চ্যাম্পিয়নস লিগ
পুরোনো শত্রু বার্সেলোনাকে কি হারাতে পারবে চেলসি?
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের সবচেয়ে বড় ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে বার্সেলোনা ও চেলসি। দুই দলের জন্য ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র ২ পয়েন্ট পেছনে থেকে সেরা আটের বাইরে তারা। যে জিতবে, নিশ্চিতভাবে নকআউট পর্বে ওঠার লড়াইয়ে বড় ধাপ ফেলবে। আপাতত পরিসংখ্যান চেলসিকে এগিয়ে রাখছে। অপটা সুপারকম্পিউটার বলছে, বার্সেলোনার (৩৪.৫%) বিপক্ষে জয়ের সম্ভাবনায় সামান্য এগিয়ে ব্লুরা(৪১.৭%)।
দুই দলই আগের ম্যাচে ড্র করেছে। তবে ইংল্যান্ডে বার্সার সাম্প্রতিক ইতিহাস সুখের। তারা এই ম্যাচেও তেমন কিছুর আশা করছে।
বিজ্ঞাপন
ইংলিশ দলের বিপক্ষে আগের ৯টি অ্যাওয়ে ম্যাচের মধ্যে বার্সা হেরেছিল কেবল দুটি। ওই দুটি হার দেখেছিল তারা পেপ গার্দিওলার ম্যানসিটি (৩-১, ২০১৬ সালের নভেম্বর) ও জুর্গেন ক্লপের লিভারপুলের (৪-০, ২০১৯ সালের মে) কাছে।
অন্যদিকে লা লিগা দলের বিপক্ষে প্রিমিয়ার লিগ ক্লাবের সাম্প্রতিক রেকর্ড চেলসিকে আশাবাদী করে তুলছে। চ্যাম্পিয়নস লিগে স্প্যানিশ ক্লাবদের বিপক্ষে শেষ ১০ ম্যাচে ৯টি জিতেছে ইংলিশ দলগুলো। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেবল গত সেপ্টেম্বরে নিউক্যাসলের বিপক্ষে বার্সেলোনার জয়। তারপর থেকে স্প্যানিশ প্রতিপক্ষের বিপক্ষে কোনো গোল না খেয়ে টানা চার ম্যাচ জিতেছে ইংলিশ দলেরা। আর্সেনাল ৪-০ গোলে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে হারিয়েছে। ভিয়ারিয়ালকে ০-২ গোলে হারিয়েছে ম্যানসিটি। লিভারপুল ১-০ গোলে রিয়াল ও মাদ্রিদ নিউক্যাসল ২-০ গোলে অ্যাথলেটিক ক্লাবকে হারিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সেন্ট জেমস পার্কে বার্সা যে জয় পেয়েছে, তাতে দুই গোল করে অবদান রাখেন মার্কাস র্যাশফোর্ড। বার্সেলোনা রহয়ে চার চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচে চার গোল ও একটি অ্যাসিস্ট তার। এই প্রতিযোগিতায় কাতালানদের হয়ে প্রথম চার ম্যাচে পাঁচ গোলে অবদান রাখা দ্বিতীয় খেলোয়াড় তিনি। ক্লাব ইতিহাসে চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথম পাঁচ ম্যাচে তার চেয়ে বেশি গোল হ্রিস্তো স্তোয়চকোভের-১৯৯৪ সালে তিনি পাঁচ গোল করেন এবং বানিয়ে দেন তিনটি।
তবে র্যাশফোর্ডকে নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। সেটা কেটে গেছে। শনিবার অ্যাথলেটিক ক্লাবের বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয়ে বার্সার ম্যাচে খেলেননি ইংলিশ তারকা। অসুস্থ ছিলেন তিনি। তবে ফিরে এসেছেন। নিষেধাজ্ঞার কারণে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়াংও মাঠের বাইরে ছিলেন। হাফটাইমে কার্ড দেখা আলেহান্দ্রো বালদেও খেলতে পারবেন না এই ম্যাচে। নেই গাভি, পেদ্রি ও মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন।
র্যাশফোর্ডের দারুণ ফর্মের সহায়তায় বার্সেলোনা উড়ছে। চ্যাম্পিয়নস লিগে তাদের শেষ ২৪ ম্যাচের সবগুলোতে গোল ছিল, যা বর্তমানে যে কোনো দলের টানা দীর্ঘতম গোল করার রেকর্ড। এই সময়ে মোট ৬৭ গোল করেছে কাতালানরা।
চোটজর্জর চেলসির বিপক্ষেও বার্সা গোলের দেখা পাবে আশা করা যায়। ইনজুরিতে মাঠের বাইরে আছেন কোল পালমার। লেভি কলউইল দারিও এসুগো ও রোমেও লাভিয়াকেও পাবে না চেলসি।
এঞ্জো মারেসকার দলের ভরসা এস্তেভাও। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে এই কিশোর চেলসির শীর্ষ গোলদাতা। প্রথম দুটি ম্যাচে শুরুর একাদশে নেমেই গোল করেছেন তিনি। শুরুর একাদশে থেকে প্রথম তিন চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচেই গোল করা দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ (১৮ বছর ২১৫ দিন) খেলোয়াড় হবেন এই ব্রাজিলিয়ান। এই রেকর্ড এখন কিলিয়ান এমবাপ্পের দখলে। ২০১৭ সালে মোনাকোর হয়ে খেলার সময় এই রেকর্ড গড়েন ফরাসি তারকা।
এস্তেভাও বয়সে ছোট হলেও তার অনেক সতীর্থের বয়সও বেশি নয়। এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগে গড় বয়স হিসাবে চেলসি সবচেয়ে কম বয়সী একাদশ নামিয়েছিল, ২৩ বছর ও ২৭৮ দিন। ২৩ বা তার চেয়ে কম বয়সী ১৪ জন ভিন্ন খেলোয়াড়কে শুরুতে নামিয়েছে চেলসি, যা যে কোনো দলের জন্য সর্বোচ্চ।
আর অভিজ্ঞতায় বার্সেলোনা বেশ এগিয়ে। প্রতিযোগিতার এই মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ১২টি হলুদ কার্ড দেখেছে তারা, এমনকি পঞ্চম সর্বনিম্ন ৩৭টি ফাউল করেও। আর কোনো দলে তাদের চেয়ে বেশি ভিন্ন খেলোয়াড় হলুদ কার্ড (৮) দেখেনি।
বলাই যায়, যে কোনো আক্রমণভাগকে ঠেকিয়ে দিতে তারা সদা প্রস্তুত। চেলসির তরুণ দলের বিপক্ষেও তারা একইভাবে প্রস্তুত থাকবে।
অবশ্য দুই দলের দেখায় চেলসি বেশ দাপট দেখিয়েছে। চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সার সঙ্গে তাদের শেষ ৯ বারের লড়াইয়ে মাত্র একটি হেরেছে। ছয় ম্যাচ হয়েছে ড্র। একমাত্র হার দেখেছে তারা ২০১৮ সালের মার্চে ন্যু ক্যাম্পে। ওই ম্যাচে ৩-০ গোলে হেহেরছিল তারা। তাতে দুই লেগের অগ্রগামিতায় ৪-১ এ হেরে শেষ ষোলো থেকে ছিটকে গিয়েছিল ব্লুরা।
আর বার্সা ইউরোপিয়ান মঞ্চে আগের আটবারের চেষ্টায় কেবল একবার জিতেছে চেলসির মাঠে, হেরেছে পাঁচটি। ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেই ২-১ গোলের জয় ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। জন টেরির আত্মঘাতী গোল ও স্যামুয়েল ইতোর স্ট্রাইকে পিছিয়ে থেকেও জিতেছিল অতিথিরা।
এফএইচএম/