ইতিহাস বলছে, ব্রাজিল আর্জেন্টিনার কাছে ফাইনাল হেরেছে মোটে একবার। তাও ১৯৩৭ সালে। এরপর তিন ফাইনালের দেখায় হারেনি, হেসেছে বিজয়ের হাসি। এমন দল কোপা আমেরিকার ফাইনালে আর্জেন্টিনার হারে কী করে? তবে ব্রাজিলের অনুপ্রেরণাটাই একটু উলটে দিয়ে আশা দেখাতে পারে আর্জেন্টিনাকে। এতদিন হয়নি, এবার হতে ক্ষতি কী?

ইতিহাসটা দেখুন। ফাইনালের হিসেবটা শুরুতেই জেনে গেছেন। নিজেদের মাঠে শেষ কোপা আমেরিকা ম্যাচটা ব্রাজিল হেরেছিল সেই নব্বইয়ের দশকে। আর্জেন্টিনা দলের সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় মেসিই তখনো হাঁটি হাঁটি পা পা করছেন, কোচ স্ক্যালোনি তখনো শুরু করেননি পেশাদার ফুটবল খেলাই!
এরপর আসুন প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে দুই দলের দ্বৈরথের হিসেবে। আর্জেন্টিনার সর্বশেষ জয়টা সেই ২০০৫ সালে, যখন মেসি ঠিক মেসি হয়ে ওঠেননি, হুয়ান রোমান রিকেলমে খেলতেন দলের দশ নম্বর জার্সি পরে, ঠিক তখন। 

সেবার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দলের জয়ের পর ব্রাজিল আর্জেন্টিনা কোপা আমেরিকা আর বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে খেলেছে আরও অনেক ম্যাচ। সে সবগুলোই শেষ হয়েছে সাম্যাবস্থায় আর নাহয় হলুদ উচ্ছ্বাসে। 

তার মানে দাঁড়াচ্ছে লিওনেল মেসিও কোনোদিন ব্রাজিলের বিপক্ষে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে জেতেননি। আর্জেন্টাইন অধিনায়কের তো আরও বহু দিক থেকেই হতাশায় পড়ার কথা! নিজে ফাইনাল খেলেছেন চারটা, হেরেছেন চারটিতেই। তার ফাইনালের পারফর্ম্যান্সটা দেখুন, এই সময়ে গোল-অ্যাসিস্ট তো দূরের কথা, স্বরূপেই তো খেলতে পারেননি তিনি! ক্যারিয়ারের সূর্য যখন মধ্যগগনে, তখনই পারেননি, এখন পারবেন কোত্থেকে?

তবে এবার কে জানে পাশার দানটা উলটে যায় কিনা! ‘ল অফ অ্যাভারেজ’ বলেও তো একটা কথা আছে নাকি? ‘ল অফ অ্যাভারেজ’ হচ্ছে একটা বিষয়, যেখানে পরিসংখ্যানে শ্রেয়তর বিষয়টাকে একটু পিছিয়ে রাখা হয়, প্রকৃতি ভারসাম্য পছন্দ করে কিনা! সেই পরিসংখ্যানে এগিয়ে আছে ব্রাজিল, পিছিয়ে আছে মেসির আর্জেন্টিনা। পরিসংখ্যানে পিছিয়ে বলেই ‘ল অফ অ্যাভারেজের’ খাতায় এগিয়ে আলবিসেলেস্তেরা।

এতদিন হেরেছেন ফাইনালে, প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে ব্রাজিলের কাছে, করতে পারেননি পারফর্মও। সেই ‘ল অফ অ্যাভারেজের’ হিসেব যদি করা হয় তাহলে তো আজই সে দিন, সে মাহেন্দ্রক্ষণ হওয়ার কথা!

কোপা আমেরিকার গতিপ্রকৃতিও বলছে তাই। চলতি টুর্নামেন্টে মেসি করেছেন চার গোল, করিয়েছেন আরও পাঁচটি। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েই নিয়ে এসেছেন আরও একটা কোপা আমেরিকার ফাইনালে। সে ধারাটা ফাইনালে ধরে রাখা গেলেই তো কেল্লা ফতে!

সেই ‘ল অফ অ্যাভারেজের’ কাঁটায় হোক, কিংবা অন্য কোনো নিয়ামকের জোরে, আর্জেন্টিনা জিতুক এটাই নিশ্চয়ই চাইবেন আলবিসেলেস্তে খেলোয়াড়-সমর্থকরা। সেটা হলে যে ২৮ বছরের শিরোপাখরাও যায় কেটে!

এনইউ