জোড়া গোল করে ইংল্যান্ডের দুরন্ত জয়ের নায়ক হ্যারি কেইন/টুইটার

জার্মানিকে হারানোর পর থেকেই চলছিল ‘ইটস কামিং হোম’ রব। সেটা এবার আরও জোরদার হলো বলে। হ্যারি কেইনের জোড়া গোলে ভর করে ইংল্যান্ড যে ইউরোর শেষ আটে ইউক্রেনকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে উঠে গেছে প্রতিযোগিতার শেষ চারে।

ম্যাচের আগে অবশ্য ‘ফেভারিট’ ইংল্যান্ডকে চোখরাঙানি দিচ্ছিল সাম্প্রতিক ও সামগ্রিক সব ধরণের ইতিহাসই। ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে দলের প্রত্যেকটা ম্যাচই গিয়েছিল অতিরিক্ত সময়ে। শেষ জয়টা ছিল সেই ১৯৯৬ সালে, যখন কোচ গ্যারেথ সাউথগেট জিতেছিলেন খেলোয়াড় হিসেবে। এরপর আরও দু’বার কোয়ার্টারে ফাইনালে খেলেছিল ইংল্যান্ড, একবারও পেরোতে পারেনি সে বৈতরণী। 

সে শঙ্কা পেছনে ফেলতে যার নৈপুণ্য সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল ইংল্যান্ডের, সেই হ্যারি কেইনই জ্বলে উঠলেন এদিন। বাম প্রান্ত ধরে রাহিম স্টার্লিং উঠে এসেছিলেন আক্রমণে। এরপর তার রক্ষণচেরা পাস খুঁজে পায় কেইনকে। প্রথম ছোঁয়াতেই তার দারুণ এক ফিনিশ ইংলিশদের এগিয়ে দেয় ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই। 

এরপর যেমন হয়ে এসেছে চলতি ইউরোয়, ইংল্যান্ডের অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক হয়ে পড়া; সেটাই হয়েছে বিরতির আগ পর্যন্ত। বিরতির বাঁশি বাজার আগ পর্যন্ত ইংলিশরা বলার মতো আক্রমণ পেল মাত্র একটি। ৩২ মিনিটে ডেকলেন রাইসের করা শটটি ঠেকাতে অবশ্য খুব একটা বেগ পেতে হয়নি ইউক্রেন গোলরক্ষককে। ১-০ গোলে এগিয়েই প্রথমার্ধ শেষ করে ইংলিশরা। 

বিরতির পরে যা হলো, ম্যাচের গতিবিধিই পালটে দেয় সেটা। চলতি ইউরোয় ইংল্যান্ড এর আগে চারটা ক্লিনশিট রেখে এ পর্যন্ত পর্যন্ত এসেছে বটে, কিন্তু মন ভরানো ফুটবলটা ঠিক খেলতে পারেনি। এক গোল দিয়ে খানিকটা রক্ষণাত্মক হয়ে পড়া, সেই এক গোলেরই জয়। এমনই ছিল কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের ইংল্যান্ড।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে লুক শর নেওয়া দারুণ এক ফ্রি কিক থেকে আরেক ‘হ্যারি’, ম্যাগুয়ারের গোল ইংল্যান্ডকে দেয় দুই গোলের লিড। প্রথমার্ধের শেষ দিকে ইউক্রেনের চাপের মুখে কিছুটা বিপাকে পড়া ইংল্যান্ডের হাতে চলে আসে ম্যাচের লাগাম। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। ইংলিশরা এগিয়ে গিয়েছে দুর্বার গতিতে।

জার্মানি ম্যাচে খেলা খানিকটা রক্ষণাত্মক ৪-২-৩-১ ছক থেকে দলকে এ ম্যাচে ৩-৪-৩ ছকে ফেরত এনেছিলেন ইংল্যান্ড কোচ। যা বাম প্রান্ত থেকে রাহিম স্টার্লিংকে এনেছিল আরেকটু বক্স বরাবর, আর লেফটব্যাক লুক শকে দিয়েছিল আরও বেশি আক্রমণাত্মক স্বাধীনতা। সেই স্বাধীনতা থেকেই তো এল তৃতীয় গোলের যোগান। বাম পাশ থেকে আসা তার ক্রসে মাথা ছুঁইয়েই ব্যক্তিগত দ্বিতীয় গোলটা করেন কেইন। ৩ গোলে এগিয়ে গিয়ে ইংল্যান্ড তখন রীতিমতো উড়ছে।

তৃতীয় গোলের পর যদি উড়ে থাকেন ইংলিশ সমর্থকরা, তাহলে চতুর্থটা নিশ্চিতভাবে সপ্তম আকাশেই তুলে দিয়েছিল তাদের। মেসন মাউন্টের করা দারুণ কর্নার থেকে ইউক্রেন গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে বল জালে পাঠান এদিন কেলভিন ফিলিপসের বদলে একাদশে জায়গা পাওয়া জর্ডান হেন্ডারসন। গড়ে ফেলেন এক রেকর্ডও। ক্যারিয়ারের ৬২তম ম্যাচে এসে প্রথম গোলের দেখা পেয়ে গড়েন ইংলিশ ফুটবলার হিসেবে প্রথম গোলের জন্য সবচেয়ে বেশি অপেক্ষা করার রেকর্ড। 

ম্যাচটা কার্যত শেষ হয়ে গেছে তখনই। এরপর ছিল কেবল শেষ বাঁশির অপেক্ষা। ৯০ মিনিট পেরোতে এক সেকেন্ডও দেরি করলেন না রেফারি, তাতেই রোমের এস্তাদিও অলিম্পিকোয় হাজির গোটা চল্লিশ হাজার দর্শক। 

আগের ম্যাচে জার্মানিকে হারিয়ে ১৯৬৬ ফিরিয়েছিল ইংলিশরা। চার গোল করে এদিন ফেরাল আরও এক স্মৃতিকে। প্রতিপক্ষের জালে ৪ গোল জড়ানোর কীর্তি যে সেই বিশ্বকাপ আসরের পর ভুলেই গিয়েছিল থ্রি লায়ন্সরা! টানা দুই লড়াইয়ে ১৯৬৬ ফিরেছে ২০২১ এ এসে, ফুটবল কি তাহলে সত্যিই ‘ঘরে’ ফিরছে?

এনইউ