ওয়াসিম ইকবাল ও কবরী

কিংবদন্তী অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরীর মৃত্যুতে ক্রীড়াঙ্গনেও বইছে শোকের বার্তা। সত্তর-আশির দশকে বাংলাদেশের জনগণের বিনোদন বলতে ছিল মূলত সিনেমা আর ফুটবল। সিনেমার নায়ক-নায়িকার মতো ফুটবলাররাও ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। কবরীর মৃত্যুতে সত্তর-আশির দশকের ফুটবলাররা বেশ শোকাহত। 

সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও বাংলাদেশের ফুটবলে আশির দশকে অন্যতম সুপারস্টার খন্দকার ওয়াসিম ইকবাল ফুটবলের পাশাপাশি রুপালি পর্দায়ও কাজ করেছেন। ‘জনি ওস্তাদ’ সিনেমায় তিনি জাফর ইকবাল, অঞ্জু ঘোষের মতো ফ্লিম তারকার সঙ্গে অভিনয় করেছেন। 

কিংবদন্তী অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরীর সঙ্গে ওয়াসিম ইকবালের অভিনয় করার সুযোগ না হলেও তাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন এক টিভি অনুষ্ঠানে। সেই স্মৃতি ওয়াসিম রোমন্থন করলেন এভাবে, ‘১৯৮২ কিংবা ৮৩ সালের দিকে বিটিভিতে একটি অনুষ্ঠানে কবরী আপা আমার একটা সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। ফুটবলার হিসেবে তখন আমার জনপ্রিয়তা অনেক। তিনি তখনই কিংবদন্তীর পর্যায়ে। এক অঙ্গনের তারকা আরেক অঙ্গনের দৃষ্টিতে এ রকম একটি অনুষ্ঠানে তিনি আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন’। বিটিভির সেই অনুষ্টান শুরুর আগে কোনো এক বিষয় নিয়ে খান আতাউর রহমানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাধে ওয়াসিমের। কবরী সেই দ্বন্দ্ব নিরসন করেছিলেন, ‘৪০ বছর আগের ঘটনা। পুরোপুরি মনে নেই। কোনো একটা কারণে খান আতাউরের সঙ্গে আমার মত বিরোধ হচ্ছিল। এক পর্যায়ে আমি অনুষ্ঠান করতেই চাইছিলাম না। কবরী আপা আমাকে বুঝিয়ে সুন্দরভাবে অনুষ্ঠান শেষ করেন। তার সাথে অনুষ্ঠানটি ছিল ত্রিশ মিনিটের। কোন দিক দিয়ে যে এত সময় চলে গেল টেরই পাইনি।’ 

কবরী আগে সনাতন ধর্ম পালন করতেন। এজন্য গোপীবাগে রামকৃষ্ণ মিশনে পূজা করতে আসতেন। ওয়াসিম ইকবাল ব্রাদার্স ইউনিয়নে খেলতেন ও রামকৃষ্ণ মিশন স্কুল পড়তেন । ফলে ছোটবেলা থেকেই কবরীকে কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। জাফর ইকবালের পর কবরীও চলে গেলেন ওয়াসিমের সঙ্গে পরিচয় থাকা দুই রুপালি পর্দার মহাতারকার বিদায়ে শোকাহত এক সময়ের সুপারস্টার।

ওয়াসিমের মতো কবরীর সাথে পরিচয় ও মেশার সুযোগ পেয়েছিলেন ব্রাদার্সের আরো দুই সাবেক ফুটবলার হাসানুজ্জামান খান বাবলু ও মোহসীন। সাবেক ফুটবলারদের সংগঠন সোনালী অতীত ক্লাবের সভাপতি এখন বাবলু। বয়সে কবরী তার চেয়ে ৩-৪ বছর বড় হলেও তার অভিনয়ের বেশ ভক্ত ছিলেন এক সময়ের কুশলী এই মিডফিল্ডার। বাবলু-মহসিন জুটি ছিল আশির দশকে অন্যতম আলোচিত জুটি। এই জোড়ার উপর ভর করেই ব্রাদার্স ইউনিয়ন ফুটবল লিগে দাপট দেখাত। ১৯৮১ সালে একদিন এই দুই জন একদিন পুরো কবরীর শ্যূটিং দেখেছিলেন। 

৪০ বছর পরেও সেই দিনটির কথা মনে রেখেছেন বাবলু, ‘১৯৭৮ সালে থাইল্যান্ডে একটি টুর্নামেন্ট খেলে এসেছি। ছুটি কাটাচ্ছিলাম কিছুদিন। হোটেল সোনারগাঁতে তখন অধিকাংশ শ্যূটিং হতো। সোনারগাঁয়ে কবরীর এক দিনের পুরো শ্যূটিং দেখেছিলাম আমি ও মহসীন’। কবরী তখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। কবরীর শ্যুটিং দেখা সহজ ছিল না। কিন্তু বাবলু-মহসীনকে সেভাবে কোনো বেগই পেতে হয়নি, ‘পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম ভাই তখন গোপীবাগ থাকতেন। তিনি একদিন বললেন, ‘চলো কবরীর শ্যূটিং দেখাই তোমাদের।’ তখন দেবদাস ছবির শ্যূটিং চলছিল। আমরা শুটিং দেখার পাশাপাশি তার সঙ্গে আলাপও করেছিলাম।’

বাবলুর ব্রাদার্সের সতীর্থ মহসিন কবরীর সঙ্গে আলাপচারিতা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরাও তখন তারকা। মানুষজন আমাদের খেলা দেখতে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করতো। কথা বলার জন্য অনেক চেষ্টা করতো। তারকা হয়ে অন্য জগতের তারকার সাথে সময় কাটানোটা ছিল বিশেষ অভিজ্ঞতার। তাকে বেশ আন্তরিক হিসেবেই পেয়েছি সেদিন ও পরবর্তী সময়গুলোতে।’

এজেড/এটি