ঘরোয়া ফুটবলে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় রেফারিং। রেফারিদের সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে বিস্তর। বিদেশি রেফারির ব্যবহার নিয়েও হচ্ছে ব্যাপক পর্যালোচনা। কিন্তু যারা এখন রেফারিং করছেন তাদের কম সম্মানী ও বকেয়ার বিষয় থেকে গেছে আলোচনার বাইরে। 

৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। এই লিগ শুরুর দোরগোড়ায় থাকলেও গত আসরের লিগের দ্বিতীয় লেগের সম্মানী এখনো পাননি রেফারিরা। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের এক পর্বের অর্থ পেলেও এখনো রেফারিদের চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের কিছুই দেওয়া হয়নি। এর পাশাপাশি সদ্য সমাপ্ত ফেডারেশন কাপ, স্বাধীনতা কাপের সম্মানীও বকেয়া। 

একাধিক রেফারি জানিয়েছেন, গত লিগের আংশিক, চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ ও এই মৌসুমের দুই টুর্নামেন্ট মিলিয়ে ৪০ লাখ টাকার উপর বকেয়া রয়েছে তাদের। বঙ্গবন্ধু জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ চলছে। এই চ্যাম্পিয়নশিপের রেফারিজ বিলও চল্লিশ লাখ টাকার উপর। আরো কিছু টুর্নামেন্ট মিলিয়ে রেফারিদের বাফুফের কাছে পাওনার অঙ্ক প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি। 

রেফারিদের এই বকেয়ার কিছু অংশ লিগ শুরুর আগে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানান রেফারিজ কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম নেছার, ‘কিছু দিন আগে রেফারিজ কমিটির সভা হয়েছিল। সেই সভায় রেফারিদের বকেয়া সম্মানীর বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। লিগ শুরুর আগে রেফারিদের কিছু অর্থ দেওয়ার ব্যাপারে হিসাব বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে।’ 

প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ ও দুই টুর্নামেন্টের বিল হিসাব বিভাগে ইতোমধ্যে জমা দিয়েছে রেফারিজ বিভাগ। বঙ্গবন্ধু জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপের বিল অবশ্য এখনো জমা দেয়নি। 

রেফারি ফুটবলের অন্যতম প্রধান অংশ। সেই রেফারিদের সম্মানী এমনিতেই কম। সেখানে তাদের সেই অর্থ বকেয়া থাকলে সেটা ম্যাচে পারফরম্যন্সে প্রভাব পড়াটা অস্বাভাবিক নয়। কোড অফ কন্ডাক্টের কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রেফারি বলেন, ‘রেফারিদের বকেয়ার বিষয় ফেডারেশন বরাবরই উদাসীন। প্রায়ই আমাদের বকেয়া থাকে, তবে করোনার সময় অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে খেলা পরিচালনা করার বকেয়া থাকাটা দুঃখজনক।’

বর্তমানে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের অনেক ফুটবলার অর্ধ কোটি টাকার উপর পারিশ্রমিক পান। স্পন্সরশিপও বাড়ে অনেক সময়। সেই অনুপাতে রেফারিদের সম্মানী বাড়ে না। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে একজন রেফারি ও সহকারি রেফারির সম্মানী যথাক্রমে ২৪০০ ও ২২০০ টাকা। এর সঙ্গে যোগ হয় যাতায়াত ও আনুষাঙ্গিক ভাতা। কম সম্মানী নিয়েও অসন্তুষ্টি রয়েছে রেফারিদের। 

প্রিমিয়ার লিগে রেফারিং করে অর্থ পেতে বিলম্ব হলেও কয়েকজন রেফারির কিছুটা আয়ের উৎস ছিল ক্লাবগুলোর প্রীতি ম্যাচ পরিচালনা। সেখানে ম্যাচের পরপরই নগদ অর্থ পেতেন রেফারিরা। সরাসরি ক্লাব-রেফারি লেনদেন হয়ে আসছিল এতদিন। এতে ক্লাবগুলোর প্রতি রেফারিদের কিছুটা দুর্বল হওয়ার সুযোগ থাকে এজন্য ফেডারেশন ক্লাবগুলোর কাছে নোটিশ দিয়েছে প্রীতি ম্যাচে রেফারির প্রয়োজন হলে রেফারিজ বিভাগকে জানাতে এবং রেফারিরদের নির্দিষ্ট সম্মানী ফেডারেশনে জমা দিতে।

ক্লাবগুলোর চিঠির প্রেক্ষিতে রেফারিজ বিভাগ প্রীতি ম্যাচের জন্য রেফারি নির্বাচন করে এবং তারাই সম্মানী প্রদান করে। সম্প্রতি বসুন্ধরা কিংস ও রহমতগঞ্জের মধ্যে একটি প্রীতি ম্যাচ হয়েছে। সেই ম্যাচে যারা রেফারিং করেছেন, তারা সরাসরি গিয়েছেন রেফারিজ বিভাগের মাধ্যমে না গিয়ে। এজন্য সংশ্লিষ্ট রেফারি শোকজ পেয়েছেন। জানা গেছে ম্যাচের আয়োজক ক্লাবকেও সতর্ক বার্তা দিয়েছে ফেডারেশন। 

এজেড/