৩২ দলের টুর্নামেন্ট থেকে আর বাকি দুইটি দল। ফিফা নারী বিশ্বকাপ পেতে চলেছে নতুন এক চ্যাম্পিয়ন। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে আগামীকাল রোববার (২০ আগস্ট) মুখোমুখি হবে নারী ফুটবলের দুই পরাশক্তি স্পেন এবং ইংল্যান্ড। এর আগে অবশ্য আজ শনিবার ৩য় স্থানের জন্য লড়বে টুর্নামেন্টের অন্যতম আয়োজক অস্ট্রেলিয়া এবং র‍্যাঙ্কিংয়ের ৩য় স্থানে থাকা সুইডেন। 

রোববারের ফাইনালে বিশ্ব ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্ব ছাড়াও আছে বড় রকমের আর্থিক হিসেব। ফিফা আয়োজিত সব টুর্নামেন্টেই বিশেষ দৃষ্টি থাকে প্রাইজমানির দিকে। ব্যতিক্রম হচ্ছে না এবারেও। ২০২৩ সালের এই নারী বিশ্বকাপে থাকছে মোটা অঙ্কের অর্থ পুরস্কার। যা আগের যেকোন আসরের চেয়ে প্রায় তিন থেকে ছয়গুণ বেশি। 

আসরভিত্তিক প্রাইজমানি

২০২৩ সালের বিশ্বকাপে সর্বমোট ১১০ মিলিয়ন ইউএস ডলার পুরস্কারের কথা ঘোষণা করেছে বৈশ্বিক ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। যা আগের ২০১৯ আসরের তুলনায় তিনগুণ এবং ২০১৫ আসরের তুলনায় প্রায় ছয়গুণ বেশি।  

বিশ্বকাপ আসর প্রাইজমানি (ডলার)
২০২৩ বিশ্বকাপ  ১১০ মিলিয়ন
২০১৯ বিশ্বকাপ  ৩০ মিলিয়ন 
২০১৫ বিশ্বকাপ ১৫ মিলিয়ন 
২০১১ বিশ্বকাপ ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন 
২০০৭ বিশ্বকাপ ৫ দশমিক ৮ মিলিয়ন

পর্বভিত্তিক পুরস্কারের তালিকা 

ফিফার এবারের বিশ্বকাপজয়ী দল পাবে ৪২ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪৭ কোটি টাকার কাছাকাছি। রানারআপ দলের জন্য থাকছে ৩০ লাখ ১৫ হাজার ডলার। বাংলাদেশের মানে যা ৩৩ কোটি টাকা। এছাড়া শুধুমাত্র বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের কারণেই মোটা অঙ্কের অর্থ পাবে অংশগ্রহণকারী দলগুলো। 

আরও পড়ুন: নারী ফুটবলে কার বেতন কত? 

পর্ব  পুরস্কারের পরিমাণ (মার্কিন ডলারে)
গ্রুপপর্বের প্রতিটি দল ১৫ লাখ ৬০ হাজার
শেষ ১৬ তে উত্তীর্ণ দল ১৮ লাখ ৭০ হাজার 
কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তীর্ণ দল  ২১ লাখ ৮০ হাজার
চতুর্থ স্থান    ২৪ লাখ ৫৫ হাজার 
তৃতীয় স্থান    ২৬ লাখ ১০ হাজার 
রানার আপ  ৩০ লাখ ১৫ হাজার 
চ্যাম্পিয়ন ৪২ লাখ ৯০ হাজার

তবে এখানেই থামছে না পুরস্কারের তালিকা। বিশ্বকাপে ৩২ দলের হয়ে অংশ নেওয়া সকল খেলোয়াড়ের জন্যই পুরস্কার বরাদ্দ রেখেছে ফিফা। হিসেব অনুযায়ী, এবারের টুর্নামেন্টে ৭৩২ জন নারী ফুটবলার অংশ নিয়েছেন। তাদের প্রত্যেকেই দলীয় পারফর্ম্যান্স অনুযায়ী আর্থিক পুরস্কার পাবেন ফিফা থেকে। 

খেলোয়াড়দের জন্য বরাদ্দ পুরস্কার

যার মধ্যে গ্রুপপর্বে বাদ পড়া দলের নারী ফুটবলাররাও পাবেন কমপক্ষে ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। আর চ্যাম্পিয়ন দলের নারী ফুটবলারদের জন্য আছে ২ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। 

দলীয় পারফর্ম ভিত্তিতে খেলোয়াড়দের জন্য বরাদ্দ পুরস্কার তালিকা

পর্ব  পুরস্কারের পরিমাণ (মার্কিন ডলারে)
গ্রুপপর্বের প্রতিটি দল ৩০ হাজার
শেষ ১৬ তে উত্তীর্ণ দল ৬০ হাজার 
কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তীর্ণ দল  ৯০ হাজার
চতুর্থ স্থান    ১ লাখ ৬৫ হাজার
তৃতীয় স্থান    ১ লাখ ৮০ হাজার
রানার আপ  ১ লাখ ৯৫ হাজার
চ্যাম্পিয়ন ২ লাখ ৭০ হাজার

এছাড়া বিশ্বকাপের পর ফিফার সম্প্রচার স্বত্ব থেকে আয় হওয়া অর্থ প্রতিটি সদস্য দেশেই পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। তিনি জানান, ‘বৈশ্বিকভাবে নারী ফুটবলারদের বেতন আনুমানিক ১৪ হাজার ডলার। তাই নতুন মডেলের অধীনে এবারের বরাদ্দকৃত অর্থ এসব খেলোয়াড়দের জীবন এবং ক্যারিয়ারে আরও অর্থপূর্ণ অবদান রাখবে।’  

আরও পড়ুন: নারী বিশ্বকাপে দর্শক উপস্থিতির রেকর্ড

নারী এবং পুরুষ ফুটবলের মধ্যে পার্থক্য

যদিও এত বিশাল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত পুরুষ ফুটবলের তুলনায় অনেকখানি পিছিয়ে আছে নারী ফুটবল। সবশেষ ২০২২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে সর্বমোট ৪৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পুরস্কার প্রদান করেছিল ফিফা। যা নারীদের এবারের বিশ্বকাপের প্রদত্ত অর্থের তিনগুণ বেশি। টাকার অঙ্কে দুই বিশ্বকাপের পুরস্কারের পার্থক্য ৩৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

যদিও ফিফা সভাপতির প্রত্যাশা খুব দ্রুতই নারী এবং পুরষ ফুটবলের মধ্যে চলমান এই পার্থক্য কমিয়ে ফেলা হবে, ‘আমরা নারী ফুটবল এবং এর সমতার এক ঐতিহাসিক পথে চলছি। এটা আমাদের সমান অর্থবরাদ্দের দিকে নিয়ে যাবে। এই পথে তিনটি ধাপ আছে। প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপ এরইমাঝে ফিফা কাউন্সিল হাতে নিয়েছে।’ 

জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর আশা প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, চার বছরের মধ্যেই এমন বৈষম্য কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। ২০২৬ সালে পুরুষ বিশ্বকাপ এবং ২০২৭ সালের নারী বিশ্বকাপের একই অর্থ পুরস্কার বরাদ্দ দেওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। 

জেএ