আগামী জুন–জুলাই মাস হতে যাচ্ছে ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম সময়। একদিকে চলবে কোপা আমেরিকার আসর, অন্যদিকে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। এবারের ইউরোর আসর আয়োজন করবে জার্মানি। তার আগে দেশটির একটি জার্সি নম্বর নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে জার্সিতে ব্যবহৃত ‘৪৪’ নম্বরের ফন্টের সঙ্গে মিল রয়েছে অ্যাডলফ হিটলারের কুখ্যাত নাৎসি বাহিনীর একটি প্রতীকের!

বিতর্ক শুরুর পরপরই জার্সি বয়কটের ঘোষণা করেছেন জার্মান ভক্তরা। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করছে জার্মানির কিটস স্পন্সর প্রতিষ্ঠান অ্যাডিডাস। বিতর্কের মুখে তারা ৪৪ নম্বর জার্সিটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সাময়িকভাবে এই জার্সিটি আর বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও বিতর্কটি উঠেছে আরও বেশ কয়েকদিন আগে। গত মাসে ফ্রান্সের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলেছিল জার্মানি, এরপর শুরু হয় জার্সি বিতর্ক। 

পরবর্তীতে গত সোমবার জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ডিএফবি) জানিয়েছে, জাতীয় দলের জার্সিতে ব্যবহৃত ৪৪ নম্বর ডিজাইনের সঙ্গে নাৎসি বাহিনীর প্রতীক ‘SS’–এর মিল রয়েছে বলে আলোচনা শুরুর পর, সেটি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে ডিএফবি জানায়, ‘ডিএফবি ০–৯ পর্যন্ত সংখ্যাগুলো যাছাই করে ১–২৬ নম্বর পর্যন্ত সংখ্যাগুলো উয়েফার পর্যালোচনার জন্য জমা দিয়েছিল। যেখানে কোনো পক্ষই নাৎসি প্রতীকের সঙ্গে জার্সির ডিজাইনে ব্যবহৃত কোনো সংখ্যার মিল রয়েছে বলে জানায়নি।’

তারা আরও জানায়, ‘আমরা মানুষের নেতিবাচক মন্তব্য খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছি এবং কোনোভাবে আর বিষয়টি আলোচনায় জায়গা করে নিক, সেই সুযোগ দেব না। আমরা ‘৪’ নম্বর সংখ্যার বিকল্প ডিজাইন তৈরি ও সেটি উয়েফার সঙ্গে সমন্বয় করব।’ এমনকি ডিএফবির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ অ্যাডিডাসও ইতোমধ্যে বানানো বিতর্কিত ডিজাইনের জার্সিগুলো সরিয়ে নিয়েছে।

জার্মান ভক্তদের মতে, ৪৪ নম্বর জার্সিটি নাৎসিবাহিনীর শুটজস্টাফেল গ্রুপের ব্যবহৃত স্টাইলাইজড ‘এসএস’-এর সঙ্গে মিল রয়েছে। এই গ্রুপটি হিটলারের একটি আধাসামরিক বাহিনী ছিল। যারা ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময়ে গণহত্যা চালিয়েছিল ইউরোপজুড়ে। বিশেষ জার্সিটি নিয়ে অ্যাডিডাসের মুখপাত্র অলিভার ব্রুগেন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘নির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এটি তৈরি করা হয়নি। তবে এটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, সেটি আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। আমরা জার্সিটি সরিয়ে নিচ্ছি এবং এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করব।’

জার্মানির বিতর্কিত জার্সি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ মাইকেল কোনিগও। তার ভাষায়, ‘এটা খুব সন্দেহজনক। এর পেছনে কিছু বিশেষ উদ্দেশ্য থাকতে পারে।’ শুধু নম্বর নয়, জার্সির রঙ নিয়েও আপত্তি তুলেছেন কেউ কেউ। তাদের দাবি, জার্সিতে গোলাপি রঙের ব্যবহার জার্মানির সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্যের সঙ্গে সাংঘার্ষিক।

কেবল জার্মানিই নয়, এর আগে জার্সি নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছিল ইংল্যান্ডও। কিছুদিন আগে ইংলিশরা যে জার্সি উন্মোচন করেছিল সেটির কলারের পেছনে সেন্ট জর্জের ক্রস পরিবর্তন করা হয়। যেটি ভালোভাবে নেননি সমর্থকরা। সেই বিতর্ককে পেছনে ফেলে আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছে জার্মানি। অ্যাডিডাসের মুখপাত্র অলিভার ব্রুগেন নাৎসি প্রতীকের সঙ্গে মিল করে নম্বরের ডিজাইন ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে বলে অস্বীকার করেন, এই ডিজাইনের জন্য ফেডারেশন এবং ১১টিমস্পোর্টসই দায়ী। তিনি বলেন, ‘অ্যাডিডাসে প্রায় ১০০টিরও বেশি দেশের মানুষ কাজ করে। একটি কোম্পানি হিসেবে আমরা বৈচিত্র্যতায় বিশ্বাস করি। আমরা জেনোফোবিয়া, ইহুদি বিদ্বেষ, সহিংসতা এবং ঘৃণার বিরোধীতা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা জার্সি কাস্টমাইজ করা নিষিদ্ধ করব।’

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৪ জুন থেকে শুরু হবে ২০২৪ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ। আয়োজক জার্মানিসহ ২৪টি দেশ মহাদেশীয় এই শ্রেষ্ঠত্বের আসরে লড়বে। উদ্বোধনী ম্যাচে স্বাগতিকরা মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ডের। জার্মানির এবারের ইউরো আয়োজনের প্রায় পুরোটাই নির্ভর করছে ১৮ বছর আগের স্থাপনার ওপর। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনে যুক্ত ৯ শহরই থাকছে এবারের ইউরোতে।

এএইচএস