বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন ‘আলো’ জায়ান
এএফসি অ-২৩ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে বাংলাদেশের যাত্রা শুভ হয়নি। স্বাগতিক ভিয়েতনামের বিপক্ষে ২-০ গোলে হেরেছে। এক মাসের প্রস্তুতি ও একাধিক সিনিয়র জাতীয় দলের ফুটবলার থাকা সত্ত্বেও কালকের ম্যাচের পারফরম্যান্স ছিল হতাশার। এই হতাশার মধ্যেও আশার আলো হয়ে ফুটেছেন আমেরিকান প্রবাসী ফুটবলার জায়ান আহমেদ।
গতকাল বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) ম্যাচ হারলেও ম্যাচ সেরার স্বীকৃতি পেয়েছেন গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ। তার পাশাপাশি লেফট ফুলব্যাক পজিশনে খেলা জায়ানও দারুণভাবে ফুটবলপ্রেমীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। প্রতিপক্ষের আক্রমণ যেমন রুখেছেন তেমনি আবার আক্রমণের সময়ও যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন। তাই বাংলাদেশের দলীয় ব্যর্থতার মধ্যেও জায়ানের চেষ্টা এবং কোয়ালিটি ফুটে উঠেছে ভালোভাবেই।
বিজ্ঞাপন
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাসান আল মামুন অ-২৩ দলের সহকারী কোচ। ক্যাম্পের শুরু থেকে এখন অব্দি তিনি কাজ করছেন। হেড কোচ টিটু অসুস্থ থাকায় কাল ডাগ আউটেও ছিলেন। জায়ানকে বাংলাদেশের ফুটবলে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছেন হাসান আল মামুন। ভিয়েতনাম থেকে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বাহরাইনে দুই ম্যাচেও সে ভালো খেলেছে। একই ধারাবাহিকতায় ভিয়েতনাম তার পারফরম্যান্স দারুণ ছিল। একজন ফুলব্যাকের রানিং অ্যাবিলিটি থাকতে হয় অনেক বেশি। যেটা জায়ানের পুরোপুরিই রয়েছে। বিশেষ করে উইথ বল তার রানিং অনেক ফাস্ট।’
বিজ্ঞাপন
লেফটব্যাকের অন্যতম প্রধান কাজ রক্ষণ সামাল দেয়া। আক্রমণে জায়ান সক্রিয় থাকলেও রক্ষণে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে বলে মত মামুনের, ‘ফুটবলার হিসেবে তার বেসিক কোয়ালিটি ভালো। এক মাসে অ-২৩ দলের ট্রেনিংয়ে সে আরো উন্নতি করেছে। বিশেষ করে ডিফেন্ডিং ব্লক ও ডিফেন্ডিং অ্যাক্টিভিটিজ নিয়ে কাজ হয়েছে। সে এগুলো বেশ দ্রুত সময়ে রপ্ত করেছে।’
ভিয়েতনামে এএফসি অ-২৩ টুর্নামেন্টের বাছাইয়ের ম্যাচ দেখতে গেছেন বাফুফের চার নির্বাহী সদস্য (গোলাম গাউস, ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ,সত্যজিৎ দাশ রুপু ও সাখওয়াত হোসেন ভূঁইয়া শাহীন)। সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও নির্বাহী সদস্য গোলাম গাউসের চোখেও পড়েছে জায়ানের খেলা, ‘আসলে ম্যাচ হারায় মন এখনো খারাপ। তবে গোলরক্ষক শ্রাবণ ও জায়ানের খেলা ভালো লেগেছে। বিশেষ করে জায়ান তো পুরো মাঠ জুড়েই খেলল। কালকের ম্যাচে তার সেন্স, গতি,কোয়ালিটি সব কিছুই ভালো লেগেছে।’
আমেরিকায় বেড়ে উঠেছেন জায়ান আহমেদ। বাংলাদেশের ফুটবলের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। মাত্র এক মাসের মধ্যেই তিনি দলের সবার কাছে আপন হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশ অ-২৩ দলের ম্যানেজার শাহীন হাসান ভিয়েতনাম থেকে বলেন, ‘জায়ান অত্যন্ত সুশৃঙ্খল। খেলা ও ফিটনেস দুই দিকেই তার পূর্ণ মনোযোগ। দেশের হয়ে ভালো খেলার জন্য উদগ্রীব থাকে সব সময়।’
জায়ানের বাবা শরীফ আহমেদ সাবেক ফুটবলার। জাতীয় দলে কখনো খেলা হয়নি তার। আশির দশকে ইস্কাটন সবুজ সংঘের হয়ে প্রথম বিভাগ ফুটবলে খেলেছিলেন। পরবর্তীতে আমেরিকায় প্রবাস জীবনে থিতু হন। ২০০৪ সালে ভার্জিনিয়াতেই জায়ানের জন্ম। জর্জ ম্যাশন বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল দলের অন্যতম সদস্য জায়ান। শরীফ নিজে জাতীয় দলে খেলতে পারেননি এজন্য ছেলেকে লাল-সবুজ জার্সিতে খেলানোর স্বপ্ন ছিল। সেই লক্ষ্যে চলতি বছর জুন মাসে বাফুফের জুন মাসের ট্রায়ালে ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন। ঐ ট্রায়াল থেকে একমাত্র জায়ান আহমেদই জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন।
অ-২৩ দলের হয়ে জায়ান ইতোমধ্যে তিনটি ম্যাচ খেলেছেন। তার পারফরম্যান্স আগামী মাসে অক্টোবরে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে হংকং স্কোয়াডেও ডাক পাওয়ার দাবি জানাচ্ছে। জায়ানের পারফরম্যান্স ঘরোয়া ফুটবলে অনেক ক্লাবের চোখে পড়েছে। জাতীয় দলে খেলা ও আমেরিকায় ম্যানেজম্যান্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে স্নাতক পড়াশোনা সমাপ্ত করাতে মনোযোগ জায়ানের।
এজেড/এএল