আগে থেকেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক ব্রিটিশ ট্যাকনিক্যাল ডাইরেক্টর পল স্মলির কর্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। বাংলাদেশ ছেড়ে মালদ্বীপ ফুটবলে পাড়ি জমান তিনি। সেখানেও ফেডারেশনের ট্যাকনিক্যাল ডাইরেক্টরের দায়িত্ব নিয়েছেন এই ব্রিটিশ নাগরিক। তবে দেশ ছাড়লেও বাংলাদেশের ফুটবলে বিতর্ক জন্ম দিয়েই যাচ্ছেন স্মলি।

বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো কোচিংয়ের এএফসি প্রো লাইসেন্স কোচিং প্রোগ্রামের আয়োজন করে। সেই কোর্সের ইন্সট্রাকটর ছিলেন পল স্মলি। তিনি সেই কোর্সে বিদেশি সবাইকে পাশ করালেও বাংলাদেশিদের মধ্যে শুধুমাত্র বসুন্ধরা কিংসের সহকারী কোচ আসিফুর রহমানকে পাশ করেছিলেন। দেশের শীর্ষ কোচ মারুফুল হক, জাকারিয়া বাবু, জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু ও মাসুদ পারভেদ কায়সারের ফলাফল অপেক্ষামান ছিল। গোলাম রব্বানী ছোটন, সাইফুল বারী টিটু, রাশেদ আহমেদ পাপ্পু, আবু ফয়সাল আহমেদ, হাসান আল মাসুদ, উজ্জল চক্রবর্তী শিবু,রাহেল অনুত্তীর্ণ ছিলেন। 

আরও পড়ুন: বাফুফের কোর্স : বিদেশিরা পাস, দেশিরা অনুত্তীর্ণ ও অপেক্ষায় 

বিদেশি সবাইকে পাশ করিয়ে দেশীয় শীর্ষ কোচদের কাউকে কাউকে অপেক্ষামান, কাউকে ফেল করিয়ে শুধু আসিফকে পাশ করানোর নিয়ে আগেই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছিলেন পল। এবার নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন অপেক্ষামান চার জনের পাশাপাশি ফেল করা সাইফুল বারী টিটু ও রাশেদ আহমেদ পাপ্পুকেও উত্তীর্ণ করিয়ে। 

ফলাফল নিয়ে ক্ষুব্ধ গোলাম রব্বানী ছোটন

ফেল করা দুই জন পাশ করায় ফুটবলাঙ্গনে আবারও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয় নারী দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন এই কোর্সের ফলাফল প্রক্রিয়া ও ইন্সট্রাকটটের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘বিদেশিরা সবাই পাশ আর দেশিদের মধ্যে আমরা সবাই জানি কে পাশ, কারা অপেক্ষামান এবং কারা অনুত্তীর্ণ। দুই মাস পর অনুত্তীর্ণদের থেকে দুই জন পাশ করলেন। ফলে এই কোর্সের ফলাফলের স্বচ্ছতা এবং এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের নৈতিকতা নিয়ে কিছু বলার নেই।’ 

বাফুফের সাবেক ট্যাকনিক্যাল ডাইরেক্টর পল স্মলি বাংলাদেশ ছাড়ার আগে ফলাফল নিয়ে নানা যুক্তি দেখিয়েছিলেন। কেন শুধু আসিফই উত্তীর্ণ, কেন মারুফ-মিন্টুরা অপেক্ষামান আর টিটু-ছোটনরা ফেল। বিশ্বজুড়েই কোচদের চাকরি ঝুকির মধ্যে। এই আছে তো, এই নেই। অনেক কোচ ক্লাবের সঙ্গে না থাকায় ব্যবহারিক সময় মতো দিতে পারেননি। এত কঠোর ও নীতিবান ইন্সট্রাকটর হঠাৎ এত উদার হয়ে ফেল থেকে দুই জনকে কোন প্রক্রিয়ায় পাশ করলেন এই ব্যাখ্যা জানতে গত দুই দিন তার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি। এই সংক্রান্ত বিষয়ে মন্তব্য চেয়ে মেসেজ দিয়ে উত্তর চাওয়া হলেও তিনি দেখে নিশ্চুপ থেকেছেন। 

বাফুফের কোচিং কোর্সগুলো অনুষ্ঠিত হয় ট্যাকনিক্যাল কমিটির অধীনে। ট্যাকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান ও বাফুফের অন্যতম সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মহী ফেল থেকে পাশের প্রক্রিয়া নিয়ে একেবারেই অজ্ঞাত, ‘আমি এই ব্যাপারে কিছুই জানি না। বিগত সময়েও আমাকে কিছু জানায়নি, এখনও কিছু জানায়নি।’

উপেক্ষিত ছিলেন দেশীয় কোচরা

ফেল করা সাত জনের মধ্যে শুধু দুই জন পাশ করলেন কিভাবে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ফুটবলাঙ্গনে। বিভিন্ন সূত্রের খবর, টিটু ও পাপ্পু দুই জনই ফেডারেশনে পুনরায় আবেদন করেছিলেন। দুই জনই তাদের কিছু কাজ আবার জমা দেয়ায় সেগুলো মূল্যায়ন হয়ে এএফসি’র কাছ থেকে মঞ্জুর করিয়ে ফলাফল ইউটার্ন হয়েছে। 

ফেল করাদের মধ্যে শুধু এই দুই জন বিশেষ বিবেচনা পাওয়ার পেছনে অনেকে কারণ হিসেবে মনে করছেন, টিটু ও পাপ্পু যথাক্রমে নারী দল এবং একাডেমীর দায়িত্বে রয়েছেন। দুই জায়গাতেই প্রো লাইসেন্স কোর্স সম্পন্ন কোচ প্রয়োজন এজন্যই ফেডারেশনের অনুরোধ এবং চাপেই তারা সনদ পাচ্ছেন। আবার কেউ মনে করছেন, যে সকল কোচ মিডিয়ার ফোকাসে থাকেন সব সময় এবং ফেডারেশনের কাউন্সিলরও (সাব কমিটির সদস্য) তাদের পাশ করানোর ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন ফেডারেশনের নীতি নির্ধারকরা। এর ফলে বাকিরা বঞ্চিত হয়েছেন।

এএফসি প্রো লাইসেন্স এশিয়ার শীর্ষ কোচিং সনদ। এই সনদ থাকলে কোচরা এশিয়ার যে কোনো শীর্ষ লিগ ও জাতীয় দলে কোচিং করানোর সামর্থ্য রাখেন। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এমন কোর্সের আয়োজন করেছিল। কোর্সের জন্য কোচদের প্রায় দুই বছর সময় এবং কয়েক লাখ অর্থ ব্যয় হয়েছে। নানা ঘটনার পর বাংলাদেশে এখন এএফসি প্রো লাইসেন্স কোচ সাত জন। এই সনদ তিন বছর পুনরায় হালনাগাদ করতে হবে তাদের। 

এজেড/জেএ