সাফ থেকে বাংলাদেশ দলের বিদায়ে হতাশায় মুষড়ে পড়েন মহসিন

জাতীয় ফুটবল দলে খেলোয়াড়-কোচ আসা যাওয়ার মধ্যে থাকেন। টিম অ্যাটেনডেন্ট মোঃ মহসীন জাতীয় ফুটবল দলের একনিষ্ঠ সঙ্গী প্রায় দুই দশকের বেশি সময়। বাংলাদেশের ফুটবলে সাফল্যের গল্প কমই, ফলে অধিকাংশ সময়ই মহসিনের সঙ্গী হয়েছে হতাশা।

গতকাল বুধবার মালে স্টেডিয়ামে শেষ মুহূর্তের পেনাল্টিতে বাংলাদেশের ফাইনালের স্বপ্নের ভেঙে গিয়েছে। সেই স্বপ্ন ভঙ্গের হতাশায় সবচেয়ে বেশি মুষড়ে পড়েছিলেন টিম অ্যাটেনডেন্ট মহসিন। তার অঝোর কান্নার ছবি বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণের প্রতীক হয়ে সামাজিক মাধ্যম ঘুরছে। 

মাঠে অঝরো কান্নারত মহসিন রাতেও ঘুমাতে পারেননি। ১৬ বছর পর সাফের ফাইনাল কিভাবে হাতের মুঠো থেকে ফস্কে গেল। এই ভাবনায় বারবার ফিরে এসেছে তার মনে। যখন কিছুটা চোখ বোজার চেষ্টা করেছেন তখন স্বপ্নে এসেছে ম্যাচের ঘটনাগুলো। 

সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও বাফুফে সদস্য সত্যজিত দাশ রুপু এখন জাতীয় দলের ম্যানেজার। তিনিও সারারত ছটফট করেছেন, ‘আমরা আসলেই কেউই ঘুমাতে পারিনি। এমনভাবে বিদায়ের পর রাতে ঘুমানো যায় না। আমি কিছু সময় পায়চারি করেছি। ফুটবলাররাও ঘুমাতে পারেনি।’ 

অন্য সবার চেয়ে যেন মহসিনের আবেগটা একটু বেশিই। মহসিন সম্পর্কে রুপু বলেন, ‘মহসিন সব সময় জাতীয় দলের সঙ্গে থাকে। তার বিশেষ ভালোবাসা ও আবেগ দলের প্রতি। সে দলের অনুশীলনের অন্যতম অনুষঙ্গ। অনুশীলন শুরুর আগে সব কিছু ঠিকঠাক করে। খেলোয়াড়-কোচদের কখন কি প্রয়োজন। তার এত অভিজ্ঞতা সব কিছু চাওয়ার আগেই পূরণ করতে পারে।’ 

এই মালে সাফ খেলতে আসা কোনো ফুটবলার ও কোচিং স্টাফের কারো ২০০৫ সালের করাচি সাফের ফাইনাল ম্যাচে থাকার অভিজ্ঞতা ছিল না। একমাত্র মহসিনই ছিলেন সেই ১৬ বছর আগে করাচির মাঠে। দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ খ্যাত সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ ছিল আবার ফাইনাল খেলার দ্বারপ্রান্তে। 

শেষ মুহূর্তে স্বপ্নভঙ্গ হওয়ায় মহসিনের দুঃখের মাত্রাটা বেশি। শেষ দিকে ম্যাচ হেরে যাওয়া, পয়েন্ট হারানো ও টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন কিছু নয়। এর আগেও অনেকবার হয়েছে। ২০১৫ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপেই বাংলাদেশ মালয়েশিয়া অনুর্ধ্ব ২৩ দলের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে হেরে রানার্স আপ হয়েছিল। 

কয়েক মাস আগে নেপালে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালেও হেরেছিল বাংলাদেশ। এ রকম অসংখ্য হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী মহসিন। সাফের মতো আসরে এত বছর পর ফাইনাল খেলার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার কষ্টটা অন্য সবের চেয়ে বেশি। তাই হাউমাউ করে কাঁদছিলেন তিনি।

নব্বইয়ের দশকে তার ফুটবলে পথচলা শুরু বলবয় হিসেবে। ধীরে ধীরে নিজের নিবেদন ও আন্তরিকতা দিয়ে জাতীয় দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। ১৯৯৯ সালে এসএ গেমসের ফুটবল স্বর্ণ জয়ী দলের সঙ্গে কাঠমান্ডুতে যেতে পারেননি। তবে ঢাকায় সেই ক্যাম্পে ছিলেন মহসিন। 

তার জীবনটা বদলে দিয়েছেন মূলত অস্ট্রিয়ান কোচ জর্জ কোটান ও প্রয়াত সংগঠক বাদল রায়। কোটানই তাকে জাতীয় দলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক সব বিষয়ে যুক্ত করেন। আগে জাতীয় দলের সঙ্গে মহসিন দেশে কাজ করলেও বিদেশ সফরের সময় তাকে ফেডারেশন পাঠাত না। প্রয়াত সংগঠক বাদল রায়ই মহসিনকে দলের সঙ্গে বাইরে পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ২০০২ সালে মহসিন ভূটানে জিগমে দর্জি টুর্নামেন্টে কোটানের সঙ্গে যান। এরপর থেকে জাতীয় দলের সব সফরেই রয়েছেন মহসিন। 

২০০৩ সালে আমিনুল-আলফাজরা মহসিনের মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন সাফের চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জিতে। মহসিন মাঠে থেকে আরো দুই ট্রফির সাক্ষী হয়েছেন ২০০৫ ও (করাচি সাফে রানার্স আপ) ২০১০ সালে (এসএ গেমসে ফুটবলে স্বর্ণ)। ২০১১ সালের পর থেকে সাফ কিংবা বহুজাতিক টুর্নামেন্টে জাতীয় দল কিংবা অলিম্পিক দলের নেই কোনো ট্রফি। 

জামালরা মহসিনের করাচি স্মৃতি ফিরিয়ে আনার মাত্র কয়েক মিনিট দূরত্বে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত পারেননি। দলের অনুশীলন, খেলোয়াড় কোচদের পেছনে অনেক খাটেন মহসিন। সম্মানীও খুব বেশি নয়। দলের সাফল্যেই যেন তার তৃপ্তি। আমিনুল-মামুনুলদের পর মহসিনের মুখে হাসি ফোটাবেন কারা ?

এজেড/এনইউ/এটি