বাংলাদেশে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে করোনা প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচি। ইতোমধ্যে অনেকেই ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজও নিয়েছেন। ক্রীড়াঙ্গনের ৪০ ঊর্ধ্ব অনেক ব্যক্তি করোনা টিকা গ্রহণ করেছেন। বর্তমান জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের বয়স ৪০ এর নিচে হওয়ায় সুরক্ষা অ্যাপে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের ভ্যাকসিন প্রাপ্তির জন্য আলাদা ক্যাটাগরি করা হয়েছে। 

জাতীয় ক্রিকেটাররা ইতোমধ্যে দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করেছেন। কয়েকজন জাতীয় ফুটবলার নিজ উদ্যোগে ও সার্ভিসেস বাহিনীর মাধ্যমে প্রথম ডোজ দিয়ে দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে বেশকয়েকজন জাতীয় ফুটবলার সুরক্ষা অ্যাপে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারছেন না। 

সুরক্ষা অ্যাপে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের অগ্রাধিকার দিলেও নিবন্ধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অনেক জাতীয় ফুটবলারের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। এজন্য তারা ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করতে পারছেন না। 

২০১৫ তে অনূর্ধ্ব ১৯ ও ২০১৯ সালে অনূর্ধ্ব ২৩ দলের অধিনায়ক ছিলেন মিডফিল্ডার মাসুক মিয়া জনি। অনূর্ধ্ব পর্যায়ে দুই বার জাতীয় দলের আর্মব্যান্ড পরা জনি ইতোমধ্যে মূল জাতীয় দলেও খেলছেন। পাসপোর্ট অনুযায়ী ২২ পার হওয়া এই ফুটবলার জাতীয় পরিচয়পত্র না করার কারণ হিসেবে বলেন, ‘আসলেই দেশের নাগরিক হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র করা অবশ্যই প্রয়োজন ছিল। করি, করি করে আর করা হয়ে ওঠেনি।’ 

বছর পাঁচেক আগেই জাতীয় পরিচয়পত্র করার যোগ্যতা অর্জন করা জনি এত দিনেও না করার কারণ সম্পর্কে বলেন, ‘কয়েক বছর যাবত ফুটবলে ব্যস্ত মৌসুম। অফ সিজন সেভাবে নেই। ক্লাবের খেলা শেষ হলে আবার জাতীয় দলের ক্যাম্প। যে কারণে বাড়িতে যাওয়ার সময় আমরা সেভাবে পাই না। নিজ জেলা থেকে এনআইডি করার আগ্রহ থাকায় এখনো করা হয়ে ওঠেনি। এজন্য দেখবেন, জাতীয় দলেরই বেশি ফুটবলারের এনআইডি নেই অন্য ফুটবলারদের চেয়ে।’

জাতীয় দলের নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার রিয়াদুল হাসান রাফি সাইফ স্পোর্টিং ক্লাবের অধিনায়ক। দেশের একটি শীর্ষ ক্লাবের অধিনায়কত্ব করা এই ফুটবলারেরও নেই জাতীয় পরিচয়পত্র। ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করতে এসেই এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন এই জাতীয় ফুটবলার, ‘আমরা পাসপোর্ট ব্যবহার করি সবক্ষেত্রে। ভিসা বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পাসপোর্ট ও জন্ম নিবন্ধন দিয়েই হয়ে যায় এজন্য আর জাতীয় পরিচয়পত্রকে আমরা সেভাবে গুরুত্ব দিইনি।’ 

রাফি অধিনায়কত্ব করছেন জামাল ভূঁইয়ার পরিবর্তে। জামাল দ্বিতীয় লেগে ফিরে আমর্ব্যান্ড নেবেন সাইফের। সাইফ ও জাতীয় দলের অধিনায়ক জামালেরও নেই জাতীয় পরিচয়পত্র। জামাল বাংলাদেশে ফুটবল খেলতেই এসেছেন ডেনমার্ক থেকে ২২ বছর বয়সের পর। ডেনমার্ক প্রবাসী এই ফুটবলারের স্ত্রীও জার্মান প্রবাসী। জাতীয় দলের অধিনায়কের সঙ্গে অন্যদের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকার বিষয়টি মোটেও এক নয়। 

করোনায় পজিটিভ হওয়ায় নেপালে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে যেতে না পারা ডিফেন্ডার রহমত মিয়ারও নেই জাতীয় পরিচয়পত্র। তিনি অবশ্য সম্প্রতি মাগুরায় জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করলেও লকডাউনের জন্য ছবি তুলতে যেতে পারছেন না। জাতীয় ফুটবলাররা বছরের অধিকাংশ সময়ই ঢাকায় থাকেন। ঢাকায় ক্লাবের বা ফেডারেশনের ঠিকানায় চাইলে এত দিনে সহজেই জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে পারতেন।

জাতীয় পরিচয়পত্র করতে ন্যূনতম ১৮ বছর বয়স হওয়া প্রয়োজন। এর আগেই জন্মনিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্ট পেয়ে যাওয়ায় জাতীয় পরিচয়পত্র করার দিকে হাঁটেন না অনেক ফুটবলার। এই বিষয়টি স্বীকার করলেন জাতীয় ফুটবলার রহমত মিয়া, ‘অনূর্ধ্ব ১৫-১৬ পর্যায়ে দেশের বাইরে খেলতে গেলে আমাদের পাসপোর্ট হয়ে যায়। এরপর থেকে আমরা পাসপোর্টই ব্যবহার করছি।’

জাতীয় অনূর্ধ্ব ১৬ ও ১৯ দলের একাধিকবার ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করা আমের খান জাতীয় ফুটবলারদের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকাটা খুবই দুঃখজনক বলে মনে করেন। তিনি বলেন, ‘ফেডারেশন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে দেশের বাইরে খেলার জন্য ১৮ বছরের আগে পাসপোর্ট করে দেয় অনূর্ধ্ব জাতীয় পর্যায়ের ফুটবলারদের। যখন ১৮ পার হয় ফুটবলারদের বয়স তখন জাতীয় পরিচয়পত্র করা প্রতিটি ফুটবলারের নিজ নিজ দায়িত্ব। দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে তাদের এই কার্ড না করাটা বেশ হতাশার।’  

জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকা ফুটবলাররা বিষয়টি উপলব্ধি করছেন। এই ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে ফেডারেশন ও ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভ্যাকসিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা।

বাংলাদেশের অনেক প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। জাতীয় পরিচয়পত্র করা বা না করা প্রত্যেকের ব্যক্তি স্বাধীনতার বিষয় হলেও যারা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকাটা বড্ড বেমানান!

জাতীয় নারী ফুটবলারদের বয়স অধিকাংশের আঠারোর নিচে। শুধুমাত্র জাতীয় দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ভ্যাক্সিন নেওয়ার জন্য উপযোগী। 

এজেড/এটি/এমএইচ/জেএস