অফ সিজন কিংবা মৌসুমের বড় বিরতির মাঝে জাতীয় ফুটবলাররা স্থানীয় পর্যায়ের টুর্নামেন্ট খেলেন। জাতীয় ফুটবলারদের স্থানীয় পর্যায়ে খেলা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা হয় প্রায়ই। আজ জাতীয় ফুটবল দলের অনুশীলন সেশনে ডিফেন্ডার রহমত মিয়াকে লোকাল পর্যায়ে টুর্নামেন্ট খেলা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল।

জাতীয় দলে খেলা ফুটবলারদের মধ্যে রহমত এখন অন্যতম সিনিয়র। তাই বেশ ভালোভাবেই কঠিন প্রশ্ন সামাল দিয়ে বলেন,‌ 'আসলে যখন আমরা এলাকাতে থাকি তখন এলাকার যারা গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আছে তারা চায় যে ন্যাশনাল টিমের প্লেয়াররা বাড়িতে আসছে তারা যেন আমাদের মাঠে খেলে। তো আমার মনে হয় যে সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই প্লেয়ারদের আসলে বাধ্য হতে হয় নিজের মাঠে খেলতে।'

স্থানীয় পর্যায়ের টুর্নামেন্ট হয় এবড়ো থেবড়ো মাঠে। ইনজুরিতে পড়লে ক্লাব কিংবা জাতীয় দলের জন্য ভয়ানক ক্ষতি। আবার খোলা মাঠে খেলা হওয়ায় নিরাপত্তার সংকটও থাকে। এ নিয়ে খানিকটা দ্বিমত করলেন রহমত, 'প্রথমত লোকাল টুর্নামেন্টগুলা খেলতে গিয়ে কে কে ইনজুরিতে আছেন সেটা জানি না। দ্বিতীয়ত যেহেতু আমাদের ফেডারেশন থেকে একটা স্টেটমেন্ট আসছে আমাদের সোশাল এসপেক্ট এবং পলিটিক্স এসপেক্ট থেকে।'

জাতীয় ফুটবল দল অনুশীলন করছে হেড কোচ ছাড়াই। ১৪ জন ফুটবলার আজ অনুশীলন করেছেন। সেই খেলোয়াড় তালিকাও ফুটবল ফেডারেশন গণমাধ্যমে সরবারহ করেনি। হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ফুটবলের চিরাচরিত সংস্কৃতি বদলে দিয়েছেন। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমানে দলের সহকারী কোচ হাসান আল মামুনকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারনেনি, 'এইটা আসলে আমি বুঝতে পেরেছি আপনারা স্কোয়াডটা পাননি  তবে যে অলমোস্ট একই স্কোয়াড। আপনারা জানতে পেরেছেন যে হংকং এ স্কোয়াডটার মতই স্কোয়াড হবে। তবে এটা এখনো ফাইনাল না।'

বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলাররা এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগ খেলছেন। তাদের ৪ নভেম্বর ক্যাম্পে যোগ দেয়ার কথা। কোচও আসবেন ঐ সময়। এই তিন দিন ১৪ জন অপূর্ণাঙ্গ অনুশীলন ফেডারেশনের আর্থিক ব্যয়ই। এই প্রসঙ্গে ডিফেন্ডার রহমতের ভিন্ন মত, 'বসুন্ধরা এখন খেলতেছে এফসি চ্যালেঞ্জ লিগ। কিন্তু আমাদের অন্যান্য প্লেয়াররা যারা অন্য ক্লাবে খেলে তাদের কোন খেলা নেই আপাতত। তো এটা বেটার না যে এক টিম খেলতেছে এবং আরেক টিম আরেক টিমের সব প্লেয়াররা বসে আছে। ১৪ জন আসছে, আবার ১১ জন আসবে। তো ফিটনেসের দিক থেকে যদি তুলনা করা হয় তারা খেলার ভিতর আছে এবং যারা বাকি প্লেয়াররা আছে তারা যদি এখানে প্র্যাকটিস করে তাদের ফিটনেসটা আপ টু দা মার্ক থাকবে।'

বাংলাদেশের এশিয়া কাপ খেলার আর সম্ভাবনা নেই। ভারত ও সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে দুই ম্যাচ শুধুই নিয়ম রক্ষার। দুই ম্যাচের নিবেদন শতভাগ থাকবে তো? এমন প্রশ্নে রহমতের দ্ব্যর্থহীন জবাব, 'সিরিয়াসনেস এবং কমিটমেন্ট এটা নিয়ে আমি দ্বিমত পোষণ করতে চাই। কোন প্লেয়ারই তার কমিটমেন্টের জায়গা থেকে পিছুপা হয় না এবং খেলার জায়গাতে কখনো স্যাক্রিফাইস করে না। ডেফিনেটলি না। প্রত্যেকটা প্লেয়ারই তার বেস্ট লেভেলটা দেওয়ার চেষ্টা করে মাঠে। যেহেতু আমাদের সুযোগ নাই কিন্তু আমাদের অপরচুনিটি আছে দুইটা ম্যাচ ভালো করার। সবাই ভালো করারই চেষ্টা করবেন।'

বাংলাদেশ দলে এখন হামজা-শামিতের মতো বড় মাপের ফুটবলার। এরপরও চার ম্যাচ শেষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের পয়েন্ট মাত্র দুই। এটা বাংলাদেশ ডিজার্ভ করে না বলে মত সহকারী কোচ হাসান আল মামুনের, 'আসলে এই দল এটা ডিজার্ভ করে না। এই দলের যে ওজন এবং গত তিন বছরে হাভিয়েরের অধীনে যে দল হয়েছে এই দলটা একটা পরিবর্তনের জায়গায় আছে। পরিবর্তনটা হচ্ছে আমাদের লেভেলকে পরিবর্তন। তাই এই টিম এটা ডিজার্ভ করে না। অবশ্যই আমরা সামনে দুটা ম্যাচে পয়েন্টের জন্য নামব।' 

বাংলাদেশ হংকংয়ের বিপক্ষে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়েতে দুই ম্যাচে মাত্র এক পয়েন্ট পেয়েছে। দুই ম্যাচেই বাংলাদেশের ডিফেন্ডারদের ব্যর্থতা রয়েছে। ডিফেন্সের ভুলকে ডিফেন্ডার হয়ে সরলীকরণ করলেন রহমত, 'ফুটবলে গোল হবেই ভুল থাকবেই এবং ভুল শুধরানোরও জায়গা থাকবে। তো এটা নিয়ে আমি আর কি বলতে পারি, একজন প্লেয়ার হিসেবে চেষ্টা করি যাতে আমাদের সেরাটা দিয়ে খেলার এবং ভুল যতটুকু কম করা যায়।'

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ চার ম্যাচ খেলেছে। দুই অ্যাওয়ে ম্যাচে এক পয়েন্ট করে পেয়েছে। হোম ম্যাচেই হেরেছে। সাধারণত ফুটবলে হোম ম্যাচই বড় শক্তি। বাংলাদেশে বিপরীত ঘটনা হওয়ার ব্যাখ্যায় খানিকটা বিস্মিত সহকারী কোচ মামুনও, 'আসলে পরিসংখ্যান বলে যে হোম ম্যাচগুলো আমরা ভালো খেলি। অ্যাওয়েতে খারাপ করি। তবে সমসাময়িক অবস্থায় দেখা যাচ্ছে এখন আমরা হয়তো অ্যাওয়েতে ভালো করছি।'

এজেড/এইচজেএস