মেসিকে দেখতে ‘হানিমুন বাতিল’, ভক্তদের আবেগ নিয়ে খেলার অভিযোগ!
দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে ভারত ও বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা ও লিওনেল মেসির প্রতি অন্যরকম আবেগ কাজ করে। ২৪ বছর পর বিশ্বকাপ জয়ী ফরোয়ার্ডের আগমন উপলক্ষে ভারতেও চলছে উন্মাদনা। প্রায় ৭২ ঘণ্টার এই সফর ঘিরে ভক্তরা আবেগে ভাসছিলেন, কিন্তু আয়োজকদের অব্যবস্থাপনার কারণে তা রূপ নিলো ক্ষোভে।
শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটায় কলকাতায় পা রাখেন মেসি। সেখান থেকে হায়দরাবাদ, মুম্বাই ও নয়াদিল্লিতে যাবেন এলএমটেন। তাকে একপলক দেখতে পুরো শহরে ছিল উৎসুক জনতার ভিড়। তাদের মধ্যে এক নারী অন্যরকম প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে নজর কেড়েছেন। হানিমুন বাতিল করে মেসিকে দেখতে এসেছেন তিনি। তার প্ল্যাকার্ডে লেখা: ‘এই শুক্রবার বিয়ে করলাম। কিন্তু শুধু মেসিকে দেখতে হানিমুন বাতিল করেছি।’ ২০১০ থেকে মেসির সমর্থক হওয়া এই নারী তার প্রতিক্রিয়া জানালেন এভাবে, ‘আমরা এখানে এসেছি মেসিকে দেখতে। (প্ল্যাকার্ড নিয়ে) হ্যাঁ, আমিই লিখেছি। গত শুক্রবার বিয়ে করেছিলাম আমি। কিন্তু আমার স্বামী ও আমি আমাদের হানিমুনে যাওয়া স্থগিত করেছি, কারণ মেসি আসছে আমাদের শহরে।’
বিজ্ঞাপন
শহরে নেমে মেসিকে নেওয়া হয়েছিল বিলাসবহুল একটি হোটেলে। তার সঙ্গে ছিলেন দীর্ঘদিনের সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ ও রদ্রিগো ডি পল। সকালে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। তারপর ভার্চুয়ালি নিজের ৭০ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্য উন্মোচন করেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। তখনো সাধারণ ভক্তদের তাকে সেভাবে দেখার সুযোগ হয়নি।
মেসিকে ভালোভাবে দেখার জন্য যুব ভারতী স্টেডিয়ামে অপেক্ষায় ছিলেন হাজারো ভক্ত-সমর্থক। সেখানে একটি প্রীতি ম্যাচ আয়োজন করা হয়েছিল। সফরের প্রথম দিন ঠিক সকাল সাড়ে ১১টায় যুবভারতীর মাঠে ঢোকে মেসির গাড়ি। তবে গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু মানুষ তাকে ঘিরে জটলা তৈরি করেন।
বিজ্ঞাপন
মেসি যুবভারতীতে পৌঁছাতেই অন্তত ৭০-৮০ জন মানুষের ভিড় ঘিরে ধরে তাকে, যাদের মধ্যে অধিকাংশ মূলত মন্ত্রী, কর্তারা। ভালোভাবে হাঁটতেও পারছিলেন না আটবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী! ক্যামেরা ও মোবাইল হাতে তার সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। এছাড়া নিরাপত্তা রক্ষীদের বেষ্টনী তো ছিলই। গ্যালারি থেকে তাকে দেখা যাচ্ছিল না। চড়া দামে টিকিট কেটে মেসিকে দেখতে যাওয়া ফুটবলপ্রেমীদের শেষ ভরসা ছিল স্টেডিয়ামের তিনটি জায়ান্ট স্ক্রিন। কিন্তু তাও দেখা যায়নি। মোহনবাগান এবং ডায়মন্ড হারবারের প্রাক্তন ফুটবলারদের সঙ্গে মেসি পরিচিত হওয়ার সময়ও প্রচণ্ড ভিড় ছিল তাকে ঘিরে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং প্রধান আয়োজক শতদ্রু দত্তকে মাইক্রোফোনে ঘোষণা করতে হয়। তাতেও স্বাভাবিক হয়নি পরিস্থিতি।
১১.৫২ মিনিটে আচমকা মেসিকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপরই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ১৫ হাজার রুপিতে টিকিট কিনে মাঠে এসেও মেসিকে দেখতে না পাওয়ায় ফুটবলপ্রেমীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। শুরু হয় গ্যালারিতে লাগানো হোর্ডিং ভাঙচুর। পরে গ্যালারির চেয়ার ভেঙে মাঠে ছুড়তে শুরু করেন ক্ষুব্ধ ফুটবলপ্রেমীরা। বোতলও পড়তে থাকে মাঠের ভেতরে।
একসময় মাঠের ধারে ফেন্সিংয়ের গেট ভেঙে হুড়মুর মাঠে ভক্ত-সমর্থকরা ঢুকতে শুরু করেন। প্রথমে পুলিশ হতভম্ব হয়ে গেলেও কিছুক্ষণ পর লাঠি উঁচিয়ে ক্ষুব্ধ জনতাকে গ্যালারিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ফুটবলপ্রেমীরা আবার মাঠে ফিরে আসেন।
এমন আয়োজনকে ভক্তরা ‘চরম অপমান’ ও ‘পুরোপুরি অব্যবস্থাপনা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এক জন টুইটারে লিখেছেন, ‘শোচনীয়, হতাশাজনক। কলকাতায় দুর্বল আয়োজন। ম্যানেজমেন্ট ভক্তদের আবেগ নিয়ে খেলল।’
শুরুতেই আয়োজন নিয়ে বিতর্ক, বাকি দুই দিনে মেসির আগমন ঘিরে উত্তেজনা কোন দিকে গড়ায়, সেটাই দেখার অপেক্ষা। ১৫ ডিসেম্বর নয়াদিল্লি সফর শেষে সন্ধ্যায় ভারত ছাড়বেন মেসি।
এফএইচএম/