রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই দীর্ঘশ্বাস আরামবাগের কর্তাদের। চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের অবনমন অনুমেয় ছিল আগেই। আজ সোমবার কমলাপুর স্টেডিয়ামে উত্তর বারিধারার বিপক্ষে ০-১ গোলে হারার পর আনুষ্ঠানিকভাবেই অবনমন নিশ্চিত হলো আরামবাগের। 

চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে অবনমন দু’টি। ২১ ম্যাচ শেষে আরামবাগের পয়েন্ট মাত্র ৫। ১৩ দলের মধ্যে তাদের অবস্থান ১৩ তম। লিগের বাকি তিন ম্যাচ জিতলেও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ে এক পয়েন্ট পিছিয়ে থাকবে আরামবাগ। রেলিগেশন জোন এড়িয়ে ১১ নম্বরে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। 

১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবটি হ্যান্ডবল ও মাঝে মধ্যে অন্য ডিসিপ্লিনে খেললেও মূল পরিচিত ফুটবল দিয়ে। দেশের ফুটবলে অনেক ঘটনার সাক্ষী আরামবাগ আবার অনেক কৃতি ফুটবলারের জন্মও দিয়েছে আরামবাগ। দেশের বাইরে থেকে ট্রফি আনার ক্ষেত্রে আরামবাগের নাম সবার আগে। ১৯৮১ সালে আনফা কাপে আরামবাগ রানার্স আপা হয়েছিল। 

২০০৭ সাল থেকে শুরু হওয়া পেশাদার লিগে এ নিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো অবনমনে পড়ল আরামবাগ। ২০১২-১৩ মৌসুমে প্রথম অবনমিত হয়েছিল। দুই বছরের বেশি সময় বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশীপ লিগে ছিল আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ। ২০১৫-১৬ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নশীপ লিগে রানার্স আপ হয়ে আবার প্রিমিয়ার লিগে ফেরত আসে আরামবাগ। 

২০১৬-১৯ এই তিন বছর আরামবাগের স্বর্ণযুগই বলতে হবে। তৎকালীন সভাপতি মমিনুল হক সাঈদ আরামবাগকে ভিন্ন রুপ দিয়েছিলেন। দেশের ফুটবলের সেরা দুই কোচ সাইফুল বারী টিটু ও মারুফুল হক আরামবাগের কোচ ছিলেন। লিগে সেভাবে সাফল্য বা ধারাবাহিকতা না পেলেও তাদের সময়ে টুর্নামেন্টে দারুণ সাফল্য দেখিয়েছিল আরামবাগ। টিটুর অধীনে ফেডারেশন কাপে রানার্স আপ হয়েছিল আরামবাগ। পরের মৌসুমে মারুফুল হকের অধীনে দেশি ফুটবলারদের নিয়ে হওয়া স্বাধীনতা কাপে চ্যাম্পিয়ন হয় আরামবাগ। সেই দলে খেলা মোহাম্মদ জুয়েল, রবিউল হাসান, জাফর ইকবালরা জাতীয় দলেও প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। মারুফ যে বছর আরামবাগে ছিলেন সেই বছরেই বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জিপিএস পদ্ধতি ব্যবহার হয়। ২০১৬-১৯ এই সময়টায় আরামবাগ ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে সবচেয়ে সুন্দর সময় কাটিয়েছে। 

২০১৯ সালের শেষ দিকে ক্যাসিনো কান্ডে আবার বিপরীত চিত্র দেখেছে ক্লাবটি। সভাপতি মমিনুল হক সাঈদ ক্যাসিনো কান্ডের জন্য দেশের বাইরে চলে যান। এরপর থেকে অভিভাবকশুন্য ক্লাব। পাশাপাশি অস্তিত্বের সংকটে পড়ে। এলাকার লোকজনের চাঁদা, বসুন্ধরা কিংসের সহায়তা ২০২০ সালে দল গড়ে আরামবাগ। ওই বছর করোনার জন্য লিগ না হওয়ায় কোনোভাবে বেচে যায় ক্লাবটি। 

চলতি বছর সবচেয়ে দুর্যোগপূর্ণ সময় গেছে ক্লাবটির। মাঠ ও মাঠের বাইরে খুবই বাজে সময়। আর্থিক সংকটের জন্য ক্লাবটি বিশেষ এক ব্যক্তির কাছে দিতে বাধ্য হয়। সেই ব্যক্তি খেলোয়াড়,কোচ ঠিক করেন। পরবর্তীতে বেটিং কান্ডে জড়িয়ে পড়ে এই ক্লাব। পাতানো খেলা ঘরোয়া ফুটবলে পরিচিত থাকলেও বেটিং খুবই নতুন। যা আরামবাগের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছে এবার এমনটাই ধারণা দেশের ফুটবলসংশ্লিষ্টদের। 

দ্বিতীয় লেগে ক্লাবের দায়িত্বে ফেরেন পুরোনোরা। দ্বিতীয় লেগে খেলোয়াড়,কোচ বদল করেও ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। শুধুমাত্র দ্বিতীয় লেগে শেখ জামালকে হারিয়ে খানিকটা চমক দিয়েছিল ক্লাবটি। আজ উত্তর বারিধারার বিরুদ্ধে অস্তিত্ব রক্ষার ম্যাচে ১-০ গোলে হেরে আবার অবনমিত হলো আরামবাগ। দেশের ফুটবলে সর্বোচ্চ স্তরে ফিরতে কত দিন সময় নেয় এবার সেটাই দেখার বিষয়। 

এজেড/এটি