এবারের নারী ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ অনেক বেশি ঘটনাবহুল ছিল শিরোপাজয়ী ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক হান্নাহ হ্যাম্পটনের জন্য। তার কারণে একাদশে অনিয়মিত হয়ে পড়ায় দেশটির তারকা গোলরক্ষক ম্যারি ইয়ার্পস হঠাৎ–ই অবসরের ঘোষণা দেন। এরপর টুর্নামেন্টের দু’দিন আগে দাদির মৃত্যু এবং চোখে সার্জারির কারণে প্রতিকূল দৃষ্টিশক্তি নিয়েও ফাইনালে সেরা খেলোয়াড় হন হ্যাম্পটন। ইংল্যান্ডের আরেক ডিফেন্ডার লুসি ব্রোঞ্জ নাকি পুরো ইউরো খেলেছেন ভাঙা পা নিয়ে।

একাধিক ফুটবলারের এমন প্রতিকূলতা নিয়ে স্পেনের সঙ্গে দারুণ লড়াই করে টানা দ্বিতীয়বার ইউরো জিতেছে ইংলিশ মেয়েরা। সুইজারল্যান্ডের বাসেলে গত রোববার দিবাগত রাতে হয়েছে নারী ইউরোর ফাইনাল। যেখানে নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময়েও ম্যাচ ১-১ গোলে সমতায় ছিল। এরপর টাইব্রেকারে ৩-১ গোলে জেতে ইংলিশরা। দুটি শট ঠেকিয়ে শিরোপাজয়ী দলটির নায়ক বনে গেছেন হ্যাম্পটন।

শিরোপা জয়ের পরই প্রয়াত দাদিকে নিয়ে ইনস্টাগ্রামে আবেগঘন পোস্ট করেন ইউরোজয়ী গোলরক্ষক। যেখানে নিজের জার্সিতে ঘাড়ের অংশে ‘গ্র্যান্ডপা’ লেখা ছবি দিয়েছেন হ্যাম্পটন। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টের আগমুহূর্তে দাদিকে হারানোয় তিনি আবেগাপ্লুত। সেই অনুভূতি জানিয়েছেন নিজের পোস্টে। এ ছাড়া চোখের সার্জারি করে মাঠে ফিরলেও হ্যাম্পটনের দৃষ্টিজনিত প্রতিবন্ধকতা এখনও রয়েছে বলে উল্লেখ করেছে সংবাদ সংস্থা এপি। এমন প্রতিকূলতা নিয়েও ফাইনালে অসাধারণ সব সেইভ তো ছিলই, পাশাপাশি টাইব্রেকারেও তিন মারিয়ানা কালদেন্তি ও দুইবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী আইতানা বোনমাতির শট ঠেকিয়েছেন।

ইংলিশ গোলরক্ষক হান্নাহ হ্যাম্পটন ও ডিফেন্ডার লুসি ব্রোঞ্জ

জাতীয় দলে নিজের প্রথম মেজর টুর্নামেন্টেই শিরোপা জয়ের পর হ্যাম্পটন অনুভূতি জানান এভাবে, ‘১২০ মিনিট ধরে পুরো দল কঠোর পরিশ্রম করেছে। ফলে পেনাল্টি শ্যুট-আউটে দায়িত্বটা ছিল আমার কাঁধে। যার মাধ্যমে ম্যাচজুড়ে সতীর্থদের অসামান্য অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানানোর সুযোগ পাই। শেষ দিকে যখন ক্লো (কেলি) শট নিতে এগিয়ে যাচ্ছিল আমি তখন বিচ্যুত (মানসিকভাবে) হয়ে পড়ি। পরে যখন তার দৌড় ও উদযাপন করতে দেখি, তখন হুশ ফেরে। আমরা জিতে গেছি, আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না।’

পায়ের হাড়ে চিড় থাকা সত্ত্বেও পুরো টুর্নামেন্টে খেলেছেন আরেক ইংলিশ ডিফেন্ডার লুসি ব্রোঞ্জ। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই ৩৩ বছর বয়সী এই তারকা গোপন খবরটি প্রকাশ করলেন, ‘আমি ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার জন্য যেকোনো কিছু করতে রাজি। যা আমি সবসময়ই বলে আসছি। (ক্লাব ফুটবলের) মৌসুম শেষেই আমার অনেক ব্যথা অনুভব হতে থাকে। যা সকল ইংলিশ সতীর্থই জানত।’

ইংল্যান্ডের শিরোপা জয়ের অন্যতম নায়ক দলটির কোচ সারিনা ভাইগমান। এ নিয়ে টানা তিনটি শিরোপা জিতলেন তিনি। দুটি ইংল্যান্ডের হয়ে এবং অন্যটি ২০১৭ সালে নেদারল্যান্ডসের হয়ে। তিনি ব্রোঞ্জের ‘প্রেরণাদায়ী ও পাগলাটে মানসিকতা’র প্রশংসা করেছেন। গর্ববোধ করছেন পুরো দল নিয়ে, ‘আমরা যেকোনো উপায়ে জিততে পারি আগেই বলেছিলাম। সেটা আবারও প্রমাণ করেছি। আমি দল এবং স্টাফদের নিয়ে খুব গর্বিত। এটা অবিশ্বাস্য।’

এএইচএস