মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব/ফাইল ছবি

দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহামেডান। গত এপ্রিলে নতুন পরিচালনা পর্ষদ আসার পর ক্রীড়াঙ্গনের প্রত্যাশা ছিল সাদা কালোরা সব ডিসিপ্লিনই চ্যাম্পিয়ন দল গড়বে। চলমান হকি দলবদলে ক্লাবের হকি কমিটির দুইটি পক্ষের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থাকার পরও জিমি, আশরাফুল, কৌশিক, সারোয়ারদের নিয়ে সেরা দলই গড়েছে মোহামেডান। প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের আগামী মৌসুম অনেক দূরে। এরপরও মাস ছয় আগেই সাকিব, মুশফিক, রিয়াদ, সৌম্যদের নিশ্চিত করে চ্যাম্পিয়ন দল গঠন করেছে মতিঝিল এলাকার ক্লাবটি। ক্রিকেট, হকির তুলনায় ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন দল গঠনে মোহামেডান অনেকটাই পেছনে।

মোহামেডান প্রিমিয়ার ফুটবল লিগে চমক দেবে এমনটাই প্রত্যাশা ছিল সমর্থকদের এবং ক্রীড়াঙ্গনে। মোহামেডান সেই অর্থে ফুটবল দলবদলে চমক দিতে পারেনি। চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস,আবাহনী থেকে এখনো কোনো ফুটবলারকে নিশ্চিত করতে পারেনি মোহামেডান। উল্টো মোহামেডানের নির্ভরযোগ্য ফুটবলার হাবিবুর রহমান সোহাগকে নিয়েছে অন্য ক্লাব। দেশীয় অভিজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য ফুটবলার দলে না ভেড়ানোয় কাগজে-কলমে মোহামেডান এখনো চার-পাঁচ নম্বরে অবস্থান। কিরগিজস্তান থাকা জাতীয় দলে মোহামেডানে বর্তমান খেলোয়াড় সংখ্যা মাত্র এক। আসন্ন মৌসুমেও জাতীয় ফুটবলারদের সেভাবে টানতে পারেনি সাদা কালোরা। যদিও ক্লাবটির কর্মকর্তারা আশা ছাড়ছেন না, উদীয়মান তিনজনকে ভেড়াতে এখনো চেষ্টা চলমান।

স্থানীয় ফুটবলাররা ইতোমধ্যে নিজেদের আসন্ন মৌসুমের ঠিকানা খুঁজে নিয়েছেন। তাই মোহামেডানের পাখির চোখ বিদেশিদের উপরই। মোহামেডানের অন্যতম পরিচালক ও ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোঃ আলমগীর দুবাই থেকে বলেন, ‘আমরা বিদেশিদের মধ্যে গত মৌসুমের সুলেমানকে রাখছি। বাকি তিন জন উঁচু মানের বিদেশি আনার চেষ্টা করছি। ভালো মানের বিদেশি এবং এই মৌসুমে আমাদের যারা ভালো খেলেছে এর সমন্বয়ে আমরা ভালো দল গঠনের চেষ্টা করছি।’ 

বিদেশিদের উপর নির্ভরতার ব্যাখাও দিলেন, ‘আমাদের কোয়ালিটি ফুটবলারের সংখ্যা কম। সব মিলিয়ে ২৫-৩০ জন। আমাদের পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নিয়েছে ফুটবলের প্রথম লেগ শেষে। প্রথম লেগ শেষ হওয়ার আগেই অনেক ক্লাব প্রাথমিক আলোচনা সম্পন্ন করেন। ফলে আমাদের বিদেশিদের উপরই বাড়তি জোর দিতে হচ্ছে।’

গত তিন বছরে ঘরোয়া ফুটবলে বসুন্ধরা কিংস বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলার, আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে খেলা ফুটবলার এনে অন্য দলগুলোর সঙ্গে নিজেদের অনেক পার্থক্য তৈরি করে। মোহামেডান সেই মানের বিদেশি না আনতে পারলে বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কঠিনই হবে। এই প্রসঙ্গে ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা দ্বিতীয় লেগে দশ জন নিয়েও বসুন্ধরার সঙ্গে দুর্দান্ত খেলেছিলাম। কাগজে-কলমে একটি বিষয় মাঠের খেলা ভিন্ন। আমরা একজন বিদেশি ভালো মানের গোলরক্ষকও খুজছি। গোলকিপিংয়ে আমাদের গত মৌসুমে সমস্যা হয়েছে।’

এখন ক্লাবগুলো দেশি ফুটবলারদের আগে নিশ্চিত করছে। বিদেশিদের ট্রান্সফার উইন্ডো এখনো ঠিক হয়নি। কয়েক দিনের মধ্যে মোহামেডানের ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান ক্লাবের পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনা করে উঁচু মানের বিদেশি ফুটবলার আনার ব্যাপারে কার্যকরি পদক্ষেপ নেবেন। 

উত্তর বারিধারার সুমন রেজা, পুলিশের মোহাম্মদ জুয়েল মোহামেডানে খেলার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। ক্লাব তাদের হাতে অর্থ তুলে দিতে কিছুটা দেরি করায় বিষয়টি ঝুলে যায়। বসুন্ধরা কিংস দুই একজন ফুটবলার এবার ছেড়ে দিতে পারেন। সেই ছেড়ে দেয়া ফুটবলারদের জায়গা হতে পারে মোহামেডানে।   

২০১৮ সালে প্রিমিয়ার ফুটবলে বসুন্ধরা কিংস আসার পর একচ্ছত্র আধিপত্য তাদেরই। ফুটবলারদের পারিশ্রমিকও অন্য ক্লাবগুলোর ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে বসুন্ধরা কিংস আসার পর। আসন্ন মৌসুমে তাদের হ্যাটট্রিক শিরোপা। এজন্য নিজেদের খেলোয়াড়দের আরো আগেভাগেই নিশ্চিত করেছে ক্লাবটি। বসুন্ধরা,শেখ রাসেলের চেয়ে মোহামেডানের দলবদলের বাজারে পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ অর্থনৈতিক। মোহামেডান একটি সুনিদিষ্ট বাজেট/অঙ্কের বেশি ফুটবলাররেদর সঙ্গে দরদামে যাচ্ছে না। 

এই প্রসঙ্গে ক্লাবটির পরিচালক ও ফুটবল কমিটির সম্পাদক আবু হাসান চৌধুরি প্রিন্স বলেন, ‘বসুন্ধরা, শেখ রাসেল মূলত ফুটবল দলই গঠন করে। আমাদের মোহামডোনের এক সঙ্গে ফুটবল, ক্রিকেট ও হকি নিয়ে কাজ চলছে। নানা পারিপাশ্বিকতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা স্ব স্ব খেলায় সেরা দল গঠনের লক্ষ্যে অবিচল ।’ মোহামেডান ক্লাবের বর্তমান কমিটিতে বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক, শিল্পপতি, রাজনীতিবিদ রয়েছেন এরপরও ফুটবলের দলবদলে এখনো নূন্যতম চমক না থাকায় ফুটবলসংশ্লিষ্ট ও ক্রীড়াঙ্গনের অনেকেই বিস্মিত। 
  
মোহামেডানের ক্লাবের জনপ্রিয়তার  উৎস ফুটবল। আশি-নব্বইয়ের দশকে ক্লাবের ফুটবল সমর্থকরাই মূলত মোহামেডানের হকি ও ক্রিকেট দল সমর্থন করতেন। এখন ঘরোয়া ক্রিকেটে ক্লাবের সেই অর্থে সমর্থক নেই। সাকিব, মুশফিক, মাশরাফিদের মতো তারকারা যখন যে ক্লাবে খেলেন সমর্থকরা ওই দলকেই সমর্থন করতে দেখা যায়। হকি ও ফুটবলে এখনো মোহামেডানের সেই সমর্থক আছে। ফুটবলে মোহামেডান সমর্থকদের প্রত্যাশা শেষ পর্যন্ত কতটুকু পূরণ করতে পারে সেটাই দেখার বিষয়। 

এজেড/এটি