শিরোনাম দেখে কি চমকে উঠলেন? পরিসংখ্যানের আঁকা-বাঁকা পথে যাদের বিচরণ নেই, তারা তো চমকাবেনই। লাতিন ফুটবলেই নয়, বিশ্বের ইতিহাসে সেরা দুই ফুটবলার পেলে ও ডিয়েগো ম্যারাডোনা। তারাই কি না জিততে পারেননি কোপা আমেরিকা, একটা উপমহাদেশীয় টুর্নামেন্ট! বিস্মিত না হয়ে উপায় আছে? লিওনেল মেসিও কিংবদন্তি। তিনিও কি সেই অগ্রজদের পথে? সেই ট্র্যাজেডির নায়ক নাকি শেষে এসে বাজিমাত সেটা এবারই জানা যাবে। মেসির যে সুযোগটা শেষ হয়নি।

মজার ব্যাপার হলো ফুটবল সম্রাট পেলে তার পুরো ক্যারিয়ারে একবারই খেলেছিলেন কোপা আমেরিকা। ১৯৫৯ সালে বিশ্বকাপ জেতার পরের বছরই নেমেছিলেন লাতিন আমেরিকান ফুটবলের শ্রেষ্টত্বের লড়াইয়ে। নিজে সফলও ছিলেন। ৮ গোল করে টুর্নামেন্টের সেরার পুরস্কারটা উঠেছিল তার হাতে। তবে শিরোপা জিতে নেয় তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা। 

আর ম্যারাডোনা তো নিজের দোষেই হতে পারেননি কোপা জয়ী ফুটবলার। ১৯৯৩ সালে শেষবার যখন আর্জেন্টিনা জেতে প্রাচীনতম এই ফুটবল টুর্নামেন্টের ট্রফি। সেই দলে ছিলেন না ফুটবল ইশ্বর। ড্রাগ নেওয়ার কারণে নিষেধাজ্ঞায় ছিলেন। অবশ্য ফিরলেও তার সেই পারফরম্যান্স ছিল না। কোচ আলফিও বাসিলে তাকে বাদ দিয়ে ডিয়েগো সিমিওনেকে দিয়েছিলেন ১০ নম্বর জার্সি। বিশ্বকাপ জিতলেও অধরা থাকে কোপা। 

মেসি অবশ্য আরও দুর্ভাগা। জাতীয় দলের হয়ে যে কিছুই জেতা হলো না। খেলেছেন চারটি বিশ্বকাপ। ফাইনালে উঠলেও সঙ্গী হয়েছে দ্বীর্ঘশ্বাস। বিশ্বের প্রাচীনতম ফুটবল টুর্নামেন্ট কোপা আমেরিকা মানেই শিল্পের ছোঁয়া। বল পায়ে ম্যাজিক দেখান ফুটবল যাদুকররা। এই লড়াইয়ে ২০১৪ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে নিয়ে গেলেও বিশ্বকাপ জেতা হয়নি লিওনেল মেসির। কখনও জেতা হয়নি কোপা আমেরিকাও।

২০০৭ সালে তরুণ মেসির সঙ্গে ছিল হার্নান ক্রেসপো, কার্লোস তেভেজ, রিকুয়েলমে, পাবলো আইমার, দারুণ একটা দল। দাপট দেখিয়ে ফাইনালেও উঠে আসে তারা। কিন্তু ট্রফি সামনে নিয়ে খেলতে নেমে ব্রাজিলের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ! তারপর ২০১১ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে কার্লোস তেভেজের টাইব্রেকার ট্র্যাজেডি। ২০১৫ ও ২০১৬ দুটি ফাইনালে চিলি আলবিসেলেস্তেদের হতাশায় পুড়িয়েছে। 

দুই বার অভিমানে, কষ্টে অবসর নিলেও ফিরেছেন মেসি। বয়স হয়েছে ৩৪ বছর। এটাই হয়তো শেষ! তিনি যে সর্বকালের সেরা হতে লড়ছেন। ক্লাব ফুটবলে সবই এসেছে, জাতীয় দলের হয়ে রিক্ত হাত কি মানায় এই যাদুকরকে। পেলে-ম্যারাডোনার কষ্টের সঙ্গী হতে চান না তিনি। ড্র দিয়ে এবারের মিশন শুরু। শেষটা রাঙাতে পারবেন তো তিনি? অপূর্ণতা মাটি চাপা দিয়ে পূর্ণতার দেখা পেতে এটাই বুঝি শেষ সুযোগ!

এটি/এমএইচ