ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের বাড়িয়ে দেওয়া বল গোলবারের এক কোনায় আলতো ছোঁয়া দিলেন এন্ড্রিক। ওয়েম্বলিতে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রাজিলকে বহুল আকাঙ্ক্ষিত জয় এনে দিতে যথেষ্ট হলো এই এক গোলই। বছর দুয়েক আগেই রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখানো বিস্ময় বালক এন্ড্রিককে নিয়ে চারদিকে প্রশংসার জোয়ার বইছে। 

ম্যাচজয়ী গোলটি করার সময় একাধিক রেকর্ডও গড়েছেন এই ‘বিষ্ময় বালক’। তার বয়স ছিল ১৭ বছর ২৪৬ দিন। ১৯৯৪ সালে ‘দ্য ফেনোমেনন’–খ্যাত রোনালদো নাজারিওর পর ব্রাজিলের হয়ে সবচেয়ে কম বয়সী গোলদাতাও এখন এন্ড্রিক। 

পাঁচবারের বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল বিশ্বজুড়ে ফুটবল শৈলীর সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। একই সঙ্গে তারকা ফুটবলার তৈরির কারখানাও ধরা হয় লাতিন দেশটিকে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ব ফুটবলে সেলেসাওদের নতুন প্রতিভা তরুণ এনড্রিক। এ পর্যন্ত ব্রাজিলকে আলোকিত করা পাঁচ তরুণের কথা তুলে ধরা হলো এ প্রতিবেদনে। 

পেলে

প্রয়াত ফুটবল সম্রাট পেলে মাত্র ১৬ বছর ৮ মাস ১৪ দিন বয়সে আন্তর্জাতিক পরিসরে গোল করে এখনও ব্রাজিলের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হিসেবে নিজেকে ধরে রেখেছেন। দেশের হয়ে করেছিলেন ৭৭টি গোল। সেলেসাও জার্সিতে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার এখনো বিশ্ব ফুটবলে অন্যতম এক কীর্তি হয়ে আছে। ১৭ বছর বয়সে ১৯৫৮ সালে সুইডেনে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় জুলে রিমে ট্রফি জেতার কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। 

রোনালদো

১৯৯৪ সালে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে অভিষেক হয় রোনালদোর। ১৭ বছর ৭ মাস ১২ দিন বয়সে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে গোল করে দেশের তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে স্কোরশিটে নাম লেখান। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে হতাশাজনক পরাজয়ের ম্যাচটিতে ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে আকস্মিক অসুস্থতায় তিনি খেলতে পারেননি। চার বছর পর দক্ষিণ কোরিয়া/জাপান বিশ্বকাপে জার্মানির বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে রোনালদোর দুই গোলে ব্রাজিলের ২-০ গোলের জয় নিশ্চিত হয়। সারা বিশ্বে তখন রোনালদো বন্দনা ছড়িয়ে পড়ে। ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ব্রাজিলের হয় ৯৯ ম্যাচে ৬২ গোল করেছেন।

নেইমার

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১২৮ ম্যাচে ৭৯ গোল করে ব্রাজিলের হয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়েছেন নেইমার। যদিও এখনো বিশ্বকাপ শিরোপা স্পর্শ করতে পারেননি আধুনিক বিশ্বের অন্যতম সেরা এই ফুটবল তারকা। ১৮ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিষিক্ত হওয়ার পর থেকেই মাঠ ও মাঠের বাইরের নানা ঘটনায় আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। 

আলেক্সান্দ্রে পাতো

বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম দেশটির ফুটবলীয় প্রত্যাশার চাপ অনেক সময়ই তরুণদের জন্য বহন কঠিন হয়ে পড়ে। এর অন্যতম উদাহরণ উদীয়মান আলেক্সান্দ্রে পাতো। ২০০৮ সালে সুইডেনের বিপক্ষে বদলি বেঞ্চ থেকে ওঠে এসে ১৮ বছর বয়সী অভিষিক্ত পাতো যখন জয়সূচক গোলটি করেছিলেন তখন অনেকেই তাকে ৫০ বছর আগে বিশ্বকাপ জয়ে ব্রাজিলকে নেতৃত্ব দেওয়া পেলের সঙ্গে তার তুলনা করার সাহস দেখিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই সেন্টার ফরোয়ার্ড আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। দেশের হয়ে মাত্র ২৭ ম্যাচ খেলা পাতো ২৪ বছর বয়সে ২০১৩ সালে সর্বশেষ জাতীয় দলে খেলেছেন। এরপর ফর্মহীনতায় আর দলে আসতে পারেননি।

এনড্রিক

ব্রাজিল দলে নতুন সংযোজন এনড্রিক। ওয়েম্বলিতে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়সূচক একমাত্র গোলটি করে নিজের জাত চিনিয়েছেন। আন্তর্জাতিক পরিসরে এটা এনড্রিকের তৃতীয় ম্যাচ। মাত্র ১৭ বছর ৮ মাস ২ দিন বয়সী এনড্রিক এই মাঠে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে কোন ক্লাব বা দেশের হয়ে গোলের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। বদলি বেঞ্চ থেকে ওঠে আসার নয় মিনিটের মধ্যে তিনি সেলেসাওদের গোল উপহার দেন। 

‘বিষ্ময় বালক’ এন্ড্রিক চলতি মৌসুম শেষ করেই যোগ দেবেন রিয়াল মাদ্রিদে। আরও দুই বছর আগেই তাকে কিনে রেখেছে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের শ্রেষ্ঠ দলটি। রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের জহুরির চোখ কেন এন্ড্রিককে কিনে রেখেছে, সেটার প্রমাণ পাওয়া গেল গত শনিবার।