মেসি/ফাইল ছবি

তিনি বরাবরই অন্তর্মুখী এক মানুষ। কথার ঝড়ে কাউকে উড়িয়ে দেওয়া অন্তত লিওনেল মেসিকে দিয়ে হয়নি। তাই বলে কারও আচরণে মনে যে অভিমানের মেঘ জমেনি তা কিন্তু নয়। কোপা আমেরিকা জয়ের পর সব কষ্ট-অভিমানের মেঘ গলতে শুরু করেছে। চোখে ভাসছে অনেক অপ্রিয় দৃশ্য।

একের পর এক ফাইনালে হার, একের পর এক ‘ব্যর্থতা’। শিরোপার এত কাছে গিয়েও না পাওয়ার বেদনা তো মনে ছিলই, টিভি খুললেই মেসি দেখেছেন দলকে জেতাতে না পারার কারণে কুশপুত্তলিকাও পোড়ানো হচ্ছে তার নিজ দেশ আর্জেন্টিনায়। সংবাদমাধ্যমও রীতিমতো ‘ব্যর্থ’ তকমা লাগিয়ে দিয়েছিল তার ওপর। সেসব এখনো মনে পড়ে মেসির। কোপা জয়ের দুই মাস পর জবাব দিলেন এবার। 

ইএসপিএন আর্জেন্টিনাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেসি বললেন, ‘এতোসব ভোগান্তির পর অবশেষে জাতীয় দলের হয়ে কিছু জেতাটা বিশেষ কিছু ছিল। এর আগ পর্যন্ত সাংবাদিকদের একাংশ আমাকে ব্যর্থ হিসেবে দেখছিল, কারণ আমি নাকি জাতীয় দলের জার্সির জন্য বিশেষ কিছু অনুভবই করি না! অথচ দলকে শিরোপা এনে দেওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টাটাই করেছি প্রতিবার!’

এমন বঞ্চনা যখন শেষ হলো, তখন মাঠে ছিল না দর্শক। নিদেনপক্ষে পরিবারকেও পাশে পাননি মেসি। অথচ আর্জেন্টাইন জাদুকর যে পরিবার অন্তঃপ্রাণ, এটা তো সবারই জানা। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতলেন, মিটল দলের খরা, তখন স্ত্রী আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো আর তিন সন্তান থিয়াগো, মাতেও, সিরো ছিল না তার পাশে। সেজন্যে আফসোসও আছে তার। 

মেসি কিছুটা আক্ষেপ নিয়ে বললেন, ‘কোপা আমেরিকায় অনেকদিন পরিবারের বাইরে থাকতে হয়েছিল। এমনকি উদযাপনেও তারা ছিল না। উদযাপনের সময় যদি আমার স্ত্রী ও সন্তানরা যোগ দিতে পারত, তাহলে আরও ভালো লাগত।’

কোপা জেতার পর অবশ্য স্ত্রী-সন্তান ও বন্ধুদের নিয়ে এবারের ছুটিটা বেশ আনন্দে কেটেছে মেসির। মেসি জানালেন, এমন ছুটি আর কাটাননি কখনোই। বললেন, ‘এবারের ছুটিটা ভিন্ন স্বাদের ছিল। খুবই আনন্দের একটা সময় কেটেছে এবার। আগের কোনো বারের মতো নয়, তখন প্রথম ১৫ দিন দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়েই কাটাতে হতো।’

কোপা জয়ের পর এবারই প্রথমবারের মতো মেসি এসেছেন জাতীয় দলের হয়ে খেলতে। ব্যক্তিগত ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে প্রকাশ করছেন তার কিছু মুহূর্তও। তাতে যেন দেখা মিলছে অন্য এক মেসির। এমন হাসি যে আর কখনো দেখা যায়নি তার মুখে। 

জাতীয় দলের হয়ে খেলাটা এমন করে এর আগে মেসি কখনো উপভোগ করেছেন কীনা কে জানে। মেসি নিজেই বললেন, ‘এখন আপনি যা দেখছেন, তাই সুন্দর লাগছে; কারণ আমরা কোপা আমেরিকা জিতেছি। এটা সুন্দর, কারণ অনেক ভোগান্তির পর এই শিরোপা এসেছে। সবকিছুর পরে এখন জার্সিতে চ্যাম্পিয়নের ব্যাজটা দেখি, তখন বেশ ভালো লাগে; অন্যরকম একটা অনুভূতি হয়।’

বয়স বাড়ছে, ক্ষয়ও তেড়েফুঁড়ে আসছে ধেয়ে। ক্যারিয়ারের শুরুর দুরন্ত মেসিকে এখন দেখা যায় না খুব একটা। আগের মতো আর দারুণ ড্রিবলে ছিটকে দেন না প্রতিপক্ষের চার পাঁচ জনকে। বরং মাঝমাঠ থেকে খেলা গড়ে দেওয়াতেই যেন বেশি স্বচ্ছন্দ তিনি। 

এ বিষয়ে মেসির মূল্যায়ন, ‘আজ যখন জাতীয় দলের হয়ে খেলছি, তখন খেলোয়াড় হিসেবে আমি অনেক বদলে গেছি। এখন আমি আমার খেলায় অনেক কিছু যোগ করতে চাই। সতীর্থদের ছন্দে তাল মেলাতে চাই।’

এটি/এনইউ