অভিষিক্ত জায়ানে মুগ্ধতা, ‘কোচের ভুলেই হার’
হামজার গোলে প্রথমার্ধে লিড। দ্বিতীয়ার্ধের ইনজুরি সময়ে ৩-৩ গোলে সমতা। এরপরও শেষ কয়েক সেকেন্ড আগে গোল হজম করে ম্যাচ হেরে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ। এমন হারের পর হামজা চৌধুরী মাঠের মাঝে বিমর্ষভাবে বসে পড়েন। এত লড়াইয়ের পর এক পয়েন্ট না পাওয়ার আক্ষেপ তার চোখেমুখে।
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক জাহিদ হাসান এমিলি কালকের হারের জন্য সরাসরি কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘এক বাক্যে বলতে হলে কোচের ভুল কৌশল ও একাদশের জন্য বাংলাদেশ হেরেছে।’ তার এই মন্তব্যের বিশ্লেষণ করে বলেন, ‘আমার একটা মৌলিক প্রশ্ন জায়ান, জামাল, ফাহমিদুল ও সামিত কেন প্রথমার্ধে ছিল না। রক্ষণে সুশৃঙ্খলতা ছিল না এবং চারটি গোলের পেছনেই গোলরক্ষকের দায় রয়েছে। ফলে গোলরক্ষক কোচকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।'
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
দ্বিতীয়ার্ধে চতুর্থ রেফারি ৯ মিনিট ইনজুরি সময় দেন। অন্তিম মুহূর্তে বাংলাদেশ মোরসালিনের কর্নারে সামিতের হেডে ম্যাচে খেলায় ৩-৩ সমতা আনে। খেলার তখন এক মিনিটের কম সময় বাকি। হংকংয়ের বিপক্ষে ১-৩ গোলে পিছিয়ে থেকে ৩-৩ সমতা। সেই উচ্ছ্বাসে খেলোয়াড়দের সঙ্গে কোচও শামিল হতে কর্নার ফ্ল্যাগের কাছাকাছি যান। এটা এমিলির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ,‘আমরা হংকংয়ের বিপক্ষে জিততে নেমেছিলাম। ঐ সময় কোচের সেই সেলিব্রেশনে না গিয়ে নিজে শান্ত থেকে উল্টো আরও এক গোল কিভাবে করা যায় সেটা পরিকল্পনা উচিত ছিল। সেখানে আমরা মনোযোগ হারিয়ে ও ভুল করে গোল খেয়ে ম্যাচ হারলাম।’
বিজ্ঞাপন
সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও বিশ্লেষক জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু কালকের হারকে বিশ্লেষণ করলেন এভাবে, ‘কোচ-খেলোয়াড় সবারই দায় রয়েছে। সাদ উদ্দিন ক্রমাগত ভুল করেছেন অথচ কোচ তাকে পুরো ম্যাচই খেলালেন। এক পর্যায়ে লেফট ব্যাক থেকে তাকে রাইট ব্যাক করলেন। দ্বিতীয়ার্ধে তিনি যে পরিবর্তনগুলো করেছেন সেগুলো শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে করলে আরো বেশি কার্যকর হতে পারত। জায়ান অসাধারণ খেলেছেন। তার মতো খেলোয়াড় বাংলাদেশে অত্যন্ত প্রয়োজন। তবে হংকংয়ের চতুর্থ গোলের উৎস জায়ানের ভুল থেকেই। তিনি যদি বলটি প্রতিপক্ষের হাফে লং ক্লিয়ার করতেন তাহলে আর বাংলাদেশ অর্ধে থ্রো ইন হয় না। হংকং তাদের অর্ধ থেকে বল বাংলাদেশ অর্ধে এনে আক্রমণ করতে করতে খেলার শেষ বাশি বেজে যেত।’
গতকাল আমেরিকান প্রবাসী জায়ান আহমেদের অভিষেক হয়েছে। মাত্র ২৫ মিনিটের মতো খেলার সুযোগ পেলেও জায়ান তার জাত চিনিয়েছেন। কালকের ম্যাচের প্রাপ্তি হিসেবে জায়ানকে দেখছেন,‘জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথম ম্যাচ হলেও সে বাংলাদেশের ফুটবলের ভালো ভবিষ্যৎ। জায়ান নামার পর তার গতি ও স্কিলের কারণে হংকং কোচ খেলোয়াড় পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে।’
গতকাল বাংলাদেশ চার গোল হজম করেছে। চার গোলের পেছনেই গোলরক্ষক মিতুল মারমার ভুল রয়েছে। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক গোলরক্ষক আমিনুল হক কালকের ম্যাচের হার নিয়ে বলেন,‘আমার মনে হয়েছে আমাদের ফুটবলাররা দর্শকদের প্রত্যাশার চাপ নিতে পারিনি। এতে তারা স্নায়ুচাপে ভোগে মাঝে মধ্যে ভুল করেছে। সেই ভুলের কারণেই আমরা গোলগুলো হজম করেছি। না হলে অবশ্যই ম্যাচের চিত্র অন্য রকম হতে পারত।’
কোচ ক্যাবরেরার দূরদৃষ্টি ও পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। হংকংয়ের ম্যাচের ভুল-ত্রুটি নিয়ে এখন অনুশীলন হবে। ঢাকায় সেই নিবিড় অনুশীলন না করে উল্টো প্রতিপক্ষ দেশে গিয়ে কাটাছেড়া করবেন কোচ। আজ ২৩ জন ফুটবলার নিয়ে রওনা হয়েছেন তিনি। অথচ ফুটবল ফেডারেশন কোচের চাহিদা অনুযায়ী ৪৫ জনের ভিসা করিয়েছে। এতে ফেডারেশনের দুই লাখ টাকা একেবারে নিরর্থক ব্যয়। দেশের আরেক শীর্ষ কোচ ও বিশ্লেষক মারুফুল হক কোচ ক্যাবরেরাকে ইঙ্গিত করে গতকাল রাতে ও আজ বিকেলে সামাজিক মাধ্যমে দু'টি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
এজেড/এফআই