ফুটবল দল নির্বাচন ও অনুশীলনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব কোচের। কোচকে সহায়তা করেন সহকারী কোচিং স্টাফরা। কোচিং স্টাফ ও খেলোয়াড়দের সহায়তার জন্য থাকেন টিম অ্যাটেনডেন্ট। দলের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলার দিকটি দেখেন ম্যানেজার। এই কাঠামোর বাইরে দলনেতা/পর্যবেক্ষকের দৃশ্যত কোনো ভূমিকা নেই। এরপরও জাতীয় পুরুষ ও নারী ফুটবল দলের সঙ্গে প্রায়ই দেখা যায় দলনেতা/পর্যবেক্ষক পদ। 

সম্প্রতি বাংলাদেশ ফুটবল দল বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে সৌদি ও কুয়েত সফর করেছে। সেই সফরে দলনেতা হিসেবে ছিলেন বাফুফের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমানে জাতীয় দল কমিটির অন্যতম সদস্য শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর। সৌদি ফুটবল ফেডারেশন বাংলাদেশ দলের আবাসান ও অন্য ব্যয় বহন করেছে। তবে ঢাকা-সৌদি, সৌদি-কুয়েত ও কুয়েত-ঢাকা যাতায়াত এবং কুয়েতে দলনেতার আবাসন ব্যয় বহন করতে হয়েছে বাফুফেকেই।

দেশের বাইরে দলনেতা/পর্যবেক্ষক প্রেরণে বাফুফের আর্থিক ব্যয় হয়। কাজী সালাউদ্দিনের চতুর্থ মেয়াদের এই চার বছরে সিনিয়র, বয়সভিত্তিক মিলিয়ে পাঁচজন দলনেতা/পর্যবেক্ষক হিসেবে বিদেশ সফর করেছেন। তন্মেধ্যে কয়েকজন গিয়েছেন একাধিকবারও। দলনেতা/পর্যবেক্ষকের পেছনে গত কয়েক বছরে বাফুফের ব্যয় হয়েছে বেশ কয়েক লাখ টাকা। 

বাফুফের শীর্ষ কর্তারা আর্থিক সীমাবদ্ধতার কথা বলেন প্রায়শই। বিদেশে দলের সঙ্গে দলনেতা প্রেরণ অনেকটা আর্থিক অপব্যয়ই। এই অপব্যয় সম্পর্কে বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা প্রায় সকল কর্মকাণ্ডই চালিয়ে যাচ্ছি। কিছু বিষয়ে আমাদের অবশ্যই কৃচ্ছ্রতা অনুসরণ ও সংস্কৃতির পরিবর্তন প্রয়োজন।’ কৃচ্ছ্রতার কথা বলা হলেও কখনও কাউন্সিলর ও কমিটির সদস্যদের সন্তুষ্ট রাখতে এমন পদ দিয়ে বিদেশে প্রেরণ করা হয়। আবার অনেক সময় এজন্য চলে জোর তদবিরও।

সাফের বয়সভিত্তিক আসরে ২৩ জন খেলোয়াড় ও সাতজন কোচ-কর্মকর্তার ব্যয় বহন করে সাফ। এএফসিতে খেলোয়াড় সংখ্যা সমান হলেও কোচ-কর্মকর্তার কোটা একজন বেশি। কন্টিনজেন্ট–এর বেশি হলে স্ব স্ব ফেডারেশনকে ব্যয় বহন করতে হয়। দলনেতা/পর্যবেক্ষকের যাতায়াত ব্যয়ের পাশাপাশি অন্যান্য ব্যয়ও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাফুফেকেই বহন করতে হয়। পুরুষ দলের ক্ষেত্রে এই ব্যয় ফেডারেশনকে বহন করলেও, নারী দলে দলনেতা নিজেরাই বহন করেন। তবে দলনেতার নাম থাকলেও তারা দলের সঙ্গে ছিলেন না অনেক ক্ষেত্রে।

আন্তর্জাতিক ম্যাচ/টুর্নামেন্টের ডাগআউটে ব্যক্তিবর্গের সংখ্যা আগেই নির্ধারিত থাকে। কোচিং স্টাফের সদস্য অনেক সময় বেশি থাকলে দলনেতা ডাগআউটে থাকতে পারেন না। গত পরশু (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত কুয়েতের ম্যাচেও দলনেতা ছিলেন গ্যালারিতে। সাফ-এএফসি’র অনেক টুর্নামেন্টেই দলনেতাকে বাইরে থাকতে দেখা যায়। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে সাধারণত গেমসে দলনেতার প্রচলন রয়েছে। গেমসে অনেক ডিসিপ্লিনের অনেক খেলোয়াড়, কোচ ও কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করে। একজন দলনেতা (শেফ দ্য মিশন) সকল ডিসিপ্লিনের মধ্যে সমন্বয় ও শৃঙ্খলা পর্যবেক্ষণ করেন।

গেমসের পাশাপাশি দলনেতার সংস্কৃতি অবশ্য বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন নয়। ১৯৭৩ সালে মালয়েশিয়ায় মারদেকা কাপে বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার ছিলেন কালু আর দলনেতা সালাহউদ্দিন ইউসুফ। এরপর থেকে কিছু সময় দলনেতা আবার কিছু সময় পর্যবেক্ষক পদে অনেকেই দলের সঙ্গে গিয়েছেন। হাল আমলেও এই বিষয়টি ফিরে ফিরে আসে প্রায়ই। 

সাম্প্রতিক কয়েক বছরে দেশের বাইরে দলনেতা/পর্যবেক্ষক

প্রতিযোগিতা ভেন্যু দলনেতা/পর্যবেক্ষক
বিশ্বকাপ বাছাই কাতার ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ
ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট নেপাল ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ
ফিফা প্রীতি ম্যাচ মালদ্বীপ আমের খান
ফিফা প্রীতি ম্যাচ ইন্দোনেশিয়া  মহিদুর রহমান মিরাজ
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ভারত শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর
বিশ্বকাপ বাছাই কুয়েত শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর
এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ থাইল্যান্ড ইলিয়াস হোসেন

এজেড/এএইচএস