আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের আরচ্যারিকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়েছেন রোমান সানা। ২০১৯ সালে বিশ্ব আরচ্যারি চ্যাম্পিয়নশিপে রিকার্ভ ব্যক্তিগত ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতে টোকিও অলিম্পিকে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে যা বিশেষ ঘটনা। সেই রোমান গত দেড় বছরে নানা চড়াই উৎরাইয়ের পর আকস্মিকভাবে জাতীয় দল থেকে অবসর নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একজন অলিম্পিয়ান আরচ্যারের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা।

রোমান সানা জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন আরেক আরচ্যার দিয়া সিদ্দিকীকে। দিয়া একদিকে রোমানের মাঠের সহকর্মী আরেকদিকে জীবনের সঙ্গী। দেশ সেরা এই নারী আরচ্যার রোমানের অবসরের সিদ্ধান্তকে দেখছেন দুই ভাবে, 'স্ত্রী হিসেবে তার সিদ্ধান্তে আমি খুশি। সে ওখানে (জাতীয় আরচ্যারিতে) মানসিক শান্তিতে ছিল না। সতীর্থদের কাছ থেকে সেভাবে সাপোর্ট পায়নি। আবার একজন কলিগ ও অ্যাথলেট হিসেবে মনে করি তার আরো কয়েক বছর খেলার সক্ষমতা রয়েছে। সে ফিরে আসুক।'

রোমান সানা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে অন্যতম বড় তারকা। জাতীয় দল থেকে অবসর নেয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি স্ত্রী হিসেবে দিয়া জেনেছেন সবার আগেই। দুই জনের আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে জাতীয় দল থেকে অবসর নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সানা এমনটাই জানালেন দিয়া, 'সে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছে। সবার ব্যক্তিগত একটা স্বাধীনতা রয়েছে। আমরা দুই জনই দুই জনের সিদ্ধান্ত সম্মান করি কখনো কেউ কাকে ডিনাই করি না। আমি তাকে বুঝিয়েছি এই সংক্রান্ত বিষয়ে, সেও আমাকে বুঝিয়েছে। তার বোঝানোটা প্রাধান্য পেয়েছে এবং যৌক্তিক হয়েছে বেশি।’

রোমান সানার বয়স মাত্র ২৮ বছর। এখনই হাল ছেড়ে দেয়ায় ক্রীড়াঙ্গনেও আলোচনা চলছে। এমন সময়ে স্বামীর পাশে দাড়াচ্ছেন দিয়া, 'স্ত্রী হিসেবে আমি তার পাশে সব সময় থাকব। স্ত্রী বলে তাকে আমি ডিফেন্ড করছি। খেলার মতো খেলার বাইরে সেই এই বিষয়ে লড়াই করতে পারবে।'

রোমান সানা আরচ্যারি খেলবে না বিষয়টি এ রকম নয়। তিনি জাতীয় দল থেকে অব্যাহতি নিলেও বাংলাদেশ আনসারের হয়ে জাতীয় আরচ্যারিতে খেলবেন। ইরাক যাওয়ার আগে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছেন রোমান। ক্রীড়াঙ্গনের অনেকের ধারণা পারফরম্যান্সের অবনিত হওয়ায় হতাশা থেকে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। রোমানের স্ত্রী দিয়া এতে খানিকটা ভিন্ন মত পোষণ করে বলেন, 'পারফরম্যান্স খারাপের জন্য তার মতো অ্যাথলেট অবসর নেয় না। সে নিয়মিত অনুশীলন করলে সেরা তিনের মধ্যে আসতে পারবে। সেরা তিনের মধ্যে থাকা কেউ তো আর খারাপ অ্যাথলেট না।'

সম্ভাবনা-সুযোগ সব কিছুর পরেও কেন অবসর? এই প্রসঙ্গে খানিকটা আক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়ার কন্ঠে, 'আমরা জাতীয় দলে ধৌতভাতা পাই ৩ হাজার আর বাড়ি ভাড়া ২ হাজার।’ আনসারের চাকুরি করেন। সেখান থেকে মাসিক বেতন পান। ক্রিকেট-ফুটবল ছাড়া অন্য কোনো খেলায় বাংলাদেশে স্বচ্ছলতা নেই। আর্থিক অনটন একটা বড় সমস্যাই। রোমান এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে দিয়ার খেলায় কোনো প্রভাব পড়বে কিনা এই প্রসঙ্গে বলেন, 'সামনে সিচুয়েশন কি হয় জানি না। তবে আমার খেলায় তার কোনো বাধা নেই। আমি যত দিন ইচ্ছে খেলতে পারি। সে আমাকে সাপোর্ট করবে। তবে আমারও ভবিষ্যতের চিন্তা রয়েছে এবং ভালো কিছুর। সিচুয়েশনই সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করে মূলত।'

রোমানের অবসরের সিদ্ধান্ত অনেকটা অভিমান মূলকই। দেশকে অনেক কিছু এনে দিলেও এর প্রেক্ষিতে তার তেমন প্রাপ্তি হয়নি। তাই রোমানের স্ত্রীর প্রত্যাশা ফেডারেশন রোমানের সঙ্গে বসুক, 'তার সঙ্গে ফেডারেশনের কথা বলা দরকার।’ একজন অ্যথলেট হিসেবে দিয়ার চাওয়া, 'অবশ্যই কলিগ হিসেবে চাই সে ফিরে আসুক আরচ্যারিতে। আর শেষ পর্যন্ত যদি নাই আসে তাহলে বাংলাদেশ এক নক্ষত্র হারাবে।’

এজেড/এইচজেএস