বেনজেমা ও মেসি/ফাইল ছবি

সম্ভাব্য শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ। তাও আবার এল ক্ল্যাসিকো, দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সেলোনার লড়াই। একটা সময় এমন ম্যাচের আগে কথার তিরে বিদ্ধ করার চেষ্টা চলত দুই দলের মাঝে, মাঠে হতো রীতিমতো যুদ্ধ। সেখানে এখন দুই দল কিনা প্রশংসা করছে রীতিমতো, জানাচ্ছে শুভকামনাও! এমন পরিস্থিতিতেই আজ মুখোমুখি হচ্ছেন লিওনেল মেসি-লুকা মদ্রিচরা।

২০১০-১১ মৌসুমের কথা মনে আছে? যেখানে দুই দল মুখোমুখি হওয়ার আগে তৎকালীন কোচ জোসে মরিনিও জানিয়েছিলেন, রেফারির মদদ পায় বার্সেলোনা। এমনকি তাদের মুখোমুখি হওয়ার আগে দলকে অনুশীলনে দশ জন নিয়েও খেলিয়েছিলেন, যেন ম্যাচে দলের কেউ লাল কার্ড দেখলে বিপদে পড়তে না হয় দলকে! এরপর তৎকালীন বার্সা কোচ পেপ গার্দিওলা বলেছিলেন, তার কথার জবাব দেওয়া আমার কাজ নয়। মাঠে খেলে তাদের হারানোই আমার কাজ। এরপর অবশ্য শেষ হাসি হেসেছিলেন মেসিরাই।

সোনালী সে দিন গত হয়েছে বহু আগে। তবে বর্তমান দুই কোচ জিনেদিন জিদান আর রোনাল্ড কোম্যান যেন মরিনিও-গার্দিওলার পুরো বিপরীত। রীতিমতো প্রশংসা করছেন প্রতিপক্ষের। জিদান যেমন মেসির শেষ এল ক্ল্যাসিকো হয়ে যাক আজকের ম্যাচ, তা চাইলেন না। বললেন, ‘আশা করছি এমনটা হবে না। সে থাকবে বার্সেলোনাতেই, তার উপস্থিতি লা লিগার জন্য ভালো ব্যাপার।’

তাকে রোখার কৌশলও ভালোভাবেই আঁটছেন জিদান। বললেন, ‘সে কী মানের খেলোয়াড়, তা আমাদের ভালোভাবেই জানা আছে। তবে দল হিসেবেও তারা বেশ ভালো। তাই আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, তারা যেন স্বরূপে খেলতে না পারে।’

জিদান তো কেবল প্রশংসাই করেছেন, বার্সা কোচ কোম্যান তো রীতিমতো রিয়ালের রক্ষণেই এগিয়ে এলেন। জানালেন, সমালোচনা করার মতো দল রিয়াল নয় আদৌ! বললেন, ‘তাদের সমালোচনা শুধু শুধুই করা হয়। তারা দুটো বড় শিরোপার জন্য লড়ছে। তাদের সমালোচনা করার মতো লোক অন্তত আমি নই।’

রিয়ালের অন্তর্বর্তীকালীন মাঠ আলফ্রেডো ডি স্টেফানো স্টেডিয়াম নিয়ে আগের সপ্তাহেই লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ সমালোচনা করেছিলেন। তবে কোম্যান যেন প্রতিপক্ষের রক্ষণেই এগিয়ে এলেন। বললেন, ‘তিনি মাদ্রিদের মতো বড় ক্লাবের প্রাপ্য প্রশংসা কেড়ে নিতে চাইছেন। তারা এখানে খেলে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, প্রতিপক্ষেরও এখানেই খেলতে হবে, এটা আমার কাছে খুব বড় একটা বিষয় নয়।’

তবে মাঠের খেলায় যে দুই দলের কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না, তা একরকম নিশ্চিত। এ ম্যাচের আগে অবশ্য রিয়াল মাদ্রিদ শিবিরে অনুপস্থিতির সংখ্যাই বেশি। চোটের কারণে সার্জিও রামোস, দানি কারভাহাল আর রাফায়েল ভারানকে পাচ্ছে না দলটি। বার্সেলোনা শিবির থেকে সার্জি রবার্তো ও জেরার্ড পিকে অনুপস্থিত থাকলেও ক্ল্যাসিকো দিয়ে ফেরার সম্ভাবনা আছে দু’জনের।

দলে চোটপাটের কারণে কোচ জিদানকেও কৌশল বদলাতে হচ্ছে প্রায় প্রতি ম্যাচেই। সর্বশেষ দুই ম্যাচেই যেমন খেলেছে দুই ছকে। লিগে সর্বশেষ ম্যাচে দলটি খেলেছিল ৩-৪-১-২ ছকে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আটে আবার লিভারপুলের বিপক্ষে খেলেছে ৪-৩-৩ ছকে। ফলে মাঠে নামার আগে দলের কৌশল ঠিক করতে নারাজ কোম্যানও। বললেন, ‘রিয়াল খুব তাড়াতাড়ি কৌশল বদলে ফেলে, তাই আমাদের অপেক্ষাই করতে হবে ম্যাচের জন্য।’

দুই দলের দুই প্রাণভোমরা অবশ্য চিন্তা উপহার দিতে পারেন নিজ নিজ দলকে। মেসি রিয়ালের বিপক্ষে গোল পাচ্ছেন না ছয় ম্যাচ ধরে, আর মাদ্রিদের ফরোয়ার্ড কারিম বেনজেমার বার্সেলোনার বিপক্ষে গোল নেই ৯ ম্যাচে।

তবে গোল করুন আর নাই করুন, আজকের ম্যাচে মাঠে নামলেই রেকর্ড হয়ে যাবে মেসির। সর্বোচ্চ ক্ল্যাসিকো খেলার কীর্তিতে ৪৫ ম্যাচ খেলা সার্জিও রামোসকে ছুঁয়ে ফেলবেন তিনি।

এসব রেকর্ডে ভাবতে মেসির বয়েই গেছে। শিরোপাতেই যে চোখ তার। আজকের ম্যাচে তাই নিশ্চিতভাবে জয়ই চাইবেন বার্সা অধিনায়ক। সেটা হলে বর্তমানে লিগের শীর্ষে থাকা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে হটিয়ে শীর্ষেও উঠে আসা হবে মেসিদের। আর যদি তিনে থাকা রিয়াল জেতে তাহলে বার্সেলোনার সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধান শূন্য করে ফেলবে দলটি, অ্যাটলেটিকোর সঙ্গে ব্যবধান দাঁড়াবে এক-এ। এমন সমীকরণ নিয়েই আজ নিজেদের মাঠে বার্সাকে আতিথ্য দেবে জিদানের দল

এনইউ/এটি