ফায়ার অ্যান্ড আইস। ইউরোপজুড়ে একটা সময় ত্রাসের রাজত্বই কায়েম করেছিল স্পেন, জিতেছিল ইউরো-বিশ্বকাপ-ইউরোর স্যান্ডউইচ। কিন্তু এরপরই যেন দলটা খেই হারাল। ২০১৪ বিশ্বকাপ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো টুর্নামেন্টের শেষ ষোল পেরোনোর নজির নেই। আরেকটা ইউরো চলে এসেছে। এবার তাই দলটার লড়াই আবারও নিজেদের জাত চেনানোর।
তবে আর সব গ্রুপের মতো স্পেনের গ্রুপও বেশ শক্তপোক্ত। সঙ্গী হিসেবে পেয়েছে পোল্যান্ড, সুইডেন ও স্লোভাকিয়ার মতো ডার্ক হর্সদের। কোচ লুইস এনরিকের দলকে শেষ ষোলয় জায়গা করে নিতে হলে তাই বেশ কাঠখড় পোড়াতে হবে বৈকি!

স্পেন
রিয়াল মাদ্রিদ দলের কেউ নেই স্কোয়াডে, বার্সেলোনা থেকে অধিনায়ক সার্জিও বুসকেটস আছেন, তবে তিনি ছাড়া কাতালান দলটি থেকে খেলোয়াড়ের উপস্থিতি কম দলটায়। আপাতদৃষ্টিতে দল দেখে মনে হচ্ছে কোচ লুইস এনরিকে দলটাকে বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখেই সাজাতে চাইছেন, দেড় বছর পর বিশ্বকাপ পর্যন্ত যাদের পাওয়া সম্ভব, তাদেরই ডাক পড়েছে দলে। তাই নাচো ফের্নান্দেজ, সার্জিও রামোসদের জায়গা হয়নি। যে কারণে লুইস এনরিকের জন্য টুর্নামেন্টটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বেশ চ্যালেঞ্জের, ব্যর্থ হলেই যে পড়তে হবে তোপের মুখে! 

এক নজরে
সূচি- প্রতিপক্ষ সুইডেন, ১৪ জুন; প্রতিপক্ষ পোল্যান্ড, ১৯ জুন; প্রতিপক্ষ স্লোভাকিয়া, ২৩ জুন।
যেভাবে ইউরোয়-এফ গ্রুপের শ্রেষ্ঠত্ব বাগিয়ে নিয়েই ‘লা ফিউরিয়া রোহা’রা এসেছে ইউরোর মূল পর্বে।
শেষ ইউরোতে- শেষ ষোলো।
সেরা সাফল্য- চ্যাম্পিয়ন (১৯৬৪, ২০০৮, ২০১২)।
ফিফা র‍্যাঙ্কিং-৬
কোচ- লুইস এনরিকে।

নজর রাখবেন যার ওপর- জেরার্ড মোরেনো। ভিয়ারিয়ালের হয়ে সদ্যসমাপ্ত মৌসুমে ৩০ গোল করেছেন তিনি। এমন পরিসংখ্যান যার, তার ওপর নজর না রেখে পারাই যায় না।

শক্তি- মাঝমাঠ। জাভি, ইনিয়েস্তারা হয়তো নেই, তবু স্পেনের মাঝমাঠকে অগ্রাহ্য করার জো-টি নেই আপনার কাছে। থিয়াগো আলকান্তারা, রদ্রি হার্নান্দেজ, সার্জিও বুসকেটসদের মতো খেলোয়াড়রা যখন থাকবেন মাঝমাঠে, তখন বলের দখল ছেড়ে দিয়ে অন্য উপায়ই ভাবতে হবে আপনাকে। 

দুর্বলতা- রক্ষণে অভিজ্ঞতার অভাব। দুই সম্ভাব্য সেন্টারব্যাক আইমেরিক লাপোর্ত, আর পাউ তরেস বেশ ভালো মানের ডিফেন্ডার হলেও দুজনের ঝুলিতে আছে অভিজ্ঞতার বড় ধরণের অভাব। পাউ এখন পর্যন্ত জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলেছেন মাত্র ৭ ম্যাচ। লাপোর্তের এটাও নেই, কঠিন মুহূর্তে এ অভিজ্ঞতার অভাব বড় সমস্যা হয়েই দেখা দিতে পারে দলটির জন্য।

সম্ভাব্য একাদশ- 
৪-৩-৩ ছকে; 
ডি গিয়া; 
আলবা, লাপোর্তে, পাউ তরেস, লরেন্তে; 
কোকে, বুসকেটস, থিয়াগো; 
ওলমো, মোরেনো, এফ. তরেস।

পোল্যান্ড
পোল্যান্ড বললেই আপনার চোখে রবার্ট লেভান্ডভস্কির চেহারা ভেসে ওঠতে বাধ্য। তাদের ইউরো দলটাও তাই। তাতে ভর করেই এবার ইউরোয় এসেছে দলটি।

এক নজরে
সূচি: প্রতিপক্ষ স্লোভাকিয়া, ১৪ জুন; প্রতিপক্ষ স্পেন, ১৯ জুন; প্রতিপক্ষ সুইডেন, ২৩ জুন।
যেভাবে ইউরোয়- বাছাইপর্বের ‘জি’ গ্রুপ থেকে গ্রুপসেরা হয়ে এসেছে মূল পর্বে।
সবশেষ ইউরোয়- কোয়ার্টার ফাইনাল।
সেরা সাফল্য- কোয়ার্টার ফাইনাল (২০১৬)।
ফিফা র‍্যাঙ্কিং- ২১
কোচ- পাওলো সোসা

চোখ রাখবেন যার ওপর- নজর রাখবেন তো বটেই, পোল্যান্ডের একই সঙ্গে শক্তির জায়গা, আর দুর্বলতাও রবার্ট লেভান্ডভস্কি। গেল মৌসুমে ৪১ গোল করেছেন লিগে, চোটটা না পেলে হয়তো করতেন আরও। ভেঙেছেন জার্ড মুলারের ৪৯ বছরের পুরনো রেকর্ড। তার ওপর ভরসা না রেখে পারেন কোচ সোসা? 
তবে ভরসার পিঠে শঙ্কাও আছে। জাতীয় দলের জার্সিতে যে বরাবরই বেশ নিস্প্রভ লেভা, বিষয়টা বোধ হয় কিছুটা ভাবনাতেও রাখবে কোচকে।
সম্ভাব্য একাদশ-
৪-২-৩-১ ছকে; 
সেসনি, 
রাইবাস, বেডনারেক, গ্লিক, কেজিওরা, 
লিনেত্তি, ক্রিচোভিয়াক, 
জোজভিয়াক, ক্লিখ, সিমানস্কি, 
লেভান্ডভস্কি।

সুইডেন
জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ অবসর ভেঙে ফেরার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু তার ইউরোর পথে বাঁধ সেধেছে হাঁটুর চোট। তবে তাকে ছাড়াও বেশ অভিজ্ঞ এক দল নিয়েই মাঠে নামতে যাচ্ছে সুইডেন। সঙ্গে আছে তারুণ্যের মিশেল। সব মিলিয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যে সাফল্য সেটা এবার ইউরোতেও করে দেখানোর আশা দেখছে দলটি।

এক নজরে
সূচি- প্রতিপক্ষ স্পেন, ১৪ জুন; প্রতিপক্ষ স্লোভাকিয়া, ১৮ জুন; প্রতিপক্ষ পোল্যান্ড, ২৩ জুন।
যেভাবে ইউরোয়- স্পেনের গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় সেরা দল হয়ে মূল পর্বে এসেছে সুইডেন।
সবশেষ ইউরোয়- গ্রুপ পর্ব।
সেরা সাফল্য- সেমিফাইনাল (১৯৯২)।
ফিফা র‍্যাঙ্কিং- ১৮
কোচ- ইয়ান এন্ডারসন।

যার ওপর নজর থাকবে- এমিল ফর্সবার্গের ওপর গেল বিশ্বকাপেও টিকে ছিল সুইডেনের আশা, থাকবে এবারের ইউরোতেও। আরবি লাইপজিগের হয়ে ২৯ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার কয়েক বছর ধরে খেলছেন। দলকে একটা বড় সময় বুন্ডেসলিগা শিরোপার লড়াইয়ে রেখেছিলেন তিনিই। দারুণ সৃজনশীল এই মিডফিল্ডার এবার ইউরোতেও সুইডেনকে ধরে রাখতে পারেন একটা বড় সময় ধরে। 
শক্তি- বুড়োদের দল হলেও তারুণ্যের কমতি নেই দলটিতে। তরুণদের প্রতি আক্রমণের কৌশলকে আরও ভয়ঙ্কর করে তুলবে দলটির। দেয়ান কুলুসেভস্কি জুভেন্তাসে রোনালদোর সঙ্গে খেলেও আলাদা করে আলো কেড়ে নিয়েছেন গেল মৌসুমে। আরেক ফরোয়ার্ড জর্ডান লারসনও দলে বেশ গতি যোগ করবেন।
দুর্বলতা- দলের গড় বয়স। সুইডেন দলের ত্রিশোর্ধ্ব খেলোয়াড়দের সংখ্যা ১১ জন। যে কোনো সময় অবসাদ বড় শত্রু হয়ে দাঁড়াতে পারে তাদের।

সম্ভাব্য একাদশ- 
৪-৪-২ ছকে; 
ওলসেন; 
অগাস্টিনসন, ড্যানিলেয়সন, লিয়েন্ডেলফ, ক্রাফথ;
ফর্সবার্গ, একডাল, ওলসন, লারসন;
আইজাক, কুলুসেভস্কি।

স্লোভাকিয়া
গেল আসরটা যেন স্বপ্নের মতো কেটেছিল স্লোভাকিয়ার। রাশিয়ার বিপক্ষে দারুণ এক জয়, এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র করে চলে গিয়েছিল শেষ ষোলয়। সে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতেই এবার মাঠে নামছে স্লোভাকরা।

এক নজরে
সূচি- প্রতিপক্ষ পোল্যান্ড, ১৪ জুন; প্রতিপক্ষ সুইডেন, ১৮ জুন; প্রতিপক্ষ স্পেন, ২৩ জুন।
যেভাবে ইউরোয়- মূল পর্বে আসতে প্লে অফে খেলতে হয়েছিল স্লোভাকিয়াকে। সেখানে প্যাথ বি জিতে মূল পর্বে এসেছে দলটি।
শেষ ইউরোতে- শেষ ষোলো।
সেরা সাফল্য- শেষ ষোলো (২০১৬)।
ফিফা র‍্যাঙ্কিং- ৩৬
কোচ: স্তেফান তারকোভিচ

নজরে থাকবেন যিনি- দশ মৌসুম পর ইন্টার মিলান জিতেছে সিরি’আ শিরোপা। তার প্রধান কুশীলব ছিলেন মিলান স্ক্রিনিয়ার। এবার স্লোভাক-স্বপ্নযাত্রার নিউক্লিয়াসও হবেন তিনিই।

শক্তি: স্লোভাকিয়ার শক্তিমত্তা মাঝমাঠে। মারেক হ্যামসিকের নেতৃত্বে দারুণ সৃজনশীল মাঝমাঠ যদি আক্রমণে যথেষ্ট বলের যোগান দিতে পারে, তাহলে যে স্লোভাকিয়ার সাফল্যের পথটাও সহজ হয়ে যায় অনেকটাই!

দুর্বলতা: কোচ তারকোভিচকে ভাবনায় রাখতে পারে স্ট্রাইকারের অভাব। যে কারণে এখন দলকে খেলাতে হচ্ছে আক্রমণে একমাত্র স্ট্রাইকার দুরিসকে নিয়ে। মাঝমাঠ থেকে গোল না এলে বড় কিছু করা সম্ভব নয় দলটির জন্য।

সম্ভাব্য একাদশ-
৪-১-৪-১ ছকে;
দুব্রাভকা;
হুবোকান, স্ক্রিনিয়ার, সাৎকা, পেকারিক;
লোবোৎকা,
মাক, হামসিক, কুককা, দুদা,
দুরিস।

এনইউ