যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিট। বক্সের একটু বাইরে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লেন ক্যাসেমিরো। লিওনেল মেসির ফ্রি কিকটা ছিল লক্ষ্যেও। তবে থিবো কোর্তোয়ার রুটিন সেভে সমতা আর ফেরানো হলো না বার্সেলোনার। এরপর দুই মিনিট দেখল আরও কয়েক প্রস্থ নাটক। শেষটা অবশ্য হলো রিয়াল মাদ্রিদের হাসিতে। ২-১ ব্যবধানে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনাকে হারিয়ে লিগের লড়াইটাও জমিয়ে তুলেছে কোচ জিনেদিন জিদানের শিষ্যরা।

প্রথমার্ধেই দুই গোল। তাতে ব্যবধানটা আরও বড় করার সম্ভাবনা জাগিয়ে বিরতিতে গিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। শেষ দেড় মৌসুমে বার্সেলোনা রক্ষণে যেমন নড়বড়ে, আরও বড় ব্যবধানে হারটাও ছিল খুব সম্ভব। 

এর আগে শুরুটা অবশ্য বেশ ভালো করেছিল কোচ রোনাল্ড কোম্যানের দল। ৩-৪-২-১ ছকে মাঠে নামায় মাঝমাঠে আধিপত্য ছিল বার্সার। অবধারিতভাবে বলের দখলেও এগিয়ে ছিলেন মেসিরাই, পেলেন প্রথম আক্রমণটাও। অধিনায়ক মেসির বাড়ানো বল থেকে আলবা ক্রস করেছিলেন প্রতিপক্ষ বিপদসীমায়, সেটা আয়ত্তে রাখতে পারেননি রিয়াল গোলরক্ষক কোর্তোয়া। এরপর ডিফেন্ডার অস্কার মিনগেসার শটটা কোনোক্রমে আটকায় মাদ্রিদ রক্ষণ।

বলের দখল বার্সেলোনাকে ছেড়ে দিয়ে রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদান এদিন বেছে নিয়েছিলেন ৪-৪-২ ছকে প্রতি আক্রমণের কৌশল। ভিনিসিয়াস জুনিয়র আর কারিম বেনজেমাদের গতির কাছে বারবারই পরাস্ত হচ্ছিল বার্সার রক্ষণ। প্রথম গোলটাও এলো সে সুবাদেই। নিজেদের অর্ধ থেকে ফেদে ভালভার্দে বল প্রতিপক্ষ বিপদসীমার কাছে গিয়ে বল ছাড়েন লুকাস ভাসকেজকে। সেখান থেকে বেনজেমার নিচু ক্রসে বেনজেমার দারুণ ব্যাকহিল বার্সা গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেনকে ফাঁকি দিয়ে জড়ায় জালে।

গোলটা হজমের পরই যেন কিছুটা ছেদ পড়ে বার্সার ছন্দে। সুযোগে রিয়াল মাদ্রিদ ম্যাচের লাগাম হাতে নেয় দ্বিতীয় গোলটা করে। 

২৬ মিনিটে বক্সের ঠিক বাইরে ভিনিসিয়াসকে ফাউল করেন আরাউহো, দেখেন হলুদ কার্ড। ফ্রি কিক পেয়ে যায় রিয়াল। ফ্রি কিক থেকে টনি ক্রুসের বুলেট গতির শট সার্জিনিও ডেস্ট আর জর্দি আলবার মাথা ছুঁয়ে জড়িয়ে যায় জালে। দুই গোলে পিছিয়ে পড়ে বার্সেলোনা।

এরপর বিরতির আগে ভালভার্দের শট পোস্টে না লাগলে হয়তো ৩-০ গোলেও এগিয়ে যেতে পারত রিয়াল। আর বার্সেলোনারও শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছিল ক্রসবার, যোগ করা সময়ে কর্নার থেকে করা শটটা ক্রসবারে না লাগলে হয়তো অলিম্পিক গোলও পেয়ে যেতে পারতেন মেসি, বার্সাও এক গোলে পিছিয়ে থেকে যেতে পারত বিরতিতে।

এ গোলের জন্য বার্সেলোনাকে অপেক্ষা করতে হলো ৬০ মিনিট পর্যন্ত। মেসির বাড়ানো বল আলবাকে খুঁজে পায় বাইলাইনের কাছে, সেখান থেকে তার ক্রসে অরক্ষিত অস্কার মিনগেসা শট নেন মাদ্রিদ গোলমুখে, তাতেই গোল। স্কোরলাইনটা ২-১ করে বার্সা ইঙ্গিত দিচ্ছিল দারুণ এক কামব্যাকের। 

এর আগে অবশ্য ডেস্টকে তুলে অ্যান্টোয়ান গ্রিজমানকে তুলে বার্সাকে ৪-৩-৩ ছকে ফেরত আনেন কোচ, তাতে দলটির আক্রমণেও আসে কিছুটা ভারসাম্য। তা থেকেই তো এল প্রথম গোলটা!

এরপর আবারও মাদ্রিদকে গোলবঞ্চিত রেখেছে গোলপোস্ট, এবার দুর্ভাগ্য ছিল ভিনিসিয়াসের। এর মিনিট চারেক পর আরও এক আক্রমণ কোনোক্রমে ঠেকায় বার্সা রক্ষণ। 

সমতাসূচক গোলের সন্ধানে মরিয়া মেসিরা এরপর অনেকগুলো সুযোগ তৈরি করেছিলেন, তবে সেসব দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়েছে রিয়াল রক্ষণ। ৭৫ মিনিটে মেসির কর্নার থেকে বদলি খেলোয়াড় ইলাইশ মরিবার হেডার গিয়েছে কোর্তোয়ার হাতে। এর কিছু পর মেসির পাস থেকে আলবার শটটা বিপদমুক্ত করেছেন মন্ডি। এরপরই ক্যাসেমিরোর সেই লাল কার্ড, আর মেসির ফ্রি কিক। 

তবে আরও রোমাঞ্চ দেখেছে শেষ দুই মিনিট। মার্সেলোর শট বিপদমুক্ত করেছে বার্সা রক্ষণ। এরপর বল নিয়ে আক্রমণে উঠে এসেছিলেন বার্সা গোলরক্ষক টের স্টেগেনও। মরিবার শটটা প্রতিহত হয় ক্রসবারে, এরপর স্টেগেন নিজেও চলে গিয়েছিলেন গোলের খুব কাছে, নিয়েছিলেন শট। তা মাদ্রিদ ডিফেন্ডারের গায়ে লাগলে ফিরতি সুযোগে শট করেন আলবা, কিন্তু শেষমেষ তা হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট। ফলে, ২০০৭-০৮ মৌসুমের পর প্রথমবারের মতো লিগের দুই সাক্ষাতেই বার্সেলোনার বিপক্ষে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রিয়াল মাদ্রিদ।  

এই জয়ের ফলে এক ম্যাচ বেশি খেলে লিগ তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে রিয়াল মাদ্রিদ। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের সমান ৬৬ পয়েন্ট এখন জিদানের দলের। এদিকে বার্সেলোনা ৩০ ম্যাচ থেকে ৬৫ পয়েন্ট নিয়ে আছে তালিকার তৃতীয় স্থানে।

এনইউ/এইচকে