এরপর ক্রমান্বয়ে ওই বিষয়ে তদন্তে নামে ফিফা। 

এরপর ২০২১ সালের ২২ মার্চ থেকে প্রায় দেড় বছর ধরে সোহাগের সঙ্গে ফিফার বিচারিক চেম্বারের যোগাযোগ এবং নিজের অবস্থানের স্বপক্ষে বিস্তারিত তথ্য দাখিল করেন বাফুফে সম্পাদক। এরপর সব যাচাই-বাছাই শেষে ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় বিচারিক চেম্বার।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বাফুফে সম্পাদকের বিরুদ্ধে চারটি প্রধান অপরাধ উল্লেখ করা হয়েছে। আবু নাঈম সোহাগ মিথ্যা নথি এবং বক্তব্য দিয়েছেন। যেখানে জাতীয় ফুটবল দলের জন্য ক্রীড়া সরঞ্জাম ক্রয়ে ৩০ হাজার ২৭ মার্কিন ডলার (২৫ লাখ ৮৮ হাজার ৬৪০ টাকা ) ব্যয়ের তথ্য দিয়েছেন তিনি। এছাড়া চারশ ফুটবল ক্রয়বাবদ ১২ লাখ টাকা এবং বিমানের টিকিট ক্রয়বাবদ ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ৩০০ ব্যয় হয়েছে।

পরবর্তী তদন্তেও মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ করেছে ফিফা। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সেসব মিথ্যা তথ্যের দায়ভার নেওয়া এবং পুরো কার্যক্রমে সোহাগ নিজেই জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে ফিফা অনুদান পুরোপুরিভাবে অপব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া, ফিফাকে দেওয়া আর্থিক হিসাবে মার্কিন ডলারের যে হিসাব দেওয়া হয়েছে সেটিও চলতি সময়ের সঙ্গে মিল নেই বলে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে। পরবর্তীতে ফিফার কাছে দেওয়া সোহাগের ব্যাখ্যা আইনি বিধি অনুসারে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয় এবং সেসব অভিযোগ থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেন সোহাগ।

 এদিকে, ফিফার ৫৭ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাফুফে সম্পাদক রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আদেশটি নিয়ে আপিলের সুযোগ রয়েছে ক্রীড়া আদালতে (সিএএস)। তবে বিষয়টি প্রকাশের ২১ দিনের মধ্যে সেই আপিল সম্পন্ন করতে হবে। পরবর্তীতে বাড়তি আরও ১০ দিনের ভেতর ফিফার বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত যুক্তি ও বিবৃতি জমা দিতে হবে তাকে।

এএইচএস