জাতীয় দল কিংবা ক্লাব ফুটবল– সব ক্ষেত্রেই চলতি মৌসুমে দারুণ সময় কাটাচ্ছেন পর্তুগিজ সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। বয়স ৩৮ পেরোলেও পারফরম্যান্সে তিনি যেন টগবগে যুবক। সর্বশেষ গতকাল (শুক্রবার) আল-নাসরের হয়ে মাঠে নেমেও তিনি জোড়া গোল করেছেন। তার ভেতর একটি গোল ছিল প্রায় ৩৫ গজ দূরত্ব থেকে লব শটে দেওয়া। আল নাসরের ৩-০ গোলে বড় ব্যবধানে জয়ের রাতে বিশ্বরেকর্ডও গড়েছেন সিআরসেভেন। প্রথম শ্রেণির ফুটবলে তিনি বিশ্বের সর্বাধিক ৫২৭ গোলের মালিক বনে গেলেন।

সৌদি সুপার লিগের ম্যাচে গতকাল আখদাউদের বিপক্ষে আল-নাসর বড় জয় পেয়েছে। এদিন স্কোরশিটে দুবার নাম তোলা রোনালদো চলতি মৌসুমে আল নাসরের হয়ে ১৮ ম্যাচে ১৮ গোল করেছেন, এর মধ্যে সৌদি প্রো লিগে করেছেন ১৩ ম্যাচে ১৫ গোল। বল পায়ে রোনালদোকে যেন থামানোই যাচ্ছে না। শেষ তিন লিগ ম্যাচে রোনালদো ৪টি গোল পেয়েছেন।

সিআরসেভেনের পা থেকে এদিন গোলটা আসে ম্যাচের ৭৭ মিনিটে। বক্সের ভেতর ডান পাশে রোনালদো যখন বল পান, তখন তাঁর সামনে ছিল প্রতিপক্ষের গোলরক্ষকসহ চার খেলোয়াড়। শুরুতে দারুণভাবে বলটি নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন সিআরসেভেন। এরপর দু’বারের স্পর্শে বলকে আরেকটু ভেতরে টেনে নেন। একেবারে সামনে থাকা দুই ডিফেন্ডারও সামনে এগিয়ে যান। কিন্তু এরপরই কাছাকাছি জায়গা থেকে কাছের পোস্ট লক্ষ্য করে বুলেটগতির শট নেন রোনালদো। সামনে থাকা দুই ডিফেন্ডার তো বটেই, এমনকি পোস্ট আগলে রাখা গোলরক্ষক ও ডিফেন্ডারকেও পেরিয়ে বল জড়ায় জালে। দুর্দান্ত এই গোলের পর দারুণ উল্লাসে মাতেন রোনালদো।

তবে ম্যাচটিতে রোনালদো নিজের সেরা গোলটি করেন আরও তিন মিনিট পর। আখদাউদের আক্রমণ তৈরির পর সম্মিলিতভাবে প্রতিপক্ষ রক্ষণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল আল-নাসর। শুরুতে কিছুটা পিছিয়ে থাকা রোনালদো সতীর্থের উদ্দেশে বল বাড়িয়ে একটু আয়েশি ভঙ্গিতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সামনের দিকে। আল-নাসর খেলোয়াড়কে থামাতে এ সময় এগিয়ে আসেন আখদাউদ গোলরক্ষক। রীতিমতো মাটিতে শুয়ে আক্রমণ ঠেকিয়েও দেন তিনি। এরপর প্রথমে বুক দিয়ে বলটা নামিয়ে নেন রোনালদো। তারপর কাউকে বল না বাড়িয়ে ৩৫ গজ দূর থেকেই লব (মাথার ওপর দিয়ে তুলে দেওয়া) করেন পর্তুগিজ তারকা। বক্সের ভেতর প্রতিপক্ষের তিন খেলোয়াড় পাহারায় থাকলেও তাদের তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার ছিল না। 

চলতি সৌদি প্রো লিগে ৩৮ পেরোনো এই তারকা ফুটবলার ১২ ম্যাচ খেলে ১৪ গোল করেছেন। পর্তুগিজ পোস্টারবয়কে মতান্তরে গোলের দিক থেকে সর্বকালের সেরা ফুটবলার হিসেবেও গণ্য করা হয়। ২০১৬ সালে রোনালদোর নেতৃত্বেই পর্তুগাল উয়েফা ইউরোর খেতাব নিজেদের ঘরে এনেছিল। আন্তর্জাতিক ফুটবলে তিনিই সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন। পর্তুগালের হয়ে তিনি খেলেছেন রেকর্ড সর্বোচ্চ ২০৩ ম্যাচ। তিনিই প্রথম ফুটবলার হিসেবে ক্লাব ও দেশ মিলিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ৮০০টি গোল করেছেন।

এর আগে ২০২২ বিশ্বকাপ থেকে পতুর্গালের বিদায়ের পর অনেকেই রোনালদোর শেষ দেখে ফেলেছিলেন। কিন্তু রোনালদো নিজের বিদায়টা এমন মলিনভাবে লিখতে রাজি ছিলেন না। ভেবে রেখেছিলেন ভিন্ন কিছু। বিশ্বকাপ শেষে সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরে যোগ দেন। এরপর যদিও তাকে শিরোপাবিহীন একটি মৌসুম কাটাতে হয়েছে। সেই দৃশ্যপট পেছনে ফেলে চলতি মৌসুমে আল-নাসরের হয়ে রোনালদো হয়ে উঠেছেন অপ্রতিরোধ্য। 

এএইচএস