লিওনেল মেসি/ফাইল ছবি

লিওনেল মেসির সঙ্গে বার্সেলোনার চুক্তির অঙ্কটা ফাঁস হয়েছে দিনদুয়েক আগে। যেখানে দেখা যায় বর্তমান চুক্তির অধীনে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি আয় করেন প্রায় চার হাজার কোটি টাকা! তবে এরপরও বার্সেলোনা শেষ চার বছরে এক মেসি থেকেই লাভ করেছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা, যা এ সময়ে বার্সেলোনার আয়ের প্রায় এক তৃতীয়াংশ। জানিয়েছে স্প্যানিশ সংবাদ মাধ্যম স্পোর্ত, সাবেক সভাপতি হুয়ান লাপোর্তাও জানালেন তেমন কিছুই।

গত রোববার স্প্যানিশ সংবাদ মাধ্যম এল মুন্দোর এক প্রতিবেদনে উঠে আসে, শেষ চার বছরে মেসি বার্সার কাছ থেকে বেতন, পারফর্ম্যান্স বোনাস, লয়ালটি বোনাস, সাইন ইন বোনাস মিলিয়ে পেয়েছেন প্রায় ৫৫ কোটি ডলার, যা টাকার অঙ্কে চার হাজার কোটি টাকার সমান।
তবে সম্প্রতি স্প্যানিশ প্রতিষ্ঠান ডায়াগনাল ইনভেস্টমেন্টের প্রধান কার্যনির্বাহী ও বার্সেলোনার সদস্য মার্ক কিরিয়া স্থানীয় অর্থনীতিবিদ হোসেব ফাব্রা ও ইভান কাবেজাকে সঙ্গে নিয়ে ক্লাবের লাভের অঙ্কটা বের করেছেন। এতে বেরিয়ে এসেছে মেসি বড় অঙ্কের বেতন ভোগ করলেও ক্লাবের লাভের পরিমাণটা তার চেয়ে ঢের বেশি! 

তাদের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, ২০১৭ থেকে চলতি মৌসুমের আগ পর্যন্ত মেসি বার্সার কাছ থেকে নিয়েছেন ৩৮ কোটি ইউরোর কিছু বেশি অর্থ, তবে এ সময়ে এক মেসির কারণেই বার্সা আয় করেছে প্রায় ৬২ কোটি ইউরো, চুক্তিতে কাতালানদের গড়পড়তা লাভ সাড়ে ২৩ কোটি ইউরো। গবেষক দলটি আরও জানান, অঙ্কটা এ সময়ে কাতালানদের মোট আয়ের ৩০ শতাংশ।

কিরিয়া বলেন, ‘এখানে অনেক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, আর ক্লাবের পক্ষ থেকে বেশ কিছু তথ্যের অভাবও ছিল আমাদের। তবে একটা ব্যাপার পরিষ্কার যে, প্রতিযোগিতার বাজারে ক্লাবটার সবকিছুর কেন্দ্রে আছে মেসি। আর সে কী করে এই ব্যবসার সুযোগটা করে দেয়? গোল করার মাধ্যমে।’
তবে মেসির মাধ্যমে বার্সা আয়টা করে কী করে? কিরিয়া জানালেন সেটাও। 

পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে ক্লাবের চুক্তির দুটো দিক আছে, একটায় তাকে নিয়ে ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি, আরেকটায় তাকে ছাড়া; এটা ‘মেসি ক্লজ’ যা পৃষ্ঠপোষকদের অর্থের প্রায় ৫০ শতাংশ বহন করে। তার ওপর ম্যাচ টিকিট বিক্রি, ক্লাবে ভিআইপি সফর আর জার্সি বিক্রি (ক্লাবের বিক্রিত জার্সির ৮০ শতাংশ মেসির নামাঙ্কিত) তো আছেই।

মার্ক কিরিয়া, প্রধান কার্যনির্বাহী, ডায়াগনাল ইনভেস্টমেন্ট ও সদস্য, এফসি বার্সেলোনা

এ গবেষণার পর আরও একটা প্রশ্ন উঠে আসে, বার্সা কি মেসিকে ছাড়া এত অর্থ তুলে আনতে পারতো? কিরিয়ার ভাষ্য, ‘২০০৮-০৯ সালে মেসি যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তার চেয়েও এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তখন আমাদের একটা প্রতিযোগিতামূলক দল ছিল। আমি নিশ্চিত যে তখন বার্সার আয়ে তার প্রভাবটা কম ছিল। সে কেবল দলগতভাবেই দলকে ভালো করে না, ক্লাবের অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।’
এমন গুরুত্বপূর্ণ একজনকে হারানো মানে অর্থনৈতিক দিক থেকেও ক্ষতির মুখে পড়ার সমূহ আশংকা সৃষ্টি। ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও আসছে নির্বাচনে সভাপতি পদপ্রার্থী হুয়ান লাপোর্তাও তাই জানালেন, তাকে দলে রাখতে প্রাণপণ চেষ্টাটাই করবেন তিনি।

মেসি ক্লাবের এক তৃতীয়াংশ আয়ের কারণ। আমি মেসিকে বার্সায় রাখতে সবকিছুই করবো। আমার কাছে ইঙ্গিত আছে যে সে বার্সেলোনায় সুখী আছে, আর সে এখানে থাকতে চায়। কিন্তু তাকে একটা ক্রীড়া প্রকল্প দিয়ে বিশ্বাস করাতে হবে যে বার্সেলোনা এখনো লড়াকু অবস্থানেই আছে।

হুয়ান লাপোর্তা, সভাপতি পদপ্রার্থী, এফসি বার্সেলোনা

লাপোর্তা জানালেন, ব্যক্তিগতভাবে ক্ষুদেবার্তাও দিয়েছেন মেসিকে, ‘গতকাল আমি তাকে সমর্থন দিয়ে একটি ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েছি। আমি তাকে বলেছি, সে যেন এসব খবরে কান না দেয়। কারণ বার্সেলোনা সমর্থকরা তাকে আরও অনেক বছর ক্লাবেই দেখতে চায়।’

এনইউ/এটি