ফাইনাল মানেই এভারেস্টসম চাপ। লড়াইটা যদি হয় সুপার ক্লাসিকো দে লাস আমেরিকাস, দক্ষিণ আমেরিকার ঐতিহ্যবাহী ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার লড়াই, তাহলে চাপটা বেড়ে যায় আরও বহুগুণে। সে চাপ তো আছেই, আছে মেসি-নেইমারদের মুখোমুখি লড়াইও। সব ছাপিয়ে কালকের কোপা আমেরিকার ফাইনালে নিয়ামক হয়ে যেতে পারে গৌণ সব লড়াইও।

ফাইনালের চাপ থাকবে মারাকানায়, সেটা অবধারিতই। তবে সে চাপকে জয় করার টনিকও আছে দুই দলেরই। সেমিফাইনালেই আর্জেন্টিনা কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ জিতে এসেছে, আর কোয়ার্টারে ব্রাজিল জিতলেও ম্যাচের অর্ধেকটা খেলেছে একজন কম নিয়ে। সব মিলিয়ে চাপের মুখে দুই দলের টেম্পারামেন্ট নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কথা নয় একটুও। 

এদিন ডাগআউটের লড়াইটা হবে একজন অভিজ্ঞের সঙ্গে একজন ‘তুলনামূলক’ অনভিজ্ঞ কোচের। তিতে যেখানে পেশাদার কোচের দায়িত্ব পালন করছেন সেই ১৯৯০ সাল থেকে, সে সময় আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্ক্যালোনি ক্যারিয়ার শুরুই করেননি! পূর্ণ কোচের ভূমিকা শুরু হয়েছে আর্জেন্টিনা থেকেই।

কোপা আমেরিকা ফাইনাল মঞ্চে জয়ের অভিজ্ঞতা আছে তিতের ঝুলিতে। অন্যদিকে স্ক্যালোনির আর্জেন্টিনা এই প্রথম এসেছে ফাইনালে। সব মিলিয়ে ফাইনালে কিছুটা এগিয়ে থাকবেন ব্রাজিল কোচ।

তবে আর্জেন্টিনাও কি খুব পিছিয়ে থাকবে? কোচ স্ক্যালোনির অধীনে শেষ কিছু দিনে দলটায় উন্নতি এসেছে বেশ, দলের ‘কম্বিনেশন প্লে’ও যথেষ্ট ভদ্রস্থ হয়েছে বেশ। অন্তত গেল কোপা আমেরিকার চেয়ে তো বটেই। সেবার অন্তত সেমিফাইনাল পর্যন্ত কোচ স্ক্যালোনি জানতেন না নিজের সেরা একাদশ কোনটা, কোন ছকেই বা খেলাবেন। এবার অন্তত সে ঝামেলা নেই তার। 

এবার অন্তত শুরুর একাদশটা ভালো বুঝে ফেলেছেন তিনি। ৪-৩-৩ থেকে ৪-২-৩-১ ছকে তার দলও নিজেদের ভূমিকা বুঝে পরিস্থিতির দাবি মেটাচ্ছে ভালোই। গোলবারের নিচে এমি মার্টিনেজ আছেন। রাইটব্যাক পজিশনে কিছুটা সন্দেহ আছে এখনো, প্রতি ম্যাচেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলাচ্ছেন মন্তিয়েল আর মোলিনাকে। ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো থাকলে রক্ষণে মিলত আরেকটু স্বস্তি, কিন্তু হাঁটুর চোটের কারণে তার খেলার সম্ভাবনা কমই বটে। ফলে রক্ষণে হেরমান পেজ্জেলার সঙ্গে দেখা যাবে নিকলাস অটামেন্ডিকে। লেফটব্যাকে মার্কোস আকুনইয়া আর নিকলাস টালিয়াফিকোকে খেলাচ্ছেন রোটেশনের ভিত্তিতে, তবে সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্স আর লিওনেল মেসির সঙ্গে তার বোঝাপড়ার কারণে কাল লেফট ফ্ল্যাঙ্কে থাকতে পারেন তিনিই। 

মাঝমাঠে গিদো রদ্রিগেজ, লিয়ান্দ্রো পারেদেস আর রদ্রিগো ডি পলকে দেখা যায়। তবে ফাইনালে যদি জিওভানি লো চেলসোকে সৃষ্টিশীল মিডফিল্ডারের ভূমিকায় দেখা যায় তাহলে তার রক্ষণচেরা সব পাস আর প্রতিপক্ষ রক্ষণের ফেলে আসা ফাঁকা জায়গা ব্যবহারের কারণে আক্রমণে আর্জেন্টিনার সম্ভাবনা বাড়ে আরও।

তবে সেক্ষেত্রে রক্ষণাত্মক স্থিতিকে কিছুটা অগ্রাহ্যই করতে হবে কোচ স্ক্যালোনিকে। ফলে ফাইনালে কোচের অ্যাপ্রোচের ওপর নির্ভর করছে মাঝমাঠে কাকে দেখা যাবে, আক্রমণাত্মক হলে লো চেলসো, আর রক্ষণাত্মক হলে গিদো রদ্রিগেজ। 

এদিকে আক্রমণে মেসির সঙ্গে থাকবেন লাওতারো মার্টিনেজ। লেফটউইং নিয়ে কিছুটা সন্দেহ আছে, তবে এখানে নিকলাস গঞ্জালেসকে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা সমূহ।

ব্রাজিল দলটাও ৪-২-৩-১ ছকে শেষ কিছু দিনে বেশ স্থিতিশীল। গোলমুখে নিয়মিত মুখ এডারসনকে দেখা যাবে এদিন। রক্ষণে থাকবেন দানিলো, মারকিনিয়োস, থিয়াগো সিলভা, রেনান লোডি। ক্যাসেমিরো আর ফ্রেডের কাছে থাকবে রক্ষণাত্মক মাঝমাঠের দায়িত্ব, তবে প্রতিপক্ষ আক্রমণে ডানপাশ থেকে ভেতরে ঢুকে আসা মেসিকে আটকানোই যে হবে তাদের প্রধান দায়িত্ব, তা আর বলে না দিলেও চলে। 

আক্রমণে এভারটন, লুকাস পাকেতা, নেইমার আর রিশার্লিসন। গ্যাব্রিয়েল জেসুস না থাকার কারণে একজন ক্লিনিকাল ফিনিশারের অভাব কিছুটা হলেও ভোগাতে পারে ব্রাজিলকে। তবে দলে যখন আছেন নেইমারের মতো গোলস্কোরার, তখন আর আক্রমণ নিয়ে ভাবনা কোথায়!

শক্তিসামর্থ্য আর দলীয় বোঝাপড়া দুই দলকেই রাখছে কাছাকাছি। সব মিলিয়ে ম্যাচে মেসি, নেইমারের মুখ্য লড়াই তো থাকবেই, ছোট ছোট সব গৌণ লড়াইও গড়ে দেবে ফাইনালের ভাগ্য।

এনইউ/এটি