বাংলাদেশের মানুষের ফুটবলপ্রেম কারও অজানা নয়। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলে বিভক্ত দেশের ফুটবলপ্রেমীরা। তিন মাসের ব্যবধানে লাতিন দুই পরাশক্তির সাবেক ও বর্তমান দুই তারকা ফুটবলার এসেছেন ঢাকায়। দুই আয়োজনই বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক এমিলিয়েনো মার্টিনেজের সফরে গণমাধ্যমের কোনো প্রবেশাধিকারই ছিল না।

এত বড় ফুটবলার আসলেও ছিলেন না কোনো ফুটবলার বা ফুটবলসংশ্লিষ্ট কেউ। বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে থেকেও দেখা পাননি। ফলে মার্টিনেজের সেই সফর নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ফুটবল দলের অধিনায়ক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে রোনালদিনহো সফরে আমন্ত্রণ জানানো হয়। মার্টিনেজের সফরে মিডিয়া আমন্ত্রিত না থাকলেও রোনালদিনহো সফরে ছিল। 

বিশ্ব তারকাদের ঢাকা সফর সকল মিডিয়ার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই সবাই এই খবরটি পৌঁছে দিতে চায়। গতকাল প্রায় সকল মিডিয়ার আগ্রহে ছিল রোনালিদনহোর সফর। রেডিসন হোটেলে রোনালদিনহো উঠেন এবং আয়োজকরা সেখানেই এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সেই আয়োজনের আমন্ত্রণ পায়নি দেশের শীর্ষ অনেক গণমাধ্যমই। এ নিয়ে বিপত্তির শুরু। অনেক বাকবিতণ্ডার পর অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ আগে উপস্থিত প্রায় সব সাংবাদিককেই ভেতরে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ আগে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়, ‘মিডিয়ার জন্য আসন নেই, পেছনে দাঁড়াতে হবে’। 

এমন ঘোষণার পর উপস্থিত সাংবাদিকরা খানিকটা সমালোচনা করেন। আবার মিনিট দশেক পর একই কথা বলা হয়, সাংবাদিকদের জন্য আসন নেই, পেছনে দাঁড়াতে হবে। এবার সাংবাদিকরা তীব্র প্রতিবাদ জানান। সাংবাদিকদের এই প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে আয়োজকরা খানিকটা নিজেদের ভুল স্বীকার করলেও সাংবাদিকরা ততক্ষণে অনুষ্ঠান বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে আসার কথা ছিল যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের। ক্রীড়া সাংবাদিকদের এই অপমানে তিনিও ব্যথিত হয়েছেন,‘এই সকল অনুষ্টানে সীমিত সংখ্যক আমন্ত্রণ থাকে। সাংবাদিকরাই সারা দেশের মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে দেবেন তারকা খেলোয়াড়দের। সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ অবশ্যই প্রয়োজন।’

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ক্রীড়া সাংবাদিকদের গুরুত্ব অনুধাবন করলেও আয়োজকরা বুঝতে পারেননি। রোনালদিনহো এবং মার্টিনেজ উভয়ে বাংলাদেশে এসেছেন কলকাতার ক্রীড়া উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্তের মাধ্যমে। দুই বারই তার কর্মকাণ্ড চরম প্রশ্নবিদ্ধ। কলকাতার শতদ্রু দত্ত ছাড়াও বাংলাদেশের আয়োজকরাও দায় এড়াতে পারেন না।

মার্টিনেজের সময় নেক্সট ভেঞ্চার নামক আইটি প্রতিষ্ঠান ফুটবলসংশ্লিষ্ট এবং গণমাধ্যমকে বাইরে রেখে অনুষ্ঠান করেছে। এবার রোনালদিনহোর সময় বাংলাদেশ অংশে ব্যবস্থাপনায় ছিল ক্রিয়েশন ওয়ার্ল্ড। তারা মার্টিনেজ ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমন্ত্রণ জানালেও মিডিয়া ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করতে পারেননি। মার্টিনেজ এবং রোনালদিনহোর এই সফরে ক্রীড়াঙ্গনে বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশি কিছু প্রতিষ্ঠান বিশ্বমানের তারকা এনে কি উদ্দেশ্য হাসিল করছে। 

আজকের অনুষ্ঠান কাভার করতে এসেছিলেন দেশের অন্যতম সিনিয়র ফটো ক্রীড়া সাংবাদিক শামসুল হক টেংকু। প্রথম আলোয় কর্মরত এই ফটো সাংবাদিক আজকের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় বলেন,‘বাংলাদেশে জিদান এসেছে, মেসি-আর্জেন্টিনা ম্যাচ হয়েছে। আরও অনেক কিংবদন্তি এসেছেন সব সময় মিডিয়ার অশংগ্রহণ ছিল। এবারের মতো তিক্ত অভিজ্ঞতা কখনো হয়নি।’

বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক দেশ রুপান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার সুদীপ্ত আনন্দ নিন্দা জ্ঞাপন করে বলেন,‘আয়োজনের শুরু থেকেই মিডিয়ায় ভোগান্তির মধ্যে ছিল। মঞ্চ থেকে যেভাবে চেয়ার ছাড়ার কথা বলা হচ্ছিল এটা অত্যন্ত অপমানজনক। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে অনুষ্ঠান বয়কটের সিদ্ধান্ত নেই। ’

এজেড/এফআই