লিওনেল মেসির হাতে কোপা শিরোপা/রয়টার্স

কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুইফ বলেছিলেন, ‘দারুণ গোল স্কোরার আর দারুণ খেলোয়াড়ের মাঝে ফারাকটা বিস্তর’। লিওনেল মেসি যেন সে কথাটা প্রমাণে মরিয়া হয়েই নেমেছিলেন কোপা আমেরিকায়। আর্জেন্টিনাকে শিরোপা জেতানোর পথে কোপার সব পরিসংখ্যানে পাল্লা দিয়েছিলেন প্রতিযোগিতার সবার সঙ্গে, এমনকি গোল বাদে সব ক্ষেত্রে ছাড়িয়ে গেছেন ইউরোকেও!

কোপা আমেরিকার সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি, তা সম্ভবত কোপা আমেরিকার পোডিয়াম-পর্বেই জেনে গেছেন আপনি। সেখানে মেসি করেছেন ৪ গোল। ইউরোয় সর্বোচ্চ গোল ছিল রোনালদোর, ৫ টি। এই এক জায়গাতেই কেবল ‘হেরেছেন’ মেসি।

আর বাকি সব জায়গায়? ইউরোয় সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট ৪ টি, স্টিফেন জুবেরের; আর কোপায় মেসির অ্যাসিস্ট তার চেয়ে একটি বেশি। ফ্রি কিকে আর্জেন্টাইন অধিনায়ক গোল করেছেন দুটো, আর ইউরোয় একমেবাদ্বিতীয়ম ফ্রি কিক গোলটি মিকেল ড্যামসগার্ডের। 

৩৫এ পা দিলেও প্লেমেকিংয়ে মেসি এখনো আছেন বিশ্বমানেই, এ কথা হরহামেশাই শোনা যায় ইউরোপীয় সংবাদ মাধ্যমে। আন্তর্জাতিক আসরে তার ছাপ না ফেললে এ কথার যৌক্তিকতা কোথায়? মেসি ছাপ রেখেছেন। কি পাস, সুযোগ তৈরি, সফল ড্রিবল, নিখুঁত থ্রু বলের ক্ষেত্রেও টেক্কা দিয়েছেন ইউরোকে। 

চারটি ঘরানায় ইউরোর সর্বোচ্চ সংখ্যাগুলো হচ্ছে যথাক্রমে মার্কো ভেরাত্তি (১৪), কেভিন ডি ব্রুইনা (১৬), রাহিম স্টার্লিং (২৩), পেদ্রি গঞ্জালেসের (৪)। এ চারটি বিভাগে মেসির সংখ্যাগুলো দেখুন, যথাক্রমে ২২, ২৬, ৩৬, আর ৪। সব ক্ষেত্রেই পেছনে ফেলেছেন ইউরোকে। সব ক্ষেত্রেই যে সংখ্যাগুলো কোপার সর্বোচ্চ, তা বলাই বাহুল্য।

সর্বোচ্চ গোলদাতা বনে যাওয়ার ফলে মেসির হাতেই আসছে গোল্ডেন বুটটা, তা জানা হয়ে গিয়েছিল ফাইনাল শেষেই। আর ওপরের সব পরিসংখ্যান তাকে পাইয়ে দিয়েছে সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতিও। সঙ্গে যখন যোগ হয়েছে টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়নের সোনালী পদকটা, তখনই অনন্য এক কীর্তি গড়ে বসেছেন মেসি। 

সর্বোচ্চ গোলদাতা, সর্বোচ্চ গোলে যোগানদাতা, সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার আর চ্যাম্পিয়নশিপ পদক; ফুটবল ইতিহাসে কোনো টুর্নামেন্টে এমন সব অর্জন কেউ করতে পারেনি কখনোই। এখানে মেসিই প্রথম।

‘ইতিহাস’ কথাটায় হয়তো তার এ অর্জন আঁচ করাটা কঠিনই হতে পারে আপনার, কারণ এমন ‘ইতিহাস’ যে মেসির বেশুমার! সংখ্যাটা দেখুন একবার। ফুটবলে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ হয়েছে ২১টি। কোপা আমেরিকা এর আগে হয়েছে ৪৫টি, ইউরোর সদ্যসমাপ্ত আসরটা ছিল ১৬তম। আফ্রিকান নেশন্স কাপ ৩২ টি, কনকাকাফ গোল্ডকাপ ১৬টি, ১৮টি এশিয়া কাপ, আর ১০টি ওশেনিয়ান নেশন্স কাপ মিলিয়ে কোনো টুর্নামেন্টই এমন কিছু দেখেনি। ফুটবল ইতিহাসের ১৫৯তম আসরে এসে এ কীর্তি নিজের করে নিলেন মেসি। তবে সবচেয়ে বেশি তৃপ্তিটা যে শিরোপাটাই দিয়েছে, তা বোধহয় আর বলে না দিলেও চলে।

এনইউ/এটি