২০১৮ সালে সাড়ে তিন লাখের চেয়ে বেশি জনসংখ্যা নিয়ে আইসল্যান্ড বিশ্বকাপে খেলেছিল। ওইবার তারা জনসংখ্যায় সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের টিকিট কেটে ইতিহাস গড়েছিল। এবার সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস গড়েছে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের ছোট দ্বীপরাষ্ট্র কুরাসাও। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী দেশটিতে মাত্র ১ লাখ ৫৬ হাজার ১১৫ জন মানুষের বসবাস। ‘বি’ গ্রুপের শীর্ষে থেকে কনকাকাফ বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপে তারা। তবে প্রতিযোগিতার আগামী আসরে তাদের মতো ছোট জনসংখ্যার আরো কয়েকটি দেশ অংশ নিচ্ছে। এমন ১০টি ছোট দেশ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক- 

১০. প্যারাগুয়ে- ৭০ লাখ

কনমেবল কোয়ালিফায়ার থেকে শেষ যোগ্য দল হিসেবে আগামী বিশ্বকাপে প্যারাগুয়ে। এই প্রতিযোগিতায় তারা ১৬ বছর পর ফিরছে। 

তারা কলম্বিয়া, উরুগুয়ে ও ব্রাজিলের সমান পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ছয়ে ছিল। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইকুয়েডরের সঙ্গে তারা একটি পয়েন্ট কম পেয়েছে।

প্যারাগুয়ের সেরা সাফল্য ছিল ২০১০ সালের কোয়ার্টার ফাইনাল। এরই মধ্যে বিশ্বকাপের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে যৌথ আয়োজক হওয়ার সুবাদে ২০৩০ এর আসর নিশ্চিত করে ফেলেছে।

৯. নরওয়ে- ৫৬ লাখ

বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় আর্লিং হালান্ড। বিশ্বকাপে তার অনুপস্থিতি হতে পারতো ফুটবলপ্রেমীদের জন্য হতাশার ব্যাপার। তবে এবার তাকে দেখা যাবে। ১৯৯৮ সালের পর প্রথমবার বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে নরওয়ে।

দেশকে বিশ্বমঞ্চে তুলতে দারুণ অবদান হালান্ডের। বাছাইপর্বে ১৬ গোল করেছেন তিনি। ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বাছাইয়ে যৌথ সর্বোচ্চ গোল তার। এনিয়ে বিশ্বকাপে চতুর্থবার খেলবে নরওয়ে। তাদের সেরা সাফল্য ছিল ১৯৯৮ সালের শেষ ষোলোতে খেলা। ইতালির কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল তাদের।

৮. স্কটল্যান্ড- ৫৫ লাখ

নেপলসের হিরো স্কট ম্যাকটমিনে বড় মুহূর্তে নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন। এবারো তাই হয়েছে। তার ওভারহেড কিকে স্কটল্যান্ড ডেনমার্ককে ৪-২ গোলে হারিয়ে ‘সি’ গ্রুপের শীর্ষস্থান নিশ্চিত করেছে।

ওই জয়ে স্কটল্যান্ড ১৯৯৮ সালের পর প্রথমবার বিশ্বকাপে। এই দেশটি কখনো গ্রুপ পর্ব পার হতে পারেনি।

৭. নিউজিল্যান্ড- ৫২ লাখ

প্রথমবার নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে খেলেছিল ১৯৮২ সালে। তারপর ২৮ বছরের অপেক্ষা শেষে পরের বিশ্বকাপে খেলেছে তারা। এবার আর অপেক্ষা দীর্ঘতর হলো না।

২০১০ সালের বিশ্বকাপে খেলা দলটি ওএফসি কোয়ালিফিকেশন ফাইনালে নিউ ক্যালেডনিয়াকে হারিয়ে আগামী আসরের টিকিট কেটেছে।

৬. পানামা- ৪৫ লাখ

২০১৮ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলেছিল তারা। কনকাকাফ কোয়ালিফায়ারে তারা ‘এ’ গ্রুপের শীর্ষস্থান নিশ্চিত করেছে। তাদের দুই শীর্ষ গোলদাতা হোসে ফাহারদো ও হোসে লুইস রদ্রিগেজ তিনটি করে গোল করেন।

৫. ক্রোয়েশিয়া- ৩৮ লাখ

বিশ্ব ফুটবলে ক্রোয়েশিয়ার দাপট নতুন কিছু নয়। গত দুটি আসরে তারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। ২০১৮ সালের ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়। আর গত আসরে হয়েছে তৃতীয়। বাছাইপর্বে ‘এল’ গ্রুপে তারা দাপট দেখিয়েছে। আন্দ্রে ক্রামারিচ ছয় গোল করে অবদান রাখেন। দলে আছেন লুকা মদরিচ। আগামী আসরে খেললে তা হবে তার পঞ্চম বিশ্বকাপ।

৪. উরুগুয়ে- ৩৩ লাখ

চতুর্থ ছোট দেশ হিসেবে এবারের বিশ্বকাপে উরুগুয়ে। প্রথম চার আসরের দুটিতেই তারা হয়েছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। বিশ্বকাপের নিয়মিত মুখ তাদের বলা চলে। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খেতাব তাদের কাছে।

১৯৯৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চার আসরের তিনটিতে দর্শক ছিল উরুগুয়ে। গত চারটি আসরেই তারা খেলেছে।

২০১০ সালে লুইস সুয়ারেজের সেই ‘কুখ্যাত’ হ্যান্ডবলে ঘানার স্বপ্ন ভেঙেছিল। ওইবার চতুর্থ হয়েছিল তারা। তারপর থেকে ফর্ম নিচের দিকে নেমেছে। পরের তিন বিশ্বকাপে শেষ ষোলো, কোয়ার্টার ফাইনাল ও গ্রুপ পর্ব খেলে ছিটকে গেছে তারা।

২০২৬ সালে গতবারের হতাশা কাটিয়ে উঠতে চায় প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়নরা।

৩. কাতার- ৩১ লাখ

আয়োজক হিসেবে তিন বছর আগে তারা প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলেছিল। ঘরের মাঠ হলেও কোনো চমক দেখাতে পারেনি দলটি। হেরেছে গ্রুপের সবগুলো ম্যাচ।

তবে এই প্রথমবার তারা মাঠে খেলে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছে। এএফসির বাছাই বেশ আলাদা। তিনটি গ্রুপ পর্বে খেলে টিকিট কাটতে হয়। প্রথম গ্রুপ পর্বে কাতারা শীর্ষে থাকলেও পরের পর্বে ধুঁকেছে। চতুর্থ হওয়ায় পরের পর্বে খেলতে হয়েছে তাদেরকে, ইরান ও উজবেকিস্তান সরাসরি উঠেছে। তৃতীয় গ্রুপ পর্বে কাতারা সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানকে পেছনে ফেলে শীর্ষস্থানে থেকে আগামী আসরে খেলা নিশ্চিত করেছে।

২. কেপ ভার্দে- ৫ লাখ ২৮ হাজার

ক্যামেরুনের মতো বড় দলকে বিদায় করে বিশ্বকাপে কেপ ভার্দে। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে সিএএফ অঞ্চলের হয়ে তারা খেলেছে। ‘ডি’ গ্রুপে এক নম্বরে থেকে প্রথমবার বিশ্বকাপে তারা।

আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত কেপভার্দে আয়তনে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে খেলবে। তবে জনসংখ্যায় এবারের বিশ্বকাপে তারা দ্বিতীয় ছোট দেশ।

কোয়ালিফায়ারে আলো কেড়েছেন জন্মসূত্রে ডাচ ফুটবলার ডাইলন লিভ্রামেন্তো। চার গোল করে যৌথভাবে শীর্ষ গোলদাতা তিনি। বিশ্বকাপের ৮১তম দেশ হিসেবে তারা পরের আসরে অংশ নিচ্ছে।

১. কুরাসাও- ১ লাখ ৫৬ হাজার ১১৫

ইংল্যান্ডের শহর মিল্টন কিনেসের চেয়ে কম জনসংখ্যার দেশ। বাছাইপর্বে স্টিভ ম্যাকক্লারেনের জ্যামাইকাকে চমকে দিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপে উঠেছে।

ঘরের মাঠে জ্যামাইকাকে জিতলেই হতো। কিন্তু ৮২তম র‌্যাংকিংধারী কুরাসাও গোল করেনি, করতেও দেয়নি। কুরাসাওকে টপকাতে না পেরে চাকরি ছেড়েছেন জ্যামাইকার ম্যাকক্লারেন।

কুরাসাও কোচ ডিক অ্যাডভোকাট ব্যক্তিগত কারণে মাঠে না থাকলেও তিনিই এখন বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বয়স্ক কোচ—৭৮ বছর বয়সে। এর আগে রেকর্ডটি ছিল গ্রিস কোচ অট্টো রেহাগেলের (৭১)। নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, সার্বিয়া, ইরাকসহ আটটি জাতীয় দলের দায়িত্ব সামলানো অ্যাডভোকাট ২০২৪ সালে দায়িত্ব নিতেই লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন- বিশ্বকাপ।

কুরাসাও দলে অধিকাংশ ফুটবলারেরই জন্ম নেদারল্যান্ডসে, পারিবারিক যোগসূত্রে দেশের হয়ে খেলছেন। লিভিংস্টনের জোশুয়া ব্রেনে, রদারহ্যামের আরজানি মার্থা, মিডলসব্রোর সনচে হ্যানসেন, এবং শেফিল্ড ইউনাইটেডের তাহিথ চং- সবাই মিলে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী স্কোয়াড।

এফএইচএম/