বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয়ে গেছে। তবু যেন এই ম্যাচে তিনটি পয়েন্ট পেতেই মরিয়া ছিল ব্রাজিল। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হচ্ছে দল, এমন ম্যাচে কি জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবা যায়? তার ওপর গেল জুলাইয়ে তাদেরই মাঠে তাদের হারিয়ে কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতেছিল আর্জেন্টিনা। সে ‘প্রতিশোধ’ নেওয়া হয়নি ব্রাজিলের। লিওনেল মেসিদের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রয়ে বাধ্য হতে হয়েছে নেইমারহীন ব্রাজিলকে।

দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর এই লড়াইকে লাতিন আমেরিকায় ডাকায় হয় সুপারক্লাসিকো নামে। তবে এবারের ক্লাসিকোর ‘ক্লাসিক’ তকমা যেন কিছুটা মলিন হয়েছিল নেইমারের অনুপস্থিতিতে। আগের দিনই চোট পান তিনি। ফলে এই ম্যাচ খেলতে আর্জেন্টিনার মাটিতে পা-ই রাখেননি পিএসজি তারকা। ব্রাজিল থেকে সরাসরি চলে গেছেন প্যারিসে। 

নেইমার ছিলেন না; মাঝমাঠে যার সঙ্গে গড়ে ওঠে তার রসায়ন, সেই লুকাস পাকেতাও ছিলেন এদিন তার ছায়া হয়েই। নিষেধাজ্ঞার কারণে ছিলেন না ক্যাসেমিরো, তার বদলে দলে আসা ফ্যাবিনিও ছাপ ফেলতে পারেননি দলের মাঝমাঠে। ব্রাজিলের বলের দখলেও ছাপ পড়েছে বেশ। শুরুর দশ মিনিটে সেলেসাওরা বলের দখলেই ছিল কেবল মিনিট তিনেকের মতো সময়। পরে সেটা কাটিয়ে উঠেছে দলটি, তবে পুরো ম্যাচে বলের দখলে আর্জেন্টিনার আধিপত্যই ছিল বেশি। খেলা শেষে ৫৭ শতাংশ বলের দখল সাক্ষ্য দেয় তারই। 

ওদিকে আর্জেন্টিনা নিজেদের চিরচেনা ৪-৩-৩ ছকে বলের দখল উপভোগ করেছে বেশ। চোট মাঝমাঠে ফিরেছেন লিয়ান্দ্রো পারেদেস, মেসিও ফিরেছিলেন শুরুর একাদশে। তবে সুযোগটা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনি আলবিসেলেস্তেরা। ম্যাচের অর্ধেকেরও বেশি সময় বলের দখল নিয়েও যে গোলের দেখা পায়নি দলটি!

তবে ব্রাজিল দলে নেইমার না থাকলেও অন্তত আক্রমণে আর্জেন্টিনার চেয়ে পিছিয়ে ছিল না তিতের দল। আর্জেন্টিনার মতোই ৯টি শট নিয়েছে দলটি, যদিও মেসিদের চেয়ে একটি কম, দুটো শট ছিল লক্ষ্যে। ফাউলের দিক থেকে এ ম্যাচে দুই দলই লড়েছে সমানে সমানে। ২১টি করে ফাউল করেছে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনা। তাতে একটা রেকর্ডও গড়া হয়ে গেছে দল দুটোর, কনমেবল অঞ্চলের চলতি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে এরচেয়ে বেশি ফাউল হয়নি আর কোনো ম্যাচেই।

এ তো গেল কেবল সংখ্যার খেলা, কিন্তু ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার এ দ্বৈরথ তো বিশ্বজোড়া খ্যাতি পেয়েছে ভিন্ন কারণে; দারুণ সুন্দর, আক্রমণাত্মক ফুটবলের কারণে। সে আক্রমণাত্মক ফুটবলটাই যেন দেখা গেল না ম্যাচে। দুই দলই ছিল নিজেদের ছায়া হয়ে।

প্রথমার্ধে বলার মতো আক্রমণ হয়েছে কেবল দুটো। প্রথমটা এলো ব্রাজিলের পক্ষে। মাঝমাঠ থেকে পাকেতার দারুণ এক পাস বক্সের একটু আগে খুঁজে পায় ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে। যদিও আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে প্রায় একা পেয়ে যাওয়ার পরও বলটা লক্ষ্যেই রাখতে পারেননি রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড। বিরতির একটু আগে রদ্রিগো ডি পলের কাছে এসেছিল সুযোগ। তবে ব্রাজিল রক্ষণ সেটা সামলেছে ভালোভাবেই।

বিরতির পরও চিত্রটা বদলায়নি খুব একটা। ব্রাজিল দুটো সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি। প্রথমটা অবশ্য ভাগ্যের ফেরে, মিডফিল্ডার ফ্রেডের বক্সের বাইরে থেকে করা শট ফেরে ক্রসবারে লেগে। ৭০ মিনিটে ভিনিসিয়াস সুযোগ পেলেও তা তুলে দেন গোলরক্ষকের হাতে। আর্জেন্টিনার সুযোগটা এসেছিল ম্যাচের অন্তিম সময়ে। বক্সের একটু বাইরে ডি পলের পাস থেকে মেসির নিচু শটও রুখতে সমস্যা হয়নি ব্রাজিল গোলরক্ষক অ্যালিসনের। এর ফলে গোলহীন ড্রতেই শেষ হয় ম্যাচ। 

এই ড্রয়ের ফলে সব মিলিয়ে ২৭ ম্যাচ ধরে অপরাজিত রইলো আর্জেন্টিনা। সবশেষ ২০১৯ সালের কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে এই ব্রাজিলের কাছেই হারে স্ক্যালোনির শিষ্যরা। এরপর থেকেই হারের বিস্বাদ নেয়নি আলবিসেলেস্তেরা। ওদিকে ব্রাজিলও তাদের গোল না হজম করার পণ অক্ষত রাখল, ১৩ ম্যাচ খেলে ১০টিতেই ক্লিনশিট রেখেছে তিতের শিষ্যরা।

এই ড্রয়ের ফলে ১৩ ম্যাচ থেকে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দুইয়ে আছে আর্জেন্টিনা। নিজেদের পরবর্তী ম্যাচে আগামী ২৭ জানুয়ারি চিলির বিপক্ষে খেলবেন মেসিরা। আর ইতোমধ্যেই বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে ফেলা ব্রাজিল সেদিন খেলবে ইকুয়েডরের বিপক্ষে।

এনইউ