নানা প্রতীক্ষার পর নারী ফুটবল লিগ আগামীকাল থেকে মাঠে গড়াচ্ছে। লিগ শুরুর আগের দিন বাফুফে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেছে। সেই সম্মেলনে তাপদাহ ও স্পন্সরশীপ বিষয় এসেছে বারবার। 

দেশ জুড়ে চলছে তীব্র তাপদাহ। আবহাওয়া অধিদপ্তর হিট ওয়েভ জারি করেছে। কমলাপুর স্টেডিয়ামের টার্ফে গরম আরো বেশি অনুভূত হয়। এই অবস্থায় বাফুফে সকাল সাড়ে নয়টা ও বিকেল পৌনে চারটায় নারী ফুটবল লিগের ম্যাচ রেখেছে। ফলে সাবিনাদের খানিকটা ঝুঁকি নিয়েই খেলতে হবে। 

কমলাপুর স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইট রয়েছে। ফ্লাডলাইট থাকা সত্ত্বেও রোদের মধ্যে লিগ কেন এই প্রশ্নের উত্তরে বাফুফে নির্বাহী সদস্য ও নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন, 'ফ্লাডলাইটে খেলা চালাতে হলে বিদ্যুৎ বিল দিতে হবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে। আমাদের টাকা নেই। খুব কষ্ট করে আমরা স্পন্সর এনে খেলা আয়োজন করি।'

ফুটবলের প্রধান ভেন্যু বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বাফুফে কখনো বিদ্যুৎ বিল দেয়নি। স্টেডিয়ামের মালিক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদই ফ্লাডলাইটের বিল দিয়েছে। কমলাপুর স্টেডিয়ামেও একই সিস্টেম ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নিয়মের পরিবর্তন এনেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে বলেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার, 'জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আমাদের চিঠি দিয়েছে ফ্লাডলাইট ব্যবহার করলে মিটার রিডিং অনুযায়ী বিল প্রদান করতে হবে। আমরা সেই নির্দেশনার আলোকে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের শেষ রাউন্ডের খেলা চালিয়েছি। এতে প্রতিদিন প্রায় ১৩ হাজার টাকা লাগে।'

সাধারণ সম্পাদকের আনুমানিক হিসাব নারী ফুটবলে প্রতিস্থাপন করলে খুব বেশি ব্যয় হয় না। নারী ফুটবল লিগে মোট ৩৬ ম্যাচ। প্রতি দিন দুটো করে ম্যাচ। সেই হিসেবে ১৮ দিনে গড়ে ফ্লাডলাইট বিল ১৫ হাজার করে আসলেও তিন লাখের বেশি হয় না। 

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধীনস্থ বিভিন্ন ফেডারেশনের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। নতুন করে বিদ্যুৎ বিলের বোঝা আর নিতে চায় না ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান। তাই সম্প্রতি কমলাপুর স্টেডিয়ামের ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সুকুমার সাহা, 'সম্প্রতি আমাদের কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমলাপুর স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইট ব্যবহারে ফেডারেশনকে ব্যয় বহন করতে হবে মিটার অনুযায়ী।’ হকি সহ অন্য ফেডারেশনগুলোতেও এই নিয়ম পালনের নির্দেশনা আসবে সামনে। ক্রিকেট বোর্ড অবশ্য বিল নিজেরাই প্রদান করে।

নারী ফুটবল লিগে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস এবারের লিগে অংশগ্রহণ করছে না। বাফুফের নারী ফুটবলের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক বসুন্ধরা। দল না গঠনের পাশাপাশি লিগের পৃষ্ঠপোষকতা থেকেও সরে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর কারণ জানেন না মাহফুজা আক্তার কিরণ, 'আমরা বসুন্ধরা স্পন্সর ধরে ব্যানার ও নানা বোর্ড তৈরি করেছি। দুই দিন আগে তারা জানিয়েছে অনিবার্যকারণে পৃষ্ঠপোষকতা করবে না।’

বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে বাফুফের চুক্তি রয়েছে। সেই চুক্তিতে কোন বিষয় আওতাধীন এমন প্রশ্নের উত্তরে কিরণ বলেন, 'এতে লিগ ও জাতীয় দলের বিষয় রয়েছে। চুক্তিতে থাকায় তাই ফেডারেশনকে তাদেরকে চিঠি দেয়া হয়েছে।' নারী ফুটবলাররা সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বসুন্ধরা কিংসের কাছে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করে। এজন্য কিংস নারী দল গঠনে দূরে সরে আসে। হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন দলটি নারী উইংয়ের কিছু কর্মকান্ডেও নাখোশ ছিল। লিগের পৃষ্ঠপোষকতা থেকে সরে যাওয়া সেটারই বহিঃপ্রকাশ বলে ধারণা ফুটবল সংশ্লিষ্টদের।

এবারের নারী লিগে বাফুফে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পেয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংককে। এই লিগের জন্য দুই পক্ষের মধ্যে কত টাকার চুক্তি সেটা প্রকাশ করেনি কোনো পক্ষই। লিগে অংশগ্রহণকারী নয় ক্লাব ৫০ হাজার টাকা, চ্যাম্পিয়ন দল ৫ ও রানার্স আপ ৩ লাখ এবং সেরা খেলোয়াড়ের আর্থিক পুরস্কার থাকবে।

আসন্ন লিগে সবচেয়ে তারকাখচিত দল নাসরিন স্পোর্টস একাডেমী। দলটির অধিনায়ক সাবিনা খাতুন শিরোপা প্রত্যাশা করলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লিগের কথাই বললেন, 'আমরা অবশ্যই শিরোপার জন্য খেলব। তবে আতাউর রহমানে জাতীয় দলের কয়েকজন, আর্মি দলে বয়স ভিত্তিক দলের অনেকে রয়েছে। এবারের লিগটি ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণই হবে।' আতাউর রহমান ভূইয়া কলেজ স্পোর্টিং ক্লাবের অধিনায়ক তহুরা খাতুন নিজেদের সেরাটাই দিতে চান, 'আমরা নিজেদের স্বাভাবিক খেলা খেলে ভালো কিছু করতে চাই।'

জাতীয় ও বয়স ভিত্তিক নারী দলে দীর্ঘদিন কাজ করা গোলাম রব্বানী ছোটন এবার প্রথমবারের মতো লিগে কোচিং করাবেন। বাংলাদেশ আর্মি স্পোর্টিং ক্লাব উদীয়মানদের দল হলেও ছোটন কোচ থাকায় সবাই চমকের প্রত্যাশায় রয়েছেন। নয় দলের লিগে একমাত্র প্রতিষ্ঠিত ক্লাব পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জ। অন্য দলগুলো হলো- সিরাজ স্মৃতি সংঘ, উত্তরা ফুটবল ক্লাব, জামালপুর কাচারীপাড়া একাদশ, ঢাকা রেঞ্জার্স ও সদ্যপুষ্করণী।

এজেড/এইচজেএস