২০০৮ সালের বাফুফে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ফেডারেশন সভাপতিশাসিত। কাজী সালাউদ্দিন ২০০৮ সালের এপ্রিলে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই যথেষ্ট সময় দিয়েছেন। সম্প্রতি হৃদযন্ত্রে অপারেশন শেষে ৮৭ দিন পর আজ (বুধবার) ফেডারেশনে এসেছেন তিনি।

কাজী সালাউদ্দিনের চতুর্থ মেয়াদের সমাপ্তি ঘটবে আগামী অক্টোবরে। এখনও সাত মাস বাকি রয়েছে তার। বাইপাস সার্জারির পর এখন কি আগের মতো নিয়মিত ফেডারেশনে আসবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে সালাউদ্দিন বলেছেন, ‘আমি যদি ফুটবল করি আগের মতোই করব। আর যদি না করি করব না। হাফ হার্টেড (অর্ধ সম্পূর্ণ) জিনিস আমি করি না।’

এই বিষয়ে তিনি তার খেলোয়াড়ী জীবনের একটি উদাহরণ টেনে বলেন, ‘আমি যখন ফুটবল খেলেছি, ফুটবল–ই খেলেছি। ক্রিকেটে ন্যাশনাল টিমে ডাক পেয়ে রিপোর্ট করলেও জয়েন করি নাই।’ কাজী সালাউদ্দিন কিংবদন্তী ফুটবলার হলেও ক্রিকেটে ভালো খেলতেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তিনিই করেছিলেন। আজাদ বয়েজের হয়ে আবাহনীর বিপক্ষে ৯০ প্লাস রানের ইনিংসও রয়েছে।

বাফুফে সভাপতি অসুস্থ হওয়ার কিছুদিন আগে পুনরায় বাফুফে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। আড়াই মাস পর ফেডারেশনে এসেছেন আজ। সাংবাদিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ে পুনরায় নির্বাচনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না এই প্রশ্ন সরাসরি হয়নি, তিনিও এই ব্যাপারে কিছু বলেননি। পরোক্ষভাবে জানতে চাওয়া হয়েছিল নির্বাচনের সময় সালাউদ্দিন খুব চিন্তিত থাকেন। এই বিষয়ে চিকিৎসকের কোনো নির্দেশনা আছে কি না। এর উত্তরে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমার কোনো বাধা-নিষেধ নেই। শুধু একটাই বলা হয়েছে ছাড়লে ভালো (ধূমপান)।’

২৮ ডিসেম্বর ওপেন হার্ট সার্জারি হওয়ার এক সপ্তাহ পর বাসায় ফিরেন সালাউদ্দিন। এক মাস বাসাতেই ছিলেন। এরপর জার্মানিতে কাটিয়েছেন এক মাস। সশরীরে ফেডারেশন কিংবা মাঠে না গেলেও তিনি খোঁজ-খবর রেখেছেন সবই। নারী ফুটবলে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নিয়ে বলেন, ‘অনূর্ধ্ব-১৬ ও ১৯ দু’টি টুর্নামেন্টই আমি দেখেছি। অ-১৯ টুর্নামেন্টের পর কোচকে একটু বাজেই বলেছি। আমরা ট্রেনিং করাই কোয়ালিটি খেলার জন্য।’

কাজী সালাউদ্দিন বাফুফে সভাপতির পাশাপাশি সাফ সভাপতির দায়িত্বেও আছেন। সাফ অ-১৯ টুর্নামেন্টে লঙ্কান ম্যাচ কমিশনার আকস্মিকভাবে টস করান। যার ফলে বড় জটিলতা তৈরি হয় এবং যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করতে হয়। এই প্রসঙ্গে সালাউদ্দিন বলেন, ‘এটা হওয়ার কথা নয়। এই ভুল কেন হবে। পরে যখন শুনলাম অন্য কেউ (ম্যাচ কমিশনার) করেছে। আমার অফিসের কেউ করলে বরখাস্ত করতাম।’

সাম্প্রতিক সময়ে নারী ফুটবলের পাশাপাশি দেশের পুরুষ ফুটবল দলও ভালো খেলছে। সামনে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ বাছাই রয়েছে। দুই জাতীয় দলে সভাপতির সামগ্রিক মূল্যায়ন, ‘নারী দল অসাধারণ করেছে। এজন্য খেলোয়াড় ও মহিলা উইংকে ধন্যবাদ। সিনিয়র সাফ, জুনিয়র দুই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়া এখন বাংলাদেশ সেরা প্রমাণিত। পুরুষ ফুটবলও ভালো করছে। খেলোয়াড়রা অর্থ পাচ্ছে, নিয়মিত লিগ হচ্ছে। আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কখনোই সেই পর্যায়ে ছিলাম না। ভালো খেলছে, তবে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে যেতে সময় লাগবে। সেটা কঠিন, তবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে আমাদের।’

কিছুদিন আগে হামজা চৌধুরি বাংলাদেশের হয়ে খেলছেন এমন বিষয়টি চাউর হয়েছিল। যদিও আনুষ্ঠানিকতা প্রায় সবই বাকি। সভাপতি দীর্ঘদিন পর ফেডারেশনে আসায় হামজা চৌধুরি নিয়েও প্রশ্ন হয়েছে। এই ব্যাপারে সালাউদ্দিন খুব বাস্তবিক উত্তর দিয়েছেন, ‘হামজা ও তার ক্লাবের আগ্রহ সবার আগে। হামজা খেলতে চাইলে ক্লাবের ক্লিয়ারেন্স লাগবে। দুই পক্ষ আগ্রহী হলে এরপর অনেক ফ্যাক্টর রয়েছে। তাদের কি চাহিদা– এটাসহ আরও নানা বিষয়। আমাদের অফিস যোগাযোগ করছে।’

সামাজিক মাধ্যমে সালাউদ্দিনের অনেক মন্তব্য আংশিকভাবে অনেক ক্ষেত্রে বিকৃতভাবে প্রচার হয়। হামজাকে বাংলাদেশ দলে খেলতে হলে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে সালাউদ্দিনকে উদ্ধৃত করে এমন মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে দেখা যায়। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনার শেষ অংশে এই বিষয়টি উত্থাপন করা হলে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমাকে দেখে কি পাগল মনে হয়। আমি ফুটবল খেলেছি। ফুটবলের সাথে অনেকদিন। হামজা বাংলাদেশ খেলতে হলে প্রমাণ করতে হবে এ কথা যদি কেউ বলে, সেটা পাগলের মতোই।’

এজেড/এএইচএস