সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও কোচ সাইফুল বারী টিটু বাফুফের পরবর্তী টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন। আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে অনুষ্ঠিত বাফুফের টেকনিক্যাল কমিটির সভায় সাইফুল বারী টিটুকে এক বছরের জন্য ওই পদে নিয়োগের সুপারিশের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে নতুন পদে কাজ শুরু করবেন তিনি।

বাফুফেতে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পদ আনুষ্ঠানিক সৃষ্টি হয়েছে কাজী সালাউদ্দিন ২০০৮ সালে সভাপতি হওয়ার পর। ২০০৯ সালে দেশের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক শহিদুর রহমান চৌধুরী সান্টু টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দিতে আসেন সুদূর আমেরিকা থেকে। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেও দেড় বছরের বেশি থাকেননি তিনি। সান্টুর বিদায়ের পর কিছুদিন বায়েজিদ জোবায়ের আলম নিপু এই পদে কয়েক বছর ছিলেন। ২০১৬ সালে এসেছিলেন ব্রিটিশ পল স্মলি। তিনি ২০২০ সালে চলে গেলেও আবার তাকে ফিরিয়ে আনে ফেডারেশন। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি তিনি আবার চলে যাওয়ার পর পদটি খালি ছিল কয়েকমাস। এবার সেই পদে আসীন হচ্ছেন টিটু। 

সাইফুল বারী টিটু টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হচ্ছেন– এমন ক্ষেত্র বাফুফে সাজিয়েই রেখেছিল। শুধু বাকি ছিল আনুষ্ঠানিকতা। আজ সেই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। লোক দেখানো তিনদিনের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল ওই পদের জন্য। সেখানে বাংলাদেশিদের প্রাধান্য উল্লেখও ছিল। দেশের দুই শীর্ষ কোচ মারুফুল হক ও জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু আবেদন করেননি। আবেদন করেছিলেন শুধু সাইফুল বারী টিটু। আজ টেকনিক্যাল কমিটির সভায় এক পর্যায়ে টিটু এসেছিলেনও। সেখানে মূলত আলোচনা হয়েছে সম্মানী নিয়ে। শেষ পর্যন্ত ৪ লাখ টাকা মাসিক সম্মানী দফারফা হয়েছে।

সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও কোচ সাইফুল বারী টিটু গত দেড় মৌসুম শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবল থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। গত বছর ছোটন ও পল স্মলি চলে যাওয়ার পর তিনি নারী ফুটবল দলের ভারপ্রাপ্ত কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন। এরপর থেকেই মূলত বাফুফে সভাপতি ও একজন প্রভাবশালী সদস্যের গুডবুকে দেশের এই শীর্ষ কোচ। এর ফলশ্রুতিতে এএফসি প্রো লাইসেন্সে একটি পর্বে অংশগ্রহণ না করে ফেইল করার পরও পাশের সনদ পেয়েছেন। কয়েক মাস নারী দলে কাজ করার পর এখন টেকনিক্যাল ডিরেক্টরও হচ্ছেন টিটু। 

বাফুফের সাবেক ব্রিটিশ টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি এশিয়ার সর্বোচ্চ কোচিং সনদ প্রো লাইসেন্স কোর্স করাতে পারতেন। টিটুর পক্ষে এটি করানো সম্ভব নয়। এরপরও টিটুকে নিয়োগ দেওয়ার কারণ সম্পর্কে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষারের যুক্তি, ‘আমরা এক বছরের জন্য তাকে দায়িত্ব দিচ্ছি। এর মধ্যে প্রো লাইসেন্স কোর্স আমরা আয়োজন করব না। তিনি এ লাইসেন্স কোর্স সম্পাদন করতে পারবেন।’

টেকনিক্যাল ডিরেক্টর মূলত টেকনিক্যাল কমিটির অধীনে। পল স্মলি অবশ্য এই কমিটির ধার ধারতেন না। সরাসরি ফেডারেশন সভাপতির সঙ্গেই সব বিষয় আলোচনা করতেন। টিটুর ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা থাকছে কমিটির হাতেই। ‘টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে তার কাজের পরিধি অনেক বিস্তৃত। তার জবাবদিহিতা টেকনিক্যাল কমিটির কাছেই’, বলেন কমিটির চেয়ারম্যান ও বাফুফের অন্যতম সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মহী।

আবাহনীর সাবেক ক্রোয়েশিয়ান কোচ দ্রাগো মামিচ, বিকেএসপির সাবেক টেকনিক্যাল ডিরেক্টর রেপার, ব্রাদার্সের সাবেক কোচ রেজা পার্কাসসহ আরও সাতজন বিদেশি আবেদন করেছিলেন ওই পদে। অধিক যোগ্যতর বিদেশি থাকলেও তড়িঘড়ি করে দেশি একজনকে বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যানের ব্যাখ্যা, ‘বিজ্ঞপ্তির মেয়াদের ব্যাপারে আমাদের কোনো বাধাধরা নিয়ম নেই। ফিফার একটা নির্দেশনা রয়েছে দেশিদের মধ্যে থেকেই একজনকে এই পদে দেওয়ার ব্যাপারে। আমরা তাই দেশিকে প্রাধান্য দিয়েছি।’ ফুটবল ফেডারেশনের ঢাল ফিফা-এএফসি। প্রায়ই নানা স্বার্থে এই দুই সংস্থার রেফারেন্স টানতে দেখা যায় ফেডারেশন কর্তাদের।

বাফুফের নীতি ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হয়। এলিট একাডেমিতে দেশের একজন শীর্ষ কোচ আবেদন করেছিলেন। সেখানে ব্রিটিশ একজনকে নিয়োগ দেয় ফেডারেশন। তিন মাস পরই সেই ব্রিটিশ কোচকে এখন একাডেমি থেকে সরিয়ে নারী দলে এবং নারী দলে কাজ করা টিটুকে টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের পাশাপাশি একাডেমির দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। কোচিং পর্যায়ে এত রদবদল পুরোটাই হয়েছে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের ইচ্ছাতেই। টেকনিক্যাল কমিটি আজকের সভায় সভাপতির ইচ্ছাকেই আনুষ্ঠানিক রূপদান করেছেন। এবার ন্যূনতম আনুষ্ঠানিকতার্থে সভা হয়েছে। অনেক সময় অনেক সিদ্ধান্ত হয়েছে সভা ছাড়াই।

বাফুফের অন্যতম সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক ডেভলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান। একাডেমির কোচের এই রদবদলে তিনি খানিকটা নাখোশ শোনা গেলেও কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি। কোচদের রদবদল নিয়ে মহিলা কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘পল স্মলি নারী দলের কোচ ছিল। পরে যখন একাডেমি হয়েছে, সেখানে কাজ করেছে সে। আসলে এখানে কাউকে ছেড়ে দেওয়া বা নিয়ে নেওয়া হয়। সবাই ফেডারেশনের, ফেডারেশনের স্বার্থে বা প্রয়োজনে যে কেউ যেখানে কাজ করতে পারে।’

এজেড/এএইচএস