মারিও মানজুকিচ/ফাইল ছবি

চোটাঘাতের সঙ্গে ফুটবলারদের সখ্য নতুন কিছু নয়। তার কাছে হেরে ফুটবলকেই বিদায় বলে দেওয়ার নজিরও নেহায়েত কম নয়। সেই ঘটনাটাই ঘটেছে বছর তিনেক আগে ক্রোয়েশিয়ার হয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলা মারিও মানজুকিচের সঙ্গে। 

পেশাদার ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন বায়ার্ন মিউনিখ ও জুভেন্তাসের সাবেক এই ফরোয়ার্ড। শুক্রবার রাতে ইনস্টাগ্রাম পোস্টে সব ধরনের পেশাদার ফুটবল থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি। 

২০১০ সালে ডিনামো জাগরেবের হয়ে ক্যারিয়ারে উত্থানের শুরু। এরপর ভলফসবুর্গ হয়ে বায়ার্নে আসেন তিনি। ২০১৩ সালে তার গোলেই বায়ার্ন মিউনিখ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে হারায় বরুসিয়া ডর্টমুন্ডকে। অনেক ইতিহাস গড়ার সেই শুরু মানজুকিচের। 

বায়ার্নে অবশ্য খুব বেশি দিন টেকেননি, শুরুতে মারিও গোমেজ আর পরে রবার্ট লেভান্ডভস্কির আগমনে সেন্টার ফরোয়ার্ড পজিশনে অনেকটা দ্বিতীয় পছন্দের স্ট্রাইকারই হয়ে পড়েন তিনি। সে কারণেই ক্লাব বদলালেন আবার। 

পরের গন্তব্য হলো অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, এরপর জুভেন্তাস। ২০১৫ সালে যোগ দিয়ে দলটির হয়ে একটা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলেছেন তিনি, ২০১৩ সালের সুপার মারিও বনে যাওয়ার ঝলকও দেখিয়েছিলেন দুর্দান্ত এক বাইসাইকেল কিকে গোল করে, কিন্তু ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর আলোয় ম্লান হয়ে ২০১৭ সালের সেই ফাইনালে রুপো রঙা পদকেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। 

তবে ঘরোয়া ফুটবলে জুভেন্তাসের হয়ে জিতেছেন লিগ, কাপ, সুপার কাপ। সব ছাপিয়ে গেছে তার জাতীয় দলের অর্জন। তার হাত ধরেই যে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলে ক্রোয়েশিয়া। 

ইনস্টাগ্রামে বিদায় বলতে গিয়ে ছোট্টবেলার মানজুকিচকে সেসব কথাই শুনিয়েছেন ‘বিদায়ী মানজুকিচ’। লিখলেন, ‘তুমি অনেক বড় মঞ্চে অনেক গোল করবে, তুমি অনেকগুলো বড় ক্লাবের হয়ে বড় বড় শিরোপা জিতবে। নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করবে, ইতিহাস লিখবে।’

নিজের সাফল্যের পেছনে যারা ছিলেন, তাদেরও ভুললেন না মানজুকিচ। বললেন, ‘তুমি সফল হবে, কারণ তোমার আশেপাশের মানুষ- কোচ, সতীর্থ, ভক্ত, পরিবার, এজেন্ট, বন্ধুরা; সবাই তোমার পাশে থাকবে, সেজন্যে সারা জীবন কৃতজ্ঞও থাকবে তুমি।’

তবে নিজের সাফল্যের পেছনে বড় যে কারণ, নিজের চেষ্টার কথাও তুলে ধরলেন নিজের ছোট্টবেলার স্বত্বার কাছে। লিখলেন, ‘সবকিছুর উর্ধ্বে যেটা, তুমি সফল হবে কারণ তুমি সবসময় তোমার সেরাটা দিয়ে যাবে। দিনশেষে এটাই তোমাকে গর্বিত করবে।’

এরপরই উঠে এল অবসরের কথাটা। তিনি লিখলেন, ‘কখন অবসর নিতে হবে, সেটা তুমি নিজেই বুঝে যাবে। তবে তোমার কোনো আফসোসও থাকবে না। ফুটবল তোমার জীবনের একটা অংশ হয়েই থাকবে, তবে জীবনের নতুন অধ্যায়ের দিকেও তোমাকে মনোযোগী হতে হবে।’

জীবনের সেরা অর্জনটার কথাও বলতে ভুললেন না মানজুকিচ। লিখলেন, ‘বিশেষ দ্রষ্টব্য- যদি তুমি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামো, ১০৯তম মিনিটের সময় তৈরি থেকো।’ ২০১৮ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে যে তার গোলেই ইংলিশদের স্বপ্ন ভেঙে ফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়েছিল ক্রোয়েশিয়া!

তবে সেই স্বপ্নের আসরের পর থেকে তার ক্যারিয়ারের গ্রাফটা কেবল নিচের দিকেই নেমেছে। জুভেন্তাসে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর আগমনে কিছুটা ব্রাত্যই হয়ে পড়েন তিনি। এরপর আদ দুহাইলে যোগ দেন গেল মৌসুমের শুরুতে, ছয় মাস পর এসি মিলানের হয়ে ফেরেন ইতালিতে, কিন্তু চোট তাকে খেলতে দিলো কই? শেষমেশ সেই চোটে অতিষ্ঠ হয়ে ফুটবলকেই বিদায় বলে দেন ক্রোয়াট এই ফরোয়ার্ড।

এনইউ