গত কয়েক মাস ধরেই নানা ইস্যুতে আলোচনায় দেশের ঘরোয়া ফুটবল। মাঠের বাইরের নানা আলোচনার পর এবার মাঠের খেলা নিয়েও চলছে সমালোচনা। এই সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে জাতীয় দলের প্রধান কোচ স্প্যানিশ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। সাফের জন্য তার চূড়ান্ত করা ২৩ সদস্যের দল নিয়ে ফুটবলাঙ্গনে আলোচনার ঝড় বইছে। 

চলতি লিগে দেশি ফুটবলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতা আবাহনীর ফরোয়ার্ড এলিটা কিংসলে। এলিটাকে ৩০ জনের ক্যাম্পে চারদিন অনুশীলন করিয়েও বাদ দিয়েছেন হ্যাভিয়ের। জাতীয় দলের সাবেক কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক হ্যাভিয়েরের এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বলেন,‘ কিংসলেকে আমি বেশ কয়েক বছর ধরেই চিনি। সে একজন ভালো টিমমেট। টিমে রাখলে তাকে ব্যবহার করতে পারত। এই দলে অনেককেই তিনি নিয়েছেন, যাদের সবাইকে তিনি সেভাবে ব্যবহারও করতে পারবেন না।’

কিংসলে এবারের মৌসুমে ঢাকা আবাহনীর হয়ে খেলছেন। তার পারফরম্যান্স সবচেয়ে কাছ থেকে দেখেছেন আবাহনীর পতুর্গীজ কোচ ম্যারিও ল্যামোস। কিংসলের বাদ পড়া পুরো ফুটবলাঙ্গনে আলোচনা হলেও তিনি মন্তব্যহীন, ‘আমি জাতীয় দল নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না।’ কারণ হিসেবে জানা যায়, ল্যামোসকে মন্তব্য না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ক্লাব থেকে।

আরও পড়ুন >> সর্বোচ্চ গোলদাতাকে ছাড়াই সাফে বাংলাদেশ

ঘরোয়া লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েও জাতীয় দলে জায়গা না পাওয়ার ঘটনা আরও রয়েছে বাংলাদেশে। জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার শেখ মো. আসলাম সেই স্মৃতিই রোমন্থন করলেন, ‘১৯৯২ সালের লিগে আমি আবাহনীর হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা। এরপরও কোচ সালাউদ্দিন ভাই জাতীয় দল নিয়ে গেলেন আমাকে ছাড়া।’ 

নব্বইয়ের দশক ছাড়াও সত্তর দশকে এমন আরেকটি ঘটনা রয়েছে। ১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে মেজর হাফিজ শীর্ষ গোলদাতার মধ্যে থেকেও জাতীয় দলে ডাক পাননি।

এলিটা কিংসলে নাইজেরিয়ান থেকে বাংলাদেশি হয়েছেন শুধু একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে মাস তিনেক আগে বাংলাদেশ দলের জার্সিতে তার অভিষেক হয়েছিল। এবার দেশীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে বাদ পড়েও যথেষ্ট বিনয়ী কিংসলে, ‘শুধু আমি নই, আরো ৭ জন বাদ পড়েছে। কোচ যাদের ভালো ও যোগ্য মনে করেছেন, তাদেরই নিয়েছেন। হয়তো আমি গোল করেছি, কিন্তু তার পরিকল্পনা বা চাহিদায় অন্য কিছু রয়েছে। যার সঙ্গে আমি সামঞ্জস্যপূর্ণ নই। বাদ পড়ায় আমার কোনো অসন্তুষ্টি নেই।’

কিংসলের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের হয়ে দক্ষিণ এশিয়ার এই বিশ্বকাপে খেলার। সেই আশা এখনো ছাড়ছেন না কিংসলে, ‘ভবিষ্যত নিয়ে মন্তব্য করা যায় না। হয়তো ২ বছর পর কোনো কোচের দর্শন বা গেম প্ল্যানের সঙ্গে আমি মিলে যেতে পারি। তবে এর আগে আমাকে ফিট ও ফর্ম ধরে রাখতে হবে।’

আরও পড়ুন >> কম্বোডিয়া জয় করে ভারত যেতে চান হ্যাভিয়ের

আবাহনীর কিংসলেকে বাদ দেওয়ার পাশাপাশি মোহামেডানে দারুণ পারফরম্যান্স করা সাজ্জাদ হোসেন ও শাহরিয়ার ইমন বাদ পড়েছেন। জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীবের কাছে বিষয়টি একটু অন্যরকম লাগছে, ‘জাতীয় দলে পারফর্ম করা খেলোয়াড় দরকার। আমরা দেখছি অনেক খেলোয়াড় ইনজুরি বা অনুশীলন না করেও টিকে যাচ্ছে, আবার অনেকে পারফর্ম করেও বাদ পড়ছে। আপাতদৃষ্টিতে কোচের এই নির্বাচনে একটি বিশেষ ক্লাবের খেলোয়াড়দের প্রাধান্য দৃশ্যত। পাশাপাশি তিনি অন্য কোচের দ্বারা প্রভাবিত বলেও মনে হচ্ছে।’  

জাতীয় দলের কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা নিয়োগের আগে থেকেই প্রশ্নের মুখে ছিলেন। একাডেমিতে কোচিং করানো হ্যাভিয়েরকে জাতীয় দল কমিটির অনেকেই প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দিতে চাননি। সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের নির্দেশনাতেই মূলত জাতীয় দল কমিটি হ্যাভিয়েরকে অনুমোদন দেয়। বৃটিশ টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলির মাধ্যমে হ্যাভিয়েরের বাংলাদেশে আগমন। কাজ শুরু করার পর থেকে বসুন্ধরা কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজনের প্রতি হ্যাভিয়েরের নির্ভরতার বিষয়টি ফুটবলাঙ্গনে আলোচনার আরও ডালপালা মেলে। 

এজেড/এএইচএস